তালাত মাহমুদ :
যে কোনো উন্নয়নশীল দেশের মতোই বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর কারণ ও পরিসংখ্যাণ সঠিকভাবে জানা যায় না। সাধারণত হাসপাতালে রেজিস্ট্রিভুক্ত যেসব মৃত্যু ঘটে কেবল সেগুলো হিসেব করেই শিশু মৃত্যুর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু যখন পানিতে ডুবে, সড়ক দুর্ঘটনায়, প্রাণীর কামড়ে, পড়ে গিয়ে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে, শ্বাসরোধে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, পড়ন্ত বস্তুর আঘাতে, যন্ত্রপাতির আঘাতে, বিষপানে, সহিংসতায়, আত্মহত্যা বা অন্য কোন দুর্ঘটনার সাথে সাথে শিশুটির মৃত্যু হলে সেক্ষেত্রে মৃত শিশুটিকে হাসপাতালে নেয়ার কোনো অবকাশ থাকে না। যার ফলে, শিশুটির মৃত্যু কোন গণনাতে আসে না। তাই শিশু মৃত্যুর সংখ্যা সব সময় সঠিক হয় না।
‘বাংলাদেশে এখন আর ডায়রিয়া নয়, পানিতে ডুবে যাওয়াই শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ। সফল ডায়রিয়া প্রতিরোধ কর্মসূচীর জন্য নিশ্চয়ই বাংলাদেশ প্রশংসার দাবিদার।’ বলেছেন টাস্ক-এর প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত পিট পিটারসন। তিনি আশাবাদী, ‘এ দেশ একদিন পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ করে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।’ উলে¬খ্য, ৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়েসী শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যুর প্রতিষেধক রয়েছে। আর তা হচ্ছে-সাঁতার জানা। যা সত্যি কার্যকরী। বাংলাদেশে সাঁতার জানা শিশুরা সাধারণত পানিতে ডুবে মারা যায় না। তবে যেসব শিশু ইনজুরির কারণে প্রাণ হারায়, তার অর্ধেকই ঘটে পানিতে ডুবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডাঃ আব্দুর রহমান খান বলেছেন, ‘গত তিন দশকের পরিচালিত শিশু স্বাস্থ্য কার্যক্রমের সফলতায় শিশু মৃত্যুর হার উলে¬খযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় শিশু মৃত্যুর কারণসমূহের এক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশু ইনজুরির কারণে মারা যায়। এদের প্রায় অর্ধেক ৫ বছরের কম বয়েসী।’
বিশ্বখ্যাত গবেষণা এলাকা বাংলাদেশের মতলবে ‘আইসিসিডিআরবি’র কর্মরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে শিশুদের অসুস্থতা, মৃত শিশুর সংখ্যা এবং মৃত্যুর কারণ লিপিবদ্ধ করে থাকেন। ইনজুরিতে মৃত্যুর সঠিক এবং সামগ্রীক তথ্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ইউনিসফে এবং দি এলায়েন্স ফর সেফ চিলড্রেন-এর সহায়তায় ‘শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট’ সারাদেশে একটি জরিপ চালায়।
২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এই জরিপে বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের ৮৮ হাজার ৩৮০টি পরিবার ও জেলা শহরগুলোর ৪৫ হাজার ১৮৩টি পরিবার এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৩৭ হাজার ৮০৩টি পরিবার অর্থাৎ ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৬৬টি পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ জরিপটি সর্বমোট ৮ লাখ ১৯ হাজার ৪২৯ জন নানা বয়েসীর নর-নারীর উপর পরিচালিত হয়। এদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ জন ছিলো অনুর্ধ্ব ১৮ বছরের শিশু।
অনুর্ধ্ব ৫ বছরের শিশুদের নাগালের কাছে ধারালো বস্তু, বিস্ফোরক দ্রব্য, কীটনাশক বা বিষ, জ্বলন্ত আগুন, কাঁচের পাত্র, ভারী সরঞ্জাম এবং বৈদ্যুতিক সুইচ বা তার রাখা নিষেধ। পুকুর ঘাটে, খোলা বারান্দায়, সিঁড়ির ধারে, উচুঁ স্থানে, ব্যস্ত রাস্তার পাশে, যানবাহন বা উনুনের কাছে শিশুদের একাকাী রেখে মা-বাবা অথবা অভিভাবককে কোথাও যাওয়া উচিত নয়।
পাতা- ০২
