দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র একশো দিনে শেরপুরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম। তাঁর আন্তরিক, দক্ষ ও চৌকস নেতৃত্বে শেরপুর জেলা পুলিশে এসেছে আমূল পরিবর্তন। সেবাপ্রার্থীদের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যে প্রশংসনীয় ও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে জেলা পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে। ২৫ তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের চৌকস কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান শেরপুরে যোগদানের আগে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড পাবলিসিটি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গেলো বছরের ২১ সেপ্টেম্বর শেরপুরের পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন মো. কামরুজ্জামান। শেরপুরে যোগদানের একশো দিনে শেরপুরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে শেরপুরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ সাত কার্যক্রম ঘোষণা করেন তিনি। যোগদানের একদিন পরই গত ২২সেপ্টেম্বর শেরপুরে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় এই সাতটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। সেই ঘোষণার পর থেকেই শেরপুরবাসীর মনে প্রত্যাশা বাড়তে থাকে। জেলা পুলিশের কার্যক্রমেও প্রশংসনীয় পরিবর্তন শুরু হয়।
পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামানের একশো দিনের বিশেষ সাত কার্যক্রমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত উদ্যোগ “টক টু এসপি” হটলাইন সেবা। পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সমন্বয় করে হটলাইন সেবা এটি। ২৪ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন সেবা পেতে হটলাইনে কল দিলে জরুরী আইনী সেবার পাশাপাশি পুলিশ সুপারের সাথে সরাসরি কথা বলে সমস্যা সমাধানের সুযোগ পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে জেলার পাঁচটি থানাতেই ক্ষুদ্র বিষয়ের মামলার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, গতি ফিরেছে বিট পুলিশিং কার্যক্রমে।
টক টু এসপি সেবা চালুর ৪৮ঘন্টার মধ্যেই নিজ বাসা থেকে সাইকেল চুরি বিষয়ে হটলাইনে ফোন দিয়ে সহযোগিতা চাওয়ায় নতুন বাইসাইকেল উপহার পেয়েছে শেরপুর পৌর শহরের স্কুল ছাত্র জুনায়েদ সিদ্দিক হাসিব। গেলো তিন মাসে হটলাইনে কল দিয়ে বাল্য বিয়ে বন্ধ, জমি সংক্রান্ত বিরোধের সংঘর্ষ বন্ধের মতো ইতিবাচক সমাধান পেয়েছে শেরপুরবাসী। “টক টু এসপি” হটলাইন সেবার মাধ্যমে গত অক্টোবর মাসে ২৫টি ঘটনায় ভুক্তভোগীদের আইনি পরামর্শ ও পুলিশি সেবা দেওয়া হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে হটলাইনের মাধ্যমে ১২টি অভিযোগ গ্রহণের পর আটটিতে সমাধান ও চারটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা চলমান রয়েছে।
পুলিশ সুপারের সাতটি বিশেষ উদ্যোগের আরো একটি হচ্ছে মাদক নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির অংশ হিসেবে জেলা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালানোর পাশাপাশি মাদকবিরোধী প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বনের জন্য জেলার সীমান্তবর্তী থানাগুলোকে কঠোরভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। মাদকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সহযোগিতার জন্য বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), বিট অফিসার, কমিউনিটি পুলিশিং, উঠান বৈঠক, সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং মসজিদের ইমামদের নিয়ে মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি সব থানা এলাকার সামাজিক সংগঠন, সমিতি, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত মাদকবিরোধী প্রচারাভিযান শুরু করেছেন তিনি। যা শেরপুরের সকল স্তরে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টিকারী অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। জুয়া, পতিতাবৃত্তি, ইভটিজিং, যৌন হয়রানির মতো অপরাধের সঙ্গে শেরপুর জেলা পুলিশ সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে বিভাগীয় মামলাসহ কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তাঁর নির্দেশনায় প্রতিটি থানা এলাকার মসজিদে সভা, বিট পুলিশিং এবং কমিউনিটি পুলিশিং সভা, মেম্বার-চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভা এবং অপরাধ দমনে আবাসিক হোটেলে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে জেলা পুলিশ।
