বাংলাদেশে যত দিন যাচ্ছে ততই যেনো করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। দেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু বেড়েই চলছে। বাদ নেই মফস্বল এলাকাগুলো। এসব এলাকায় ঠিকমতো হচ্ছে না পরীক্ষা। আর সামাজিক দূরত্ব যেনো এক আকাশচুম্বির কথা! ফলে কেউ আক্রান্ত হলে সে অবস্থায়ই ঘুরে বেড়াচ্ছে দেদাড়চ্ছে। অন্যদের মধ্যে ছড়িয়েও দিচ্ছে। শেরপুর যেনো এক হ-য-ব-র-ল অবস্থা।
জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন কিন্তু প্রতিনিয়ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও অযথা ঘুরাঘুরি বন্ধ করতে আপ্রাণ কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় জেলার সদরসহ প্রতিটি উপজেলা কিন্তু প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও কিন্তু জেলার সকল পর্যটন কেন্দ্রগুলো, হাট বাজার এসব বন্ধ করারও নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আর জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় পুলিশ সদস্যরা প্রতিনিয়ত মানুষকে বুঝাচ্ছে ঘরে থাকার জন্য। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু বিভিন্ন কার্যক্রম করেছে জেলা পুলিশ। এতে সবার নজরে আসলে কেনো যেনো আমরা তা মানছি না! যদিও সম্প্রতি সময়ে পুলিশ কঠোর অবস্থানে যাওয়ায় জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতায় শহরের কিছুটা সামাজিক দূরত্ব বজায় ও অযথা ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ রয়েছে। চিরচেনা সেই শহরে যানজট ও ফুটপাতে ব্যস্ত মানুষের ছুটে চলা একদম নেই। কিছুক্ষণ পরপর গুটিকয়েক প্রাইভেট কার রিক্সা সাঁ সাঁ করে চলছে। বিভিন্নস্থানে যাত্রীদের আশায় হাতে গোনা কয়েকটি রিকশা ও অটোরিক্সা চালক হাঁকডাক দিচ্ছেন যাত্রীর আশায়। বর্তমানে সড়কগুলো ফাঁকা ময়দানে পরিণত হওয়ার ফলে যাত্রী পাচ্ছে না তারা। সড়কের দুই পাশে ছিন্নমূল মানুষগুলো হঠাৎ যেন ভোজবাজির মতো উধাও। কোথায় গেল তারা? নিজ গ্রামে?
শহরে যখন এমন অবস্থা ঠিক উল্টো চিত্র জেলার প্রতিটি উপজেলার। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে হাট-বাজারে প্রতিদিন যে মানুষ আনা-গোনা হয়, তাতে দেখে মনে হবে যেনো উৎসবের আমেজ। করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো জেলায় অঘোষিত লকডাউন চলছে। আর এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে ফুটপাতের হকার, পরিবহনশ্রমিক ও দোকান কর্মচারী সবার একই অবস্থা।
একদিকে, নিত্য পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে অন্যদিকে সচ্ছল লোকজন বাসায় খাদ্য মজুত করছেন। করোনা সংক্রমণের এই সময়ে দেশের দরিদ্র মানুষেরা রয়েছে সব চেয়ে বিপদে। তবে শেরপুরে দুই দফায় মোট ২০০ মে.টন চাল ও ৯ লাখ টাকা প্রদান করেছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়। আর এসব চাল ও টাকা জেলা প্রশাসন কিন্তু অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণও করেছেন। এছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে ও বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগিতায় এসব মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। এখন কথা হচ্ছে এসব ত্রাণ কি পাচ্ছেন আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সীমান্তবর্তী অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষরা ?
আবার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেও নিরাপত্তা ও সামাজিক দূরত্ব যেনো ত্রাণ দিতে গেলেই মনে হারিয়ে যায় তাদের। কিন্তু সংক্রমণ ঠেকাতে যখন ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করেছে সরকার। সেখানে লোকসমাগম করে দেয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা। তবে কিছু কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই দিচ্ছে ত্রাণ।
প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে- সহায়তার নামে ছড়াচ্ছে না তো সংক্রমণ? করোনার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ জয়ের বড় হাতিয়ার হিসেবে সামাজিক দূরত্বটাই যেন বড় অর্থবধোক। ছোঁয়াচে এই রোগ থেকে বাঁচতে সচেতন হতে হবে নিজেকেই। সেইসাথে সহায়তার কার্যক্রমে ভিন্ন পদ্ধতিও অবলম্বন করতে হবে। সকলের তরে সকলে মোরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে, কথাটি তাৎপর্য যেমন আছে তেমনি ঘরে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখুন’ কথাটির যথার্থতাও রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
লেখক- শাকিল মুরাদ
সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী।