পবিত্র ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, নববর্ষসহ উৎসবের দিনগুলোতে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর রীতি বহু পুরনো। কিন্তু প্রযুক্তির ছোঁয়া আর আধুনিকতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে ছাপা কার্ডে শুভেচ্ছা জানানোর পদ্ধতি। তবে ঈদে গিফট প্যাকেট বা ব্যাগের ব্যবহার কিছুটা রয়েছে।
শেরপুরের পেপারস হাউজের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০১৪-১৫ সালের দিকেও ছাপা কার্ড বিতরণের হিড়িক ছিল। কিন্তু এখন হাতে হাতে স্মার্টফোন পৌঁছে যাওয়ায় ছাপা কার্ড বিতরণে আগ্রহ হারিয়েছে মানুষ। এখন ই-মেইল, এসএমএস, স্টিকারসহ বিভিন্ন উপায়ে কার্ড বানিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। বিভিন্ন ডিজাইনের গিফট ব্যাগের ক্রেতা আছে। কিন্তু সেটাও খুব একটা বেশি না।
শহরের রঘুনাথ বাজারের সিলেট পেপার হাউজের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান বলেন, ঈদে কার্ডের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়ার যে কালচার ছিল সেটি হারিয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা নববর্ষের ক্ষেত্রেও। এখন মানুষ আর শুভেচ্ছা কার্ড নিতে আসে না। একটা সময় ছিল, যখন ঈদের একসপ্তাহ আগে থেকেই কার্ড বিক্রির হিড়িক পড়ে যেত। ছেলেমেয়েদের ভিড় ঈদের আগের দিন পর্যন্ত থাকতো।
শহরের বটতলা মোড়ের রেজিয়া অফসেটের মালিক রাজাদুল ইসলাম বাবু বলেন, ঈদের কার্ডের অর্ডার নেই এখন আর। একসময় রোজার আগেই প্রস্তুতি নিতাম ঈদ কার্ড ছাপানো। নানান ডিজাইন থাকতো ঈদ কার্ডের জন্য। তখন সবচেয়ে বেশি চলতো ঈদ কার্ড, বাচ্চাদের কার্ড ছিল। এখন মাঝেমধ্যে দু একটা সংগঠন, সমিতির থেকে অর্ডার আসে ঈদের কার্ডের। তাছাড়া কার্ডের ব্যবসা নেই বললেই চলে।
শহরের শাপলা চত্বর মোড়ের আহমদিয়া পেপারস হাউজের স্বত্বাধিকারী খোরশেদ আলম বলেন, স্মার্টফোন আসার পর থেকে ধীরে ধীরে কার্ড বিক্রি হারিয়ে গেছে। ২০১৪-১৫ সালেও লোকজন নিয়মিত কার্ড কিনেছে। বিশেষ করে মেয়েছেলেরা হরেক ডিজাইনের কার্ড নিতো। ব্যবসাও ভালো হতো। আমাদের কার্ড বিক্রির দু’টি সিজনই ছিল, নববর্ষ আর ঈদ। এখন তো কিছুই নেই। তবে কিছু গিফট প্যাকেট ঈদে বিক্রি হয়।
শহরের নিউমার্কেটের মিমোজা শপিং মলে গিফট প্যাকেট নিতে আসা আবু রাহাত বলেন, প্রিয়জনকে কিছু কসমেটিকস উপহার দিবো। তাই পছন্দমতো একটা ব্যাগ নিচ্ছি।
মিমোজা শপিং মলের ম্যানেজার রাব্বি বলেন, ঈদ কার্ড তেমন একটা বিক্রি হয় না তবে গিফট ব্যাগের গ্রাহক আছে।
সাংস্কৃতিক কর্মী এ কে এম মিলন বলেন, প্রায় মানুষের হাতেই এখন স্মার্ট ফোন। আর অনলাইনের দাপটে ছাপা কার্ড বিতরণের প্রচলন হারিয়ে যাচ্ছে। এখন কিছুটা বিয়ের কার্ড চলছে। হয়তো সামনে সেটিও হারিয়ে যেতে পারে। কারণ এভাবে অনলাইনে যদি বিয়ের আমন্ত্রণও দেওয়ার প্রচলন শুরু হয় তাহলে বিয়ের কার্ডও আর চলবে না। ঈদ কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানালে একটা আবেগ কাজ করে, ভালবাসার গভীরতা বুঝা যায়। কিন্তু অনলাইনে সেই স্বাদ নেই।
কবি অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, অফিসিয়ালি প্রতিষ্ঠানগুলো শুভেচ্ছা জানাতে কিছু কার্ড ছাপায়। তাছাড়া শুভেচ্ছা কার্ড এখন আর চোখে পড়ে না। শুভেচ্ছা কার্ডে আলাদা একটা ভালবাসা লুকিয়ে থাকে। সময়ের দাপটে এখন আর সেই ভালবাসা নেই।
নকলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোশাররফ হোসেন স্মৃতিচারণ করে বলেন, একটা সময় আমরা শহরে ঘুরে ঘুরে পছন্দ করে ঈদ কার্ড কিনতাম। সেই দিন হারিয়ে গেছে। ঈদ কার্ডে আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করতো।