শাহরিয়ার মিল্টন :
শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নির্দশন তিনআনী জমিদারদের রং মহলসহ নানা স্থাপনাকে গোল্ডেন হেরিটেজ হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনসাধারণ। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে পোনে তিনআনী জমিদার কিশোরী মোহন চেীধুরীর আমলে রং মহল, শীশ মহলসহ নানা সৌধ নির্মাণ করা হয়। অপূর্ব কারুকার্যখচিত ভবনগুলোর মধ্যে উত্তর- দক্ষিণে প্রলম্বিত রং মহলের তিন অংশের প্রথম অংশ জমিদারদের খাস দরবার কক্ষ ও জলসাগর।
দ্বিতীয় অংশে জমিদারদের খাস কামরা এবং তৃতীয় অংশে নায়েব-ম্যানেজারের কাচারি হিসেবে ব্যবহৃত হত। রং মহলের প্রবেশ পথে দুটি দরজা। ডানদিকের দরজা বরাবর টানা লম্বা করিডোর। করিডোর ও ভিতরের অর্ধেক দেয়াল জুড়ে বিরাজ করছে রঙিন চিনাপাথরের ফ্রেসকো ও ফুল লতাপাতার আঁকা টালি বসানো। কবির ভাষায় ’ আজি হতে শতবর্ষ পরে কে মোর কবিতাখানি-র মতো শতবর্ষ পরও সেগুলোর ঔজ্জ্বল্য আজও চির যৌবন, চির উজ্জল। রং মহলের ডানদিক ঘেঁষে শান বাঁধানো পুুকুর। জলে জলসাগর প্রতিবিম্বিত হয়। সেই আমলে রং মহলের দীর্ঘ করিডোর ধরে প্রতিটি কক্ষে ঢোকার দরজার পাশে ছিল পিতল ও পাথরের নানা ধরনের মূর্তি আর বিরাট আকারের ফুলদানি।
শেরপুরের জমিদারদের মধ্যে পোনে তিনআনী জমিদার পরিবার শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা ছিলেন। ছিল তাঁদের জয় কিশোর লাইব্রেরি ভবন, কূল দেবতা অন্নপূর্ণা-গোপীনাথের অপরুপ সুন্দর মন্দির যার মাঝে রয়েছে প্রাচ্য, পাশ্চাত্য ও মুসলিম স্থাপত্যরীতির অপূর্ব সুসমন্বয়। লাইব্রেরিতে ছিল পাঁচ সহস্রাধিক বই। অধিকাংশই বিজ্ঞান বিষয়ক।
পরের আধুনিক ইতিহাসে জমিদার বাড়িটিকে কৃষি প্রশিক্ষাণালয়ে রুপান্তরিত করা হলে লাইব্রেরি ভবনটি ভেঙে সেখানে টিনশেডের শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ করা হয়। রং মহলটি এক সময় কৃষি প্রশিক্ষাণালয়ের প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহার হলেও এখন তা আর ব্যবহার হচ্ছে না । কেননা জমিদারি বিলাসিতার রং মহলের দিন ফুরিয়ে গেছে। নেই সেদিনকার অভিজাতকূল। তবে ভবনটি এতোই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যে, সামান্য বৃষ্টিতেই এর ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে।
স্থানে স্থানে সুরকির গাঁথুনি নড়বড়ে। পলেস্তারা খুলে পড়ে যখন তখন। এককালের দৃষ্টিনন্দন রং মহল, শীশ মহল ও অন্যান্য স্থাপত্যগুলোর প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করে এগুলোকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করার প্রস্তাব ও দাবি স্থানীয়দের ।
এস এ শাহরিয়ার মিল্টন
সম্পাদক, শেরপুর টাইমস ডটকম
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, শেরপুর সাংবাদিক কল্যাণ সমিতি।