২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে রবিউল ইসলাম অপু চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হলে মেঘনা সেতু এলাকায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার স্বীকার হন। ভেঙে যায় ঘাড়ের দুটি স্পাইনাল কট। এরপর ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়ি ফিরে আসেন। চিকিৎসক অপুকে বলেছিলেন, চার-পাঁচ মাস ব্যায়াম করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেই ভুল চিকিৎসা কেড়ে নিয়েছিল অপুর সব রঙিন স্বপ্ন। অপুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তিনি পুনরায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে যান। তখন তাকে অন্য আরেকজন চিকিৎসক থেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী অপু থেরাপিও শুরু করেন। কিন্তু টাকার অভাবে মাত্র কয়েকটি থেরাপি শেষে তাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে পুনরায় শেরপুরে ফিরে আসতে হয়।
এ বিষয়ে রবিউল ইসলাম অপু বলেন, চিকিৎসকের একটি ভুল সিদ্ধান্ত আমার জীবনের সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। হয়তো ওই সময় সঠিক চিকিৎসা পেলে আমি অন্তত মোটামুটি চলাফেরা ও জীবন যাপন করতে পারতাম। এখন দুহাত দিয়ে ভাত
তুলে খেতে পারি না। একদম নড়াচড়া করতে পারি না। প্রস্রাব পায়খানা হুইল চেয়ারেই করতে হয়। কারণ, অপচিকিৎসায় আমার ঘাড়ের স্পাইনাল কর্ট নষ্ট হয়ে গেছে। পায়ে বিষাক্ত পোকা, মশা-মাছি কামড় দিলে টের পাই না। অনেক সময় পোকার কামড়ে পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। যা-ই হোক, এভাবে কারও বোঝা হয়ে চলতে চাই না।
হুইল চেয়ারে বসে কবুতর পালনের অভিজ্ঞতা নিয়ে অপু বলেন, আমার খামারে লং ফেস এক জোড়া কবুতরের দাম ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া রয়েছে হাইস পিজন, যার দাম ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। আমি যেহেতু চলাফেরা করতে পারি না, সেহেতু অনলাইনেই কবুতর বেচাকেনা করি। আমার খামারে বর্তমানে সাদা মুম্বাই, বিউটি খোমা, আর্চ এন্জেল, মুক্ষী, চিলা, কালদম, রেসার, গিরিবাজ, কিং, বোখরাসহ দেশি-বিদেশি নানা জাতের কবুতর রয়েছে। তবে সরকারি কোনো সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে এ খামারকে আরও বড় করব।
অপুর মা তকিরন নেছা বলেন, আমার দুই ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে অপু সবার ছোট। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এক সড়ক দুর্ঘটনা সবকিছু তছনছ করে দিল। অপুকে সব সময় চোখে চোখে রাখতে হয়। কখন তার কী প্রয়োজন হয়। কারণ, সে একা চলতে পারে না, হুইলচেয়ারে করে তাকে এদিক-সেদিক নিতে হয়। মুখে তুলে খাওয়াতে হয়। প্রয়োজনীয় সব কাজ সে হুইলচেয়ারেই করে। অপুকে নিয়ে আমাদের অনেক চিন্তা, আমরা আর কয়দিন বাঁচব। এরপর অপুর কী হবে?