শিশুদের বয়েস বাড়ার সাথে সাথে ইনজুরির আশঙ্কাও বাড়তে থাকে। ইনজুরি জনিত কারণে এক বছরের কম বয়েসী শিশুর মৃত্যুহার শতকরা ২ ভাগ। ১-৪ বছর, ৫-৯ বছর, ১০-১৪ বছর এবং ১৫-১৮ বছর বয়েসী শিশুদের ক্ষেত্রে যথাক্রমে শতকরা ২৯ ভাগ, ৪৮ ভাগ, ৫২ ভাগ এবং ৬৪ ভাগ শিশুর ইনজুরি জনিত কারণে মৃত্যু ঘটে।
এছাড়া বছরে প্রায় ১০ লাখ শিশু মাঝারি থেকে মারাত্মক ধরনের ইনজুরি জনিত অসুস্থতায় ভোগে। প্রতিদিন ২ হাজার ৬০০ শিশু, ঘন্টায় ১০৮ জন বা মিনিটে ২ জন শিশু এমন ইনজুরির শিকার হয়। যার ফলে, তাদের কমপক্ষে তিনদিন স্কুল কামাই হয় অথবা ডাক্তারের শরণাপন্ন বা হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ শিশুদের মধ্যে প্রতিদিন ৩৬ জন শিশু ইনজুরির কারণে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই অসুস্থ শিশুদের জন্য সংশি¬ষ্ট পরিবার তথা সরকারের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করতে হয়-যা স্বাস্থ্যখাতের সামগ্রীক বাজেটের উপর প্রভাব ফেলে।
‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ (হু) কর্তৃক ইনজুরির সংজ্ঞায়-পানিতে ডোবা, সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণীর কামড়, পড়ে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া,
শ্বাসরোধ, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, পড়ন্ত বস্তুর আঘাত, যন্ত্রপাতির আঘাত, বিষপান, বজ্রপাত, সহিংসতা ও আত্মহত্যা ইত্যাদি অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। ‘ইনজুরি’ শব্দটির আভিধানিক বাংলা অনুবাদ যেমন-ক্ষত, যখম বা আঘাতকে বুঝায়। কিন্তু তাতে সংজ্ঞায় বর্ণিত সব ক’টি ইনজুরির প্রকৃত অর্থ বহন করে না। তাই প্রতিবেদনে ইংরেজী শব্দ ‘ইনজুরি’ ব্যবহৃত হয়েছে। ১-১৮ বছর বয়েসী শিশুরাই এই ইনজুরির শিকার হয়ে থাকে। ১৫-১৮ বছর বয়েসী শিশুরা আবেগ-প্রবণ ও কল্পনা-বিলাসী হয়ে থাকে। অভিমান বা প্রচন্ড মানসিক আঘাতে এদের মাঝে আত্মহননের প্রবণতা দেখা দেয়।
মহাকবি ওয়ার্ডস ওয়ার্থ শিশুদের সম্পর্কে বলেছেন, চুমসু রহ ংরুব মধরহঃ রহ ঃযড়ঁমযঃ ‘আকৃতিতে ক্ষুদে কিন্তু চিন্তায় দৈত্য’। প্রতিটি শিশুর মস্তিস্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি কোষ আছে। এই অসংখ্য কোষ নিজেদের মধ্যে নানান ঢঙে প্রতিস্থাপিত হয়ে লক্ষ লক্ষ (ট্রিলিয়ন) বেশি অবস্থায় গ্রহণ করতে পারে। মানব শিশুর মস্তিস্কে এই কোষগুলো শিশুর ৩ বছর বয়সেই সক্রিয় হয়।
শিশুদের বাচাঁতে হলে পারিবারিকভাবে শিশু নির্যাতন রোধ করতে হবে। ৩ বছর বয়েস পর্যন্ত শিশুদের মানসিক ও মেধা বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ সময়। সকল ক্ষেত্রে শিশুকে ইতিবাচক সাড়া দিতে হবে। শিশু শিক্ষার মান-উন্নয়নে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষকেও সংবেদনশীল ও আন্তরিক হতে হবে। শিশুর অপুষ্টি রোধ করতে হবে। শিশুর অধিক দুরন্তপনা ও বিপথগামীতা রোধ করতে হবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবারে অশিক্ষা, অজ্ঞতা, কু-সংস্কার, প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা এবং ধর্মান্ধতা সাদৃশ্য বর্তমান। ইনজুরির শিকার শিশুদের প্রতি পরিবারের অভিভাবকদের তাৎক্ষণিক কী কী দায়িত্ব ও করণীয় রয়েছে-তা তারা জানে না। ইনজুরিতে আক্রান্ত শিশুকে ক্লিনিকে বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরী। কিন্তু আমরা তা না করে শাস্ত্রীয় কবিরাজ বা ঝাড়-ফুঁকের প্রতি অধিক আগ্রহী হয়ে উঠি।
শিশু ইনজুরি প্রতিরোধে মা-বাবা ও শিশুর লালন-পালনকারীকে অধিক সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের এতদসংক্রান্ত কর্মশালার আয়োজন করা প্রয়োজন। জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রার পঞ্চম লক্ষ্য হচ্ছে, ২০১৫ সালের মধ্যে অনুর্ধ্ব ৫ বছরের শিশু মৃত্যু হার ১৯৯০ সালের শিশু মৃত্যু হারের দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় প্রতি হাজার জন্ম গ্রহণকারী জীবিত শিশুর মধ্যে ৩১ জন।
এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে, অনুর্ধ্ব ৫ বছর বয়েসী শিশুদের ইনজুরিজনিত মৃত্যু অবশ্যই রোধ করতে হবে। আর তাই শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচীতে ইনজুরি প্রতিরোধ কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। আর তা করা হলে, নবজাতকের ধনুষ্টংকার যেমন প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে তেমনি শ্বাসরোধে মৃত্যুও প্রতিরোধ করা সম্ভব। ১ বছরের কম বয়েসী শিশু যেমন হাম থেকে রক্ষা পেয়েছে তেমনি রক্ষা পাবে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হাত থেকে। জীবনের শুরুতে যে শিশু মায়ের দুধ পান করে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে বেড়ে উঠেছে পরবর্তীতে সেই শিশু স্কুলে যাওয়ার পথে গাড়ি চাপা পড়ে জীবন হারাবে
পাতা- ০৩
না। কাজেই ২০১৫ সালে সংক্রামক বা অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেলেও ইনজুরিজনিত মৃত্যু না কমলে সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।
শিশুদের জন্ম নিবন্ধীকরণের জন্য ২০০৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে আইন পাশ হয়েছে। জন্ম নিবন্ধীকরণ বাল্য বিবাহ রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধীকরণের চিত্র অত্যন্ত করুণ। জন্ম নিবন্ধীকরণের সর্বোচ্চ হার সিলেটে ২২% এবং শেরপুরে মাত্র ৩%। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে শেরপুর শুধু শিক্ষার দিক থেকেই পিছিয়ে নেই, অন্যান্য ক্ষেত্রেও অনেক পিছিয়ে আছে। শেরপুরে শিশুরা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে। এ জেলায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। ধূমপায়ী শিশু বা মাদকাসক্ত শিশুর (১৫-১৮ বছর) সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।
জেলার সবগুলো লেদ ও ওয়েল্ডিং কারখানায় শিশু শ্রমিক রয়েছে। এছাড়া পরিবহন, ইটভাটা, চাতাল ও চালের কলে, বিস্কুট ফ্যাক্টরী এবং নির্মাণ সেক্টরে শিশু শ্রমিক রয়েছে। শিশু শ্রমিক রয়েছে বিড়ি ফ্যাক্টরী, নিম্নমানের চা-এর স্টল ও রেঁস্তোরায়। এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক শিশু ইনজুরির শিকার হয়ে নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এমন অবস্থা বিরাজ করছে সুনামগঞ্জ, ভোলা ও মৌলভীবাজারের মতো উত্তরবঙ্গসহ আরও অনেক জেলায়।
‘স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন কাযক্রমের অংশ হিসেবে ইনজুরি প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরু করার এখনই উপযুক্ত সময়। এ নতুন সহস্রাব্দে ইনজুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়া শিশু স্বাস্থ্য কার্যক্রম সম্পূর্ণ হবে না। বাংলাদেশের শিশুদের জন্য এ বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা এখনই জরুরী বলে বাংলাদেশস্থ ইউনিসেফের তৎকালীন প্রতিনিধি মরটেন গিয়ারসিং অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
শিশুদের সুন্দর আগামীর জন্য সুস্থ্য ও সচেতন মা-বাবা চাই এবং অনাবিল আনন্দমূখর শৈশব চাই। নিরাপদ জীবন ব্যবস্থায় সমৃদ্ধ জাতি ও উন্নত দেশ গঠনে শিশুর জন্য ‘হ্যাঁ’ বলুন। শিশুর ভবিষ্যতের জন্য আপনার বর্তমানকে বিসর্জন দিন। শিশুদের বাঁচাতে হলে তাদের মা-বাবাকেও বাঁচাতে হবে। তাদেরকে দায়িত্ব সচেতন হতে হবে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সকল প্রকার নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। প্রতি বছর ৩৮ হাজার শিশু এতিম হয়। এর মধ্যে ৭ হাজার ৯০০ বাবা ও ৪ হাজার ৩০০ মায়ের মৃত্যু হয় ইনজুরিজনিত কারণে। প্রতি বছর ১২ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পঙ্গু হয়ে যায়। এদের মাঝে শিশুও রয়েছে। ইনজুরড হয় আরও বেশি।
