প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে এবার বোরো চাষাবাদ করেছে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কৃষকেরা। শীত কমে যাওয়ায় ক’দিনের ব্যবধানে ক্ষেতের রোয়া গুলো দ্রুতই বেড়ে ওঠছে। সময় মতো সার বীজ আর সেচ সরবরাহে বদলে যাচ্ছে ক্ষেতের দৃশ্যপট। দিগন্ত মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। কৃষকদের মতে, এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বোরো চাষাবাদে বাম্পার ফলন হবে। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন কৃষক ও উপজেলা কৃষি অফিস। স¤প্রতি এ ব্যাপারে তথ্যানুসন্ধানে গেলে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ওঠে আসে এমন তথ্য।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে বোরো আবাদ ১৭ হাজার ৯শ ২ হেক্টর, সরিষার ৮শ ৫০ হেক্টর, গম ৫শ ১৫ হেক্টর ও শীতকালীন সবজি ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এছাড়াও রাজস্ব খাতের আওতায় রয়েছে ৮০টি প্রদর্শনী। ধান, পাট, গম বীজ উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী মাঠ রয়েছে ১শ ৫টি। বোরো বীজ উৎপাদন প্রকল্প ৩০টি। ঘঅঞচ প্রকল্পের আওতায় সরিষাসহ ৪৯ টি বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী রয়েছে। চলতি অর্থ বছরে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ (এনটিপি-২) এর ২২টি ব্যাচে চলমান সিআইজি প্রশিক্ষনসহ নানা বিষয় পরিদর্শন করেছেন কৃষি স¤প্রসারন অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আসাদুল্লাহ ও শেরপুর জেলা কৃষি স¤প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আশরাফ উদ্দিন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ নাজমূল হাছানের সার্বিক পরিচালনায় কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা নুসরাত জাহান ও সহকারি কৃষি স¤প্রসারন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তুফার সহযোগিতায় কৃষি উৎপাদনে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে।
শংকরঘোষ এলাকার কৃষক মো: ফজলি মিয়া, বাবর হোসেন, আক্তার আলীসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান, সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত বলে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করছেন তারা। তাদের মতে, আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারে বোরো ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন চাষাবাদে শ্রম, সময় আর ব্যয় কম হয়, উৎপাদন হয় বেশি, এ জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন তারা। এদিকে সারের চাহিদা মেটাতে কোচো দিয়ে ভার্মিং কম্পোষ্ট সার তৈরির প্রদর্শনীসহ নানা বিষয় পরামর্শ পাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারি আমজাদ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, কেচো দিয়ে সার তৈরিতে অল্প খরচ। লাভ বেশি। এ জন্য কৃষকরা প্রদর্শনীর মাধ্যমে এ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারছেন। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।
উপজেলা সহকারি কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তুফা জানান, দ্রুতই বদলে যাচ্ছে শ্রীবরদী উপজেলার কৃষির চিত্র। উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ আর সার্বিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এতে চাষাবাদে সনাতন পদ্ধতি থেকে সরে ঝোঁকে পড়ছে আধুনিক পদ্ধতিতে। ফলে সাশ্রয় হচ্ছে সময় আর শ্রম। ফলন হচ্ছে বেশি। তিনি বলেন, বর্তমানে আর্থিকভাবে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে শ্রীবরদীর কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, কৃষকেরা এবার বোরো ধানের বীজতলা করেছে আধুনিক পদ্ধতিতে। আলোর ফাঁদ দিয়ে সনাক্ত করছেন ক্ষেতের পোকা মাকর। ব্যবহার হচ্ছে শেড পদ্ধতি। কৃষি অফিসের অতন্ত্র জরিপ কার্যক্রমের অওতায় আনা হচ্ছে পিছিয়ে পড়া কৃষকদের। ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ডাম সিডারের ব্যবহার। গম ও আলুসহ অন্যান্য ক্ষেতে ইদুর দমনে নেয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক পর্যবেক্ষণ আর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাড়ছে উৎপাদনের মাত্রা। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে কৃষকেরা বোরো চাষাবাদে বাম্পার ফলন পাবে।
কৃষি উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নানা দিক তুলে ধরে কথা বলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাজমূল হাছান। তিনি বলেন, কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারছে। এর সুফল পেয়ে কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তির দিকে ঝোঁকে পড়ছেন। তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বোরো ও শীতকালীক সবজি চাষাবাদে গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি উৎপাদন হবে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারে আরো গতিশীল হয়ে ওঠবে কৃষকরা। এবার ফলনে ঘটবে কৃষির বিপ্লব। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা ও সচেতন মানুষরা।