কোনো এলাকায় অপরাধ ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) মাধ্যমে স্পেশাল রেসপন্স টিম (এসআরটি) গঠন করেছেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত এই টিমের সদস্যরা ২৪ঘন্টা দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। এতে অপরাধী সনাক্ত ও দ্রুত আইনের আওতায় এনে সমস্যা সমাধানের সুফল পাচ্ছে শেরপুরবাসী।
শেরপুর জেলা পুলিশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সপ্তাহে তিন দিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জনগণের সমস্যার কথা সরাসরি শুনতে এবং সেই অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নিতে ‘আপনার এসপি আপনার কাছে’ কার্যক্রম চালু করেছেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। এতে করে কোন আইনি সমস্যার বিষয়ে সরাসরি পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ। যাদের মনে এক সময় ভয় কাজ করতো পুলিশের সাথে কথা বলতে, তারাই এখন সরাসরি পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের সুযোগ পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে এই বিষয়টিও ব্যপক প্রশংসা কুড়িয়েছে সব মহলেই।
পুলিশের বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ড ও অপরাধের সমসাময়িক তথ্যচিত্র নিয়ে প্রতি মাসেই প্রকাশিত হচ্ছে পুলিশ বুলেটিন। যেই উদ্যোগের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছেন তিনি। এছাড়া কোন মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তারসহ মামলার সব ধরনের কার্যক্রমে সহায়তা করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ও উপপরিদর্শকদের নিয়ে মামলা তদন্তে বিশেষ টিম গঠন করেছেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। এতে নিরপরাধ কেউ যাতে সাজার আওতায় না আসে, তা নিশ্চিত করেছেন তিনি।
শেরপুরে যোগদানের পর একশো দিনের জন্য গ্রহণ করা বিশেষ সাত কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। এছাড়া নিয়মিত মামলা ও যেকোন অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটলে আগের চেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিও তিনি নিশ্চিত করেছেন। প্রতিটি থানায় বিট পুলিশিং কার্যক্রমে নিজে উপস্থিত থেকে স্থানীয়দের সাথে কথা বলায় পুলিশ ও সাধারণ জনগণের দুরত্ব কমেছে। পুলিশের প্রতি আস্থা ফিরেছে মানুষের। এছাড়া শেরপুরের যানযট নিরসন, লাইসেন্স বিহীন চালক ও যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
দীর্ঘদিন পর নতুন উদ্যোমে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) কার্যক্রম চালু হয়েছে শেরপুরে। পুনাকের আয়োজনে উদ্যোক্তাদের জন্য মেলা, শীত বস্ত্র বিতরণ, দরিদ্রদের জন্য সহায়তা কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের জন্য ট্যালেন্ট হান্ট আয়োজন তাঁর কার্যক্রমকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।
সম্প্রতি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা চরমোচারিয়া ইউনিয়নের আসাদ মিয়া বলেন, আগে তো এই অফিসে ঢুকতে ডর করতো। গেটে পুলিশ খাড়ায়া থাকতো। নানা কথা প্রশ্ন করতো; ডরে ভিত্রে যাইতামই না। আজকে গেটের সামনে আমারে কেউ আটকায় নাই। জমির সমস্যার কথাডা জানায়া গেলাম। বিকালেই নাহি পুলিশ বাইত যাবো। এতদিনের ঝামেলা ডা আমার শেষ হবো ইনশাআল্লাহ।
তাসলিমা বেগম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সাইকেল হারিয়ে হাসিব ভেঙে পড়েছিলো। তার বিশ্বাস ছিলো পুলিশ তার হারিয়ে যাওয়া সাইকেলটি ফেরত আনতে পারবে। তাই সে থানায় অভিযোগ করে। এ ঘটনাটি হাসিবের বাবা হট লাইনে সরাসরি পুলিশ সুপারের কাছে জানায়। এরপর তিনি তার ছেলেকে একটি নতুন বাইসাইকেল ক্রয় করে উপহার দেন। এরকম পুলিশ অফিসার আমি আগে কোনদিনই দেখি নাই। আমরা তার জন্য দোয়া করি।
একশো দিনের বিশেষ কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমি যতদিন শেরপুরে আছি, ততদিন আমি শেরপুরের মানুষ। শেরপুরের জন্য, শেরপুরের মানুষের জন্য আমি কি করেছি, কি করতে চেয়েছি আর কি করতে পেরেছি, সে হিসেব শেরপুরের মানুষ করবে। আমি আমার দায়িত্ব শতভাগ পালন করতে চাই। আইন শৃঙ্খলা বিষয়ের পরেও শেরপুরের যেকোন বিষয়ে কাজ কতটা করতে পেরেছি, তার মূল্যায়ন শেরপুরবাসীই করুক।