প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভারতের গোয়া। একদিকে সমুদ্রের নীরব হাতছানি, অন্যদিকে পাহাড়ের অপূর্ব শোভা উপভোগ করতে কয়েকটি দিন কাটিয়ে আসতে পারেন। বছরের যে কোনো সময় গোয়া যেতে পারেন। তবে আবহাওয়া বিবেচনায় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস সবচেয়ে ভালো সময়। অনেকের ইচ্ছে থাকলেও সামর্থের কারণে যাওয়া হয় না। তাই এই লেখায় গোয়াতে কীভাবে বাজেট ট্রিপ দেয়া যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করা হলো-
যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে গোয়া যাবার দুটি উপায় আছে। প্রথমটি বিমানে, এক্ষেত্রে পথে কয়েকটি স্টপেজ দেবে এয়ারলাইনসগুলো। তাই সময় লাগবে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা। বিমানে গোয়া গেলে খরচটাও বেশি পড়বে। এক-দেড় মাস আগে টিকেট কাটলেও পনেরো থেকে বিশ হাজার রুপির মতো খরচ হবে, শুধু যাওয়ার টিকেটেই। দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে সড়ক পথ। ঢাকা থেকে বেনাপোল এসে ভারতে ঢুকে হাওড়া থেকে ট্রেন ধরুন গোয়ার। হাওড়া থেকে ট্রেনের স্লিপার ক্লাস বগিতে গোয়া যেতে খরচ হবে ৯০০ রুপির মতো। চাইলে ভারতে প্রবেশ করে ডোমেস্টিক ফ্লাইটগুলোতে গোয়া যেতে পারেন, এতে খরচ হবে ৪,৫০০ রুপির মতো।
ট্রেনে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩৯ ঘণ্টার কাছাকাছি। কলকাতা থেকে বিমানে যেতে সময় লাগবে সাড়ে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো। হাওড়া থেকে সপ্তাহে শুধু শনি, সোম, মঙ্গল এবং বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটায় ‘আমারাভাথি এক্সপ্রেস’ ছাড়ে গোয়ার উদ্দেশ্যে।
থাকার জায়গা
থাকার খরচ কমাতে পারলেই আপনি কম খরচে যে কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। তাই গোয়ায় গিয়ে ট্রাভেল হোস্টেলে থাকাটাই উত্তম। মানে এক রুমে আপনি ছাড়াও আরো দু-তিন জন মানুষ থাকবে। তবে গ্রুপ নিয়ে গেলে যেকোনো হোস্টেলের একটি রুম অনায়াসেই ভাড়া নেয়া যাবে। আর একা গেলে সুবিধে হলো বিভিন্ন দেশের মানুষদের সঙ্গে রুম শেয়ার করার অভিজ্ঞতা মিলবে।
গোয়ার তেমনই ভাল কিছু হোস্টেলের মধ্যে রোডহাউস হোস্টেল, রেড ডোর হোস্টেল এবং দ্য হোস্টেল ক্রাউড অন্যতম। প্রতি বেডে প্রতিরাতের ভাড়া এখানে প্রায় ৩৫০ রুপি থেকে ৫০০ রুপির মধ্যে সীমাবদ্ধ। কমপক্ষে দুই রাত থাকুন গোয়ায়, তাহলে আপনার থাকার খরচ যাবে ৭০০ থেকে ১,০০০ রুপির মতো।
যেভাবে ঘুরবেন
এবার গোয়া শহর ঘুরে দেখার পালা। এক্ষেত্রে আপনার কাছে পথ খোলা দুটি। আপনি বাইক চালাতে পারলে বেশ সুবিধা পাবেন সেখানে। গিয়ারলেস কিছু বাইক (যেমন- এক্টিভা/ডিও) পেয়ে যাবেন প্রতিদিন ৩০০ রুপি ভাড়ায়। গোয়ার বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত ঘুরে বেড়াতে এসব মোটরসাইকেলের জুড়ি নেই। জ্বালানির খরচ হিসেবে দু’দিনে ২০০ থেকে ৩০০ রুপি যথেষ্ট। যদি আপনি বাইক চালাতে পারেন তাহলে এভাবে ঘুরতে পারবেন।
আর যদি বাইকে পারদর্শী না হয়ে থাকেন তবে হোটেলে বা আশেপাশে জিজ্ঞেস করুন। তারাই শহর ঘুরে বেড়ানোর জন্য গাড়ি কোথায় পাওয়া যাবে তার সন্ধান জানিয়ে দিবে। পুরো গোয়া ঘুরতে একদিনের বেশি সময় লাগবে না। একদিনে শহর ঘুরিয়ে আনতে গাড়ি ভাড়ায় খরচ হবে এক হাজার থেকে ১,২০০ রুপির মতো।
একটু বুদ্ধি করে গোয়ার সৈকতগুলোর পাশেই হোটেল/হোস্টেল নেয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে হেঁটেই যেকোনো সময় সৈকতে চলে যাওয়া যাবে। রাতে গোয়ার সমুদ্র সৈকতগুলো এতটাই জীবন্ত হয়ে ওঠে যে সেখান থেকে হোটেলে ফিরে আসতে মন চাইবে না।
খাবার-দাবার
গোয়া উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় সেখানে সামুদ্রিক খাবার-দাবারের কোনো কমতি নেই। এছাড়া সাউথ ইন্ডিয়ান বিভিন্ন রেসিপি দিয়ে বানানো অনন্য স্বাদের সব ডিশ তো আছেই। তবে যাই খাবেন দেখে-শুনে খাবেন! কারণ সব সামুদ্রিক খাবার-দাবার পেটে সয়ে যাবে তেমনটি নয়। গোয়ায় দিনপ্রতি খাবার খরচ হিসেবে ৪০০ থেকে ৫০০ রুপি লাগবে তিনবেলায়। তারপরও সৌখিন মানুষ সব জায়গায়ই আছে, শখ করে বিভিন্ন ডিশ চেখে দেখতে চাইলে খরচ করতে হবে আরো কিছু রুপি।
খতিয়ান
তাহলে গোয়া ঘুরে আসার মোট টাকার হিসেব দাঁড়ায় অনেকটা এমন-
* হাওড়া-গোয়া-হাওড়া ট্রেন (আমারাভাথি এক্সপ্রেস) = ৯০০+৯০০ রুপি
* হোস্টেল ভাড়া (২ রাত) = ১,০০০ রুপি
* শহর ভ্রমণ (বাইক ২ দিন/ গাড়ি ১ দিন) = ৯০০/ ১,২০০ রুপি
* খাবার খরচ (২ দিন) = ১,০০০ রুপি
মোট পাঁচ হাজার রুপিতে তাহলে গোয়া ভ্রমণ শেষ হয়ে যাবে অনায়াসেই। তবে এই টাকা নিয়ে গেলেই গোয়া থেকে ঘুরে চলে আসতে পারবেন ব্যাপারটা এমন নয়। বাংলাদেশের কক্সবাজারে গিয়েই তো আমরা বুঝি উপকূলীয় এলাকাগুলোয় জিনিসপত্রের দাম কত পরিমাণ চড়া! তাই অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।