প্রসঙ্গতঃ উলে¬খ্য যে, প্রতি বছর পানিতে ডুবে ১৭ হাজার শিশু মারা যায়। আক্রান্ত হয় ৬৮ হাজার শিশু। বছরে ৩ হাজার ৪০০ শিশু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। প্রতিদিন নিহত হয় ৯ জন শিশু। বছরে ১ লাখ ৭০ হাজার শিশু অগ্নিদগ্ধ হয়। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪০০ শিশু পঙ্গু হয়ে যায়। প্রতি বছর ২ হাজার ৬০০ শিশু কুকুর ও সাপের কামড়ে মারা যায়। উপর থেকে পড়ে বছরে ইনজুরির শিকার হয় ২ লাখ ৮১ হাজার ৫০ জন শিশু। পঙ্গু হয় ৩ হাজার ৬৫০ জন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রতি বছর আক্রান্ত হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৫০ জন শিশু। তন্মধ্যে পঙ্গু হয়ে যায় ১ হাজার ৮২৫ জন।
পড়ন্ত বস্তুর আঘাতে প্রতি বছর ইনজুরির শিকার হয় ৩১ হাজার ৩৯০ জন শিশু। পঙ্গু হয়ে যায় ৭৩০ জন। প্রতি বছর ৬ হাজার শিশু বিষপানের শিকার হয়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রতি বছর ৮শ’ শিশু মারা যায়। লেদ ও ওয়েল্ডিং কারখানায় বছরে ১৭ হাজার শিশু ইনজুরির শিকার হয়। রাতে মায়ের বুকে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধে মৃত্যু হয় ১২শ’ শিশুর। বছরে সহিংসতার শিকার হয়ে ৩৬৫ জন শিশুর মৃত্যু হয়। আক্রান্ত হয় ২৪ হাজার ৯০ জন এবং প্রতি বছর আত্মহত্যা করে ২ হাজার ১৯০ জন শিশু।
বাংলাদেশ একটি ঘণবসতিপূর্ণ দেশ। পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম এ দেশে এত লোকের বেঁচে থাকাতে বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান। চরম দারিদ্র্যতার কারণে জীবিকার অন্বেষণে এদেশের সিংহভাগ মানুষকে নৈমিত্তিক কর্মে ব্যাপৃত থাকতে হয়। একইভাবে মহিলারাও নানা নৈমিত্তিক পেশার সাথে
পাতা-০৪
যেমন নির্মাণ, বিড়ি, চাতাল ও চালের কল, বাসা-বাড়ির কাজ ইত্যাদি পেশায় সম্পৃক্ত থেকে তাদের শিশু সন্তানদের সময় দিতে পারে না। এছাড়া দেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী ও ইপিজেডে লাখ লাখ নারী শ্রমিক উদয়াস্ত কর্মব্যস্ত থাকায় বিশেষ করে মা শ্রমিকরা তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করতে পারে না। মা-বাবা কাছে না থাকায় এসব সন্তান ইনজুরির শিকার হয় বেশি। পক্ষান্তরে কর্মজীবী মহিলারা তাদের সন্তানের দায়িত্ব দিয়ে যায় কাজের বুয়া’র কাছে। যে কারণে এসব শিশু ইনজুরির শিকার হয় নিয়ন্ত্রণের অভাবে।
আমরা দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারি না; তবে সচেতন হলে দুর্ঘটনা এড়াতে পারি। দুর্ঘটনা বা ইনজুরিতে একজন অভিভাবকের মৃত্যু মানেই একটি পরিবারের মৃত্যু। নিরাপদ মাতৃত্বের পাশাপাশি নিরাপদ শৈশব এখন সময়ের দাবি। ১৯৮৯ সালে গৃহীত জাতি সংঘের ‘শিশু অধিকার সনদ’ এর আলোকে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে ‘শিশু নীতি’ ঘোষিত হয়েছে। এই নীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- ‘জন্মের পর স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শারীরিক নিরাপত্তার অধিকার নিয়ে শিশুর বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করা।
শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পারিবারিক পরিবেশের উন্নয়ন করা। প্রতিবন্ধী শিশু সহ অন্যান্য শিশুদের কষ্টকর অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তা করা। শিশুর আইনগত অধিকার নিশ্চিত করা’। এসব বিষয় মনে রেখেই আমাদের সন্তর্পণে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ, অভিভাবক হিসেবে আমরা সবাই জাতির কাছে দায়বদ্ধ। তথ্যসূত্র ঃ চাইল্ড ইনজুরি সার্ভে- ২০০৪।
তালাত মাহমুদ: সভাপতি, কবি সংঘ বাংলাদেশ ও লেকশি এবং কবি, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রধান সহকারী সম্পাদক।