শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা বাঘবেড় উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে এক মাদক ব্যবসায়ীকে সভাপতি করার প্রতিবাদে (সোমবার ২ জুলাই) দুইদিন ধরে চলমান অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করেছে উপজেলার বাঘবেড় উচ্চবিদ্যালয়ের ৪ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী। ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে সভাপতিকে না সরানো পর্যন্ত বিদ্যালয়ে না যাওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। এদিকে স্কুলে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্কুলমাঠে আইনশৃংখলা রক্ষাকারীবাহিনি পুলিশ কে দুই দিনযাবৎ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, বাঘবেড় উচ্চবিদ্যালয় ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন। গত ৭ জুন বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ওই দিন ১০ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এতে বাঘবেড় ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবুল হাশেমকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এখবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সচেন অভিবাবকরা বিদ্যালয় থেকে তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে বিদ্যালয়ে যেতে মানা করে। এলাকায় আবুল হাশেম মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। এ নিয়ে অভিবাবকরা প্রথমে গত সোমবার বিদ্যালয় মাঠে সভা করেন। পরে গত মঙ্গলবার তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার( ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।গত শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন ব্যবস্থাপনার কমিটির সভাপতি আবুল হাশেম ও প্রধান শিক্ষক সুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ স্থানীয় বাঘনেড় বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন। গত শনিবার সকালে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বাঘবেড় বাজারে মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ করে। গতকাল রোববার বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়। এতে প্রথম দিন ছিলো অংক পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করেন। গতকাল রোববার ইউএনও বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদেও সাথে কথা বলেন। তিনি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের সোমবার থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেন। কিন্ত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে না সরানো পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কোন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবে না অভিভাবকরা জানান।
নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে,যাকে বিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয়েছে তিনি এলাকায় চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ি। তাকে সভাপতি পদ থেকে না সরানো পর্যন্ত আমরা স্কুলে যামু না। এর প্রতিবাদে আমরা সবাই পরীক্ষা বর্জন করেছি।
অভিভাবক আবদুস সালাম বলেন, যতক্ষন পর্যন্ত এই মাদক ব্যবসায়ীকে বিদ্যালয় থেকে না সরানো হবে,ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ছেলে মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে যাবে না। এই মাদক ব্যবসায়ীকে সরাতে প্রয়োজনে আগামী দিনে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
অভিভাবক ও ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আশরাফ আলী বলেন,আমরা এই মাদক ব্যবসায়ীকে সভাপতি চাইনা। তাকে না সরানো পর্যন্ত আমাদেও আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে সকল অভিভাবক,এলাকাবাসি ও ছাত্র ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে। তবুও এই মাদক ব্যবসায়ীকে মেনে নেওয়া হবে না।
প্রধান শিক্ষক মো.সুরুজ্জামান বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে কেন্দ্র কওে অভিভাবকদেও ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন চলছে। তার প্রেক্ষিতে দুইদিন যাবৎ চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা বিধ্যালয়ের ৪ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা অংশ গ্রহন থেকে বিরত রয়েছে।গতকাল রোববার প্রথম দিনে অংক পরীক্ষায় ৫০ জনের মত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো। পরে ইউএনও স্যারের নির্দেশে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আজ (সোমবার) কোন ছাত্র ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসেনি। তাই দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির বলেন, নবগঠিত কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে,তদন্ত শেষে আইনানুক প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে। অভিভাবকরা যেন আমাদেও ওপর ভরসা রেখে তাদের শিক্ষার্থীদেও পরীক্ষা অংশ গ্রহণ করার সুযোগ দেয়। বিষয়টি আমরা গুরুত্বে সাথে তদন্ত করছি।