স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক তারামন বিবি। গেলো শুক্রবার রাত ১টা ২৭ মিনিটে তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে ইন্তেকাল করেন। বীরকন্যা তারামন বিবির মৃত্যুতে শেরপুর জেলা প্রশাসন গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত ফেসবুক পেজে তাকে নিয়ে একটি আবেগঘন লিখা প্রকাশ করেছে। নিম্নে শেরপুর টাইমসের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো।
১৯৭১ সাল, ১৬ ডিসেম্বর। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয় বাংলাদেশ। বিশ্বের বুকে রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস। নতুন এক মানচিত্র। আর এই জয় ছিনিয়ে আনতে জীবন বাজি রেখেছিলে বেশ কয়েকজন নারী। তাদের মধ্যে একজন হলেন ‘তারামন বেগম’। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ‘তারামন বিবি’ নামে পরিচিত ছিলেন।
খেতাব প্রাপ্ত (উপাধিপ্রাপ্ত) মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকায় তার নাম দেখা যায়। সরকারি গেজেটে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানেও তার নাম আছে। কিন্তু তারই কেবল খোঁজ মিলছিলো না। ময়মনসিংহে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ের গবেষক অধ্যাপক বিমল কান্তি দে নেমে পড়লেন সেই উপাধিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে খুঁজে বের করার মিশনে। একান্ত ইচ্ছে-আন্তরিকতা আর পরিশ্রমের পর সেই উপাধিপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক তারামন বিবিকে খুঁজে বের করে ফেলেন বিমল কান্তি।
অসীম সাহসিকতার এক প্রতীক এই বীর নারী। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজ গ্রাম কুড়িগ্রাম জেলার শংকর মাধবপুরে ছিলেন। তখন ১১ নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। তখন ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরী ছিলেন তিনি।
দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য রণাঙ্গনে পর্যন্ত লড়াই করা সেই বীরকন্যা তারামন বিবি সম্প্রতি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। জেলা প্রশাসন শেরপুর এই বীরকন্যা তারামন বিবির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে।
বীরকন্যা তারামন বিবি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস, ডায়াবেটিস আর শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত মাসেও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকা সিএইচএম হসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল।
তার স্বামী ও দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
শনিবার দুপুর ২টায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা শেষে রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া তালতলা কবরস্থানে তারামন বিবির লাশ দাফন করা হয়। এর আগে সেখানে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ গার্ড অব অনার প্রদান করে।