আগাম ঘোষণা ছাড়াই বর্তমান কমিটি বাদ দিয়ে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে শেরপুর জেলা ছাত্রদলের নয়া কমিটি গঠনকে ঘিরে ছাত্রদলের একাংশের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ৪ ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এছাড়া পদবঞ্চিত হয়ে নবগঠিত কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সমালোচনা করছেন।
জানা গেছে, গতকাল ৩ ডিসেম্বর শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৮ সদস্য বিশিষ্ট শেরপুর জেলা ছাত্রদলের একটি কমিটি ঘোষণা করেন। এতে জেলা ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. নিয়ামুল হাসান আনন্দকে সভাপতি, মো. হাশেম আহম্মেদ সিদ্দিকীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, মো. জাহিদ হাসান টিটুকে সহ-সভাপতি, মো. নাঈম হাসান উজ্জলকে সাধারণ সম্পাদক, মির্জা ইমরুল কায়েস রিয়াদকে সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, মো. সাকিবুল হাসান তারা ও মো. মনির হোসেন শান্তকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং মো. জাকির হোসেনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
পরে ওই কমিটি গঠনের প্রতিবাদে সন্ধ্যায় ফেসবুকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো প্রেস রিলিজে সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের ১২ জুলাই জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ২৭৯ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর থেকে সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতার সাথে সাংগঠনিক দায়িত্ব ও কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মসূচী পালন করে আসছি। কমিটির দায়িত্ব পাওয়ার পর সকল থানা, শহর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও কলেজ পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কলেজের সাথে সাথে ক্লাস কমিটিও করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে নেতা-কর্মী নিয়ে অংশগ্রহণ করেছি, আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছি, আহত হয়েছি ও মামলা খেয়েছি । ঢাকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে মিথ্যা দুটি মামলাও দেওয়া হয়েছে আমার নামে। ওইসব মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে থেকেও হরতাল অবরোধ সফল করতে স্ব-শরীরে এবং নেতা-কর্মীদের দিয়ে প্রতিনিয়ত মিছিল, মশাল মিছিলে অংশগ্রহণ করেছি। এরপরও শেরপুর জেলা ছাত্রদলের মত একটি শক্তিশালী ইউনিটকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যই কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত ৮ সদস্য বিশিষ্ট জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নতুন কমিটি গঠন সম্পর্কে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মাহমুদুল হক রুবেলসহ আমাকে বিন্দুমাত্র অবগত করা হয়নি।কেন্দ্রের একক সিদ্ধান্তে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। সকল পক্ষের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীদের জীবনবৃত্তান্ত আহবান করে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করলে এত মতবিরোধ থাকতো না বলতে বলেও দাবি করেন শওকত হোসেন। তিনি দলের স্বার্থে জেলা বিএনপি ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতামত নিয়ে ত্যাগী, পরিশ্রমী ও দক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠনে অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার একাধিক বিএনপি নেতা জানান, নতুন কমিটি গঠন করে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরির সময় এখন নয়। বরং সবাইকে সাথে নিয়ে আন্দোলনে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। কমিটি গঠন করতে হলে আন্দোলনের পর নিয়মতান্ত্রিকভাবে গঠন করা যেতো।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহমুদুল হক রুবেল বলেন, এই কমিটি সম্পর্কে আমি অবগত নই। আন্দোলনের সময়ে কমিটি দেওয়াটা একেবারেই অনুচিত হয়েছে। কমিটির সভাপতি শওকত শতভাগ অ্যাকটিভ একটা ছেলে। সব আন্দোলনেই তার সক্রিয় ভূমিকা থাকে। কোন কারণ ছাড়াই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। নতুন কমিটির সভাপতি ছাড়া আর কারোরই ছাত্রদলের কোন অভিজ্ঞতা নেই। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক যে হয়েছে, তাকে কেউই ভালো করে চেনে না। আমার কাছে মনে হয় কমিটি সেন্ট্রাল থেকে টাকা দিয়ে করা হয়েছে। এই কমিটি থাকলে শেরপুরের আন্দোলন ব্যাহত হবে। সুতরাং এই কমিটি অবিলম্বে আমরা স্থগিত চাই।
তবেএ ব্যাপারে আত্মগোপনে থাকায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হযরত আলীর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া নতুন কমিটির কারও সাথেও ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে নতুন কমিটির সভাপতি-সম্পাদককেও অনেকে ফেসবুকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।