হোবার্ট বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেল্টে সতীর্থরা যখন লাগেজের অপেক্ষায়, সাকিব আল হাসান তখন একটু দূরে দাঁড়িয়ে। সেখান থেকেই লিটন-সৌম্যদের ডেকে জানালেন, ভুল বেল্টে দাঁড়িয়ে সবাই। লাগেজ আসবে আরেক বেল্টে।
সাকিবের কথাই ঠিক হলো। গতকাল মেলবোর্ন থেকে হোবার্টে একই সময়ে এসেছে বাংলাদেশ আর দক্ষিণ আফ্রিকা দল। প্রোটিয়া ক্রিকেটাররা যে বেল্টে লাগেজ নিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেটিতেই এল বাংলাদেশ দলেরও ব্যাগপত্তর। বিষয়টা খুবই হালকা হলেও এখানে কিন্তু একটি বার্তা পাওয়া যায়, অধিনায়ক সাকিব এভাবেই তাহলে সতীর্থদের পথ দেখান।
বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় মুখ হচ্ছেন সাকিব আল হাসান। তাঁকে নিয়ে বিতর্ক-সমালোচনা যেটাই হোক, দলের বড় ভরসাও তিনি। ব্রিসবেনের সপ্তাহখানেকের প্রস্তুতিপর্বেও বিতর্কমুক্ত থাকতে পারেননি সাকিব। গত পরশু সেখানে প্রবাসীদের দেওয়া সংবর্ধনায় বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের আচরণ নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। যে ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে এসেছে, সেখানে অবশ্য সাকিবের আচরণে বিতর্কের তেমন উপাদান নেই। সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিল না এই অনুষ্ঠানে। তবে প্রশ্ন আছে—এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনের উদ্দেশ্য আর বিশ্বকাপ চলার সময় সাকিবদের সেখানে যেতে বাধ্য করা নিয়ে।
বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা যা-ই হোক, সাকিব এসব কখনো গায়ে মাখেন না। এখনো যে মাখেন না, সেটি গতকাল হোবার্ট বিমানবন্দরে তাঁর সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল। তিনি ভালো করেই জানেন, যত বিতর্কই হোক, তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশের দর্শকদের বেশি আগ্রহ। ব্রিসবেন থেকে মেলবোর্ন, মেলবোর্ন থেকে হোবার্ট। বৈরী আবহাওয়ায় ফ্লাইট বিলম্বও হয়েছে। প্রায় ৮ ঘণ্টার ভ্রমণক্লান্তি নিয়ে বিমানবন্দরে লাগেজের অপেক্ষায় থাকার সময়ও যত দর্শক ছবি-সেলফি তুলতে এলেন সাকিবের কাছে, কাউকেই হতাশ করেননি। বাংলাদেশ দলের তারকা অলরাউন্ডার যথেষ্ট এই আবদার মিটিয়েছেন ব্রিসবেনেও। তবু বিতর্ক যেন তাঁর ছায়াসঙ্গী।
আলোচনা-সমালোচনা যেটাই হোক, সাকিব অবশ্য মাঠে নিজের কাজটা ঠিকঠাক করতে বরাবরই পটু। মাঠে যখন নামেন, বাইরের সবকিছু ‘সুইচ অফ’ করেই নামেন। ভালো খেলতে তাই খুব একটা সমস্যা হয় না তাঁর। মাঠের বাইরের কোনো কিছু প্রভাব পড়ে না পারফরম্যান্সে। এই বিশ্বকাপে সাকিবের চ্যালেঞ্জ আরও বড়, নিজেকে ভালো খেলতে হবে, দলেরও পারফরম্যান্স ভালো হতে হবে। তিনি জানেন, ক্রিকেটে সব সময়ই একজন অধিনায়কের বিচার হয় তাঁর দলের সাফল্য দিয়ে।
বিশ্বকাপ রাঙাতে অধিনায়ক সাকিব সব চেষ্টাই করে যাচ্ছেন, সেটি দুই দিন আগে টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরামও জানালেন। এই যে সবার দৃষ্টি সাকিবের দিকে, এটার নেতিবাচক দিক যেমন আছে, ইতিবাচক দিকও আছে, বাকিদের সুযোগ করে দেয় নির্ভারে দারুণ কিছু উপহার দেওয়ার। সাকিবকেন্দ্রিক এই দলে আফিফ-লিটনরা সেই সুযোগটা কতটা নিতে পারে, সেটাই দেখার।