লোক সংস্কৃতিতে শেরপুরের নকলার গর্ব মো. বজলুর রশিদ। তিনি একাধারে কণ্ঠ শিল্পী, নাট্যকার, অভিনেতা ও উচ্চাঙ্গ সংগীত প্রশিক্ষক। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত সংঙ্গীত শিল্পী বজলুর রশিদ। বর্তমানে তিনি নকলা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত প্রশিক্ষক হিসেবেও কর্মরত আছেন।
বজলুর রশিদ ১৯৭৪ সালে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার মজিবুর রহমান চিশতী (আঙ্গারা শাহ্) ও মোছা. হামিদা বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত একজন নামকরা গীতিকার ও কণ্ঠ শিল্পী। তিনি ১৯৯১ সালে শ্যামগঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করেন। পারিবারিক ভাবেই তার বাবার পথ অনুসরন করতে গিয়ে তিনি সংস্কৃতিতে ঝুঁকে পড়েন। এর ফলশ্রুতিতে তিনি আজ অল্প বয়সে সংস্কৃতিতে ঝুঁকে পড়ায় তিনি লেখা পড়ায় বেশি দূর এগুতে পারেননি।
অপরিকল্পিত ভাবে হঠাৎ করেই তিনি শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যান। বিবাহের পর থেকেই নকলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ উপজেলা শিল্পকলায় যোগদান করায় নকলা বাসী আজ তাকে নকলার বজলুর রশিদ নামেই চিনেন-জানেন। তিনি প্রায় একযুগ ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংগীত প্রশিক্ষণ করিয়ে গড়ে তুলেছেন শত শত সংঙ্গীত শিল্পী, অভিনেতা ও তার অনুসারী। বর্তমানে তিনি নেত্রকোণা, জামালপুর, ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঙ্গীত প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাছাড়া তিনি বর্তমানে দন্ত চিকিৎসায় পারদর্শীতা অর্জনের লক্ষ্যে নিয়মিত জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি তার স্ত্রীর বড় ভাই নূর মোহাম্মদ হাসানের কাছে হাতে কলমে দন্ত চিকিৎসা শিখছেন।
বজলুর রশিদ জানান, ইতোমধ্যে তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দুই সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী সাংস্কৃতিতে বিশেষ পারদর্শীতা অর্জন করছেন। তানজিনা খানম কলি, শিউলি আক্তার, আকাশ, সুলাইমান বাপ্পীর মত অসংখ্য কণ্ঠ শিল্পী নিজ হাতে তৈরী করেছেন। আজ তারা বিভিন্ন টেলিভিশন ও বেতারে নিয়মিত কণ্ঠ শিল্পী হিসেবে একের পর এক সুনাম অর্জন করে আসছে।
লোকসংস্কৃতিতে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অতিসম্প্রতি বজলুর রশিদকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা ২০১৫ প্রদান করে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মনোনয়ন প্রাপ্ত শিল্পী হিসেবে তাকে লোক সংগীতে এ সম্মাননা পদক এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও শেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেনের স্বাক্ষরিত সনদ প্রদান করা হয়।
সম্মাননা প্রাপ্তির বিষয়ে তিনি জানান, এটা তাঁর একার প্রাপ্তি নহে, এই সম্মান নকলা বাসীর; যাদের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এতদূর এগিয়ে যেতে পেরেছি। তাই তাঁর এ প্রাপ্তিটি সব সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন।
উল্লেখ্য যে, ওই বিতরণী অনুষ্ঠানে ২০১৪ সালে কন্ঠ সঙ্গীতে সারওয়ার জাহান তপন, লোক সংস্কৃতিতে বাউল তারা মিয়া, নাট্যকলাতে শিব শংকর কারুয়া, যন্ত্র সঙ্গীতে উদয় শংকর সাহা। ২০১৫ সালে কন্ঠ সঙ্গীতে নির্মল কুমার দে, লোক সংস্কৃতিতে মো. বজলুর রশিদ, নাট্যকলাতে এস.এম আবু হান্নান, যন্ত্র সঙ্গীতে মো. মজিবর রহমান। ২০১৬ সালে কন্ঠ সঙ্গীতে দেবাশীষ কুমার দাস, লোক সংস্কৃতিতে মো. ছিদ্দিকুর রহমান, নাট্যকলাতে মো. ফজলুল রহমান, যন্ত্র সঙ্গীতে মো. আব্দুল কাদের, আবৃত্তিতে এস.এম রফিকুল ইসলাম। ২০১৭ সালে কন্ঠ সঙ্গীতে সুতপা দত্ত, লোক সংস্কৃতিতে মো. পাঞ্জুবালি, নাট্যকলাতে মো. আব্দুল কাদির, যন্ত্র সঙ্গীতে মো. আলিমুল ইসলাম ও চারুকলাতে মো. হাবিবুর রহমানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও শেরপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ওই বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক, সম্মানিত অতিথি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব বেগম হাসনা জাহান খানম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম ও স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক এ.টি.এম জিয়াউল ইসলাম প্রমূখসহ অনেক সাাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।