শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, আগামীকাল সোমবার থেকে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামা প্রতিহত করতে হবে। যারা করতে পারবেন না, তাদের জবাবদিহি করতে হবে। যার যার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের স্নেহ দিয়ে রাজপথ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
রোববার (৫ আগস্ট) রাজধানীর কাকরাইলের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সকল সরকারি বেসরকারি কলেজ অধ্যক্ষদের সাথে বৈঠককালে তিনি এ কথা বলেন। কলেজ অধ্যক্ষদের সাথে মন্ত্রীর এ জরুরি বৈঠকটি ৩টা ১০ মিনিটে শুরু হয়ে ৪টা ৫৫ মিনিটে শেষ হয়। এ বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন,মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর মো: মাহাবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দুই দফা বৈঠকে রাজধানীর ২৪২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬১৪ জন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক অংশ নেন। এর মধ্যে কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ছিলেন ১৫০ জন, স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ১০৮ জন এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন ৩৫৬ জন
অধ্যক্ষদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথভাবে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে। কোন প্রকার অজুহাত দেখানোর সুযোগ নেই। আপনারা শিক্ষার্থীদের বোঝান যে, তারা হিরো হয়েছে। তারা আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এইবার ক্লাসে ফিরতে হবে।
অধ্যক্ষদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী অরো বলেন, সন্তানদের ক্ষতির বিষয়াট অভিভাবকদের ডেকে বোঝাতে হবে। এ ব্যাপারে সবধরণের সহায়তা দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দু’জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে মর্মান্তিক উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দূঃখ, কষ্ট-বেদনা ও সেন্টিমেন্ট আমি ধারণ করি। তাদের অনুভূতিটা আমি স্বীকার করি। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সকল দাবী মেনে নিয়েছেন। এগুলো এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নতুন প্রজন্মকে আধুনিক যুগের উপযোগী দক্ষতা দিতে চাই। তোমরা ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে রাজপথ ছেড়ে পড়াশুনায় মনোযোগ দাও। ভবিষ্যতে তোমাদেরকে আরো বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। সমগ্র শিক্ষা পরিবারের পক্ষ হতে তিনি শিক্ষার্থীদের আগামীকাল থেকে ক্লাসে যোগ দেয়া আহবান জানান।
শিক্ষামন্ত্রী কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষদের উদ্দেশে বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ছাত্র-অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করতে হবে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করে তাদেরকে শ্রেণিকক্ষে নিয়ে আসতে হবে। তাঁরা যেহেতু প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব প্রদান করছেন, এটা তাদের দায়িত্ব।
এ সময় কলেজ অধ্যক্ষ উদ্দেশ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সোহরাব হোসেন বলেন, ছাত্ররা যেন কোন অবস্থাতেই রাস্তায় নামতে না পারে সে জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ভূমিকা রাখতে হবে। আগামীকাল থেকে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই কোন শিক্ষার্থী যেন রাজপথে না নামে।
শিক্ষাসচিব বলেন, একটি মহল গুজব ছড়াচ্ছে। আন্দোলনের ভুয়া ভিডিও ভাইরাল করছে। এগুলো থেকে সবাইকে সাবধান ও সচেতন থাকতে হবে।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হয়। এরপর ৯ দফা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে।
ছাত্র বিক্ষোভের জেরে গত বৃহস্পতিবার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু দেখা যায়, ওই দিনই শিক্ষার্থীরা রাজপথে বেশি সরব ছিল।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে টানা এক সপ্তাহ ধরে চলা ছাত্র বিক্ষোভ বন্ধে এখন পর্যন্ত সমাধান খুঁজে পায়নি সরকার। একের পর এক উদ্যোগ ও আহ্বানে সুফল মিলছে না। শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা, তাদের ফিরিয়ে নিতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি সরকারের আহ্বান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার উদ্যোগ—কোনো কিছুতেই আন্দোলন থামছে না।
সরকারের তরফ থেকে দাবি মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীরা তা মানতে নারাজ। তারা বলছে, বাস্তবায়ন হবে—এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না।
সূত্র: দৈনিক শিক্ষা
শে/টা/বা/জ