জামালপুরে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ও একাত্তর টিভির সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবুকে হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাসের জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ চলমান থাকবে বলে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন এস এম আবুল হোসেন।
এর আগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ছয় মাসের জামিন দেন। পরদিন এই জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আর ২০ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ এম ইনায়েতুর রহিম ২০ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের করে। সেই আবেদনের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার স্থগিতাদেশ চলমান রেখে আদেশ দেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত বছরের ১৪ জুন নির্মমভাবে সাংবাদিক নাদিম খুন হয়েছে। দেশবাসী, বিশ্ববাসী দেখেছে। সিসি ফুটেজে এটা ধরা পড়েছে। হি (বাবু) ইজ দ্য পাইওনিয়ার। এই বাবু সাংবাদিক নাদিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটা মামলা করেছিল। যেদিন এই মামলা খারিজ হয়, ঠিক ওইদিন ওই ঘটনাটা ঘটে। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বাবু স্বীকারোক্তি করেছে। আরও দুজনসহ অভিযুক্ত মনির ও রেজাউল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এই দুজন বাবুর বিষয়ে কিছুটা ইনভলভমেন্ট করিয়েছে। সেটা হলো- ঘটনার আগে পরে তার (বাবু) সঙ্গে কথা হয়। বাবু নিজেও স্বীকারোক্তি করেছেন। পরবর্তীতে হাইকোর্টের একটি ভ্যাকেশন বেঞ্চ তাকে ছয় মাসের জন্য জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে স্থগিতাদেশ পাই ৮ সপ্তাহের জন্য। ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ পিটিশন ফাইল করে। আজকে এটার ওপর ফুল কোর্টে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আদেশে বলেছেন- যেহেতু চেম্বার স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন সেটা কন্টিনিউ করবে, আর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, নাদিমকে মারার ব্যাপারে বাবু একটি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সেখানে তিনি নিজে একটা কথা বলেছেন। ‘নাদিমকে মারার আগে আমি রেজাউলের সঙ্গে কথা বলেছি। ’ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে ১৪ জুন নাদিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি তার জীবনের নিরাপত্তাহীনতা ও তাকে হুমকি দেওয়ার কথাও জানান। নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন নাদিম। আর বাবু ‘ঘটনার অনেকদিন আগে আমি নাদিমকে এক মিনিটে দেখে নেওয়ার কথা বলি’ এটার স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন।
সাংবাদিক নাদিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিক নাদিমের অনার্স পড়ুয়া মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, সে সময় বাবা বুঝতে পেরেছিল নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি। তাই বাবা থানায় একটি অভিযোগও দিয়েছিল। কিন্তু বাবুর হাত অনেক লম্বা। তার আত্মীয়স্বজন পুলিশের বড় অফিসার ছিল, তাই তাদের নাম বিক্রি করে থানায় আধিপত্য বিস্তার করেছিল। এজন্য বাবার অভিযোগ বা ভিডিওটি কোনো আমলে নেয়নি কেউ। একপর্যায়ে বাবাকে তারা মেরেই ফেলল।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবাকে বাবু ও তার ছেলে অস্ত্রধারী ক্যাডার রিফাত তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে। আর এ ভিডিও ফুটেজ সারা পৃথিবীর মানুষ দেখেছে, তবুও কীভাবে আদালত আমার বাবার খুনি বাবুকে জামিন দেয়। আমরা মহামান্য আদালতের কাছে ন্যায় বিচারটুকু চাই আর যেসকল আসামি এখনও অধরা, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। তারা বাইরে থাকলে আমাদের জীবন অনিরাপদ থাকে।
নিহত সাংবাদিক নাদিমের বিচারের ব্যপারে সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাধুরপাড়ার ডনখ্যাত সেই বাবুকে বিচারের মুখোমুখি করতেই হবে। পাশাপাশি বাবু যাদের আশ্রয়প্রশ্রয়ে সাংবাদিক নাদিমকে হত্যা করেছে, সেই মাস্টারমাইন্ডদেরও আইনের মুখোমুখি করার দাবি জানাচ্ছি।
গত বছরের ১৪ জুন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার নিহত হন বাংলানিউজের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ১৬ জুন দুদফা জানাজার পর বকশিগঞ্জের গুমের চর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় সাংবাদিক নাদিমকে। এ ঘটনায় ১৭ জুন বকশিগঞ্জ থানায় মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০/২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন তার স্ত্রী মনিরা বেগম। বকশিগঞ্জ থানা পুলিশ থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পর এখন মামলাটির তদন্ত করছে সিআইডি।
সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু বকশীগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বরখাস্ত চেয়ারম্যান।