শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার অটোরিকশা চালক ছেলে ইব্রাহিম খলিলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অসহায় বাবা সেকান্দার আলীসহ তার পরিবারের সদস্যরা। ওই সংবাদ সম্মেলনে ছেলের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন ও দ্রুত বিচারের দাবি জানান তারা। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের পিপুলেশ্বর গ্রামের নিজ বাড়িতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় নিহতের বাবা সেকান্দার আলী জানান, একই উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের ফটিয়াকান্দি গ্রামের আমির উদ্দিনের মেয়ে আমিরনের সাথে প্রায় দেড় যুগ আগে ইব্রাহিম খলিলের বিয়ে হয়। ওই দম্পতির এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তান আছে। সাংসারিক বিভিন্ন কারণে প্রায়ই পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত তাদের। এমতাবস্থায় তার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার স্ত্রীকে তাদের বাড়ি নিয়ে যান। এদিকে স্ত্রী শ্বশুর বাড়ি চলে যাওয়ায় ইব্রাহিম ঢাকায় চলে যান। সেখানে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন তিনি। তার আয়ের প্রায় ৩ লাখ টাকা দিয়ে শ্বশুর বাড়িতে আবাদী জমি বন্ধকী রাখেন। পারিবারিক কলহের জেরে ওই ৩ লাখ টাকা নিজ হাতে ফেরত আনা নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মাঝে দ্ব›দ্ব চলছিল। এরই মাঝে গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে ইব্রাহিম। কয়েকদিন পর শ্বশুর বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে কল পেয়ে ২৪শে ডিসেম্বর রাতে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন ইব্রাহিম। পরদিন ২৫ ডিসেম্বর সকালে ইব্রাহিমের মরদেহ তার শ্বশুর বাড়ির কাছে অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। ওই সময় তারা স্বজন ও পুলিশকে খবর দেন। ইব্রাহিমের মরদেহের পাশে একটি বিষের বোতল পড়ে ছিল। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। বাবার দাবী তার ছেলে বিষপান করে আত্মহত্যা করেনি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি আমার ছেলের বৌ কৌশল করে ডেকে নিয়ে পারিবারিক কলহ ও শ্বশুর বাড়িতে বন্ধকী রাখা ৩ লাখ টাকার জের ধরে ইব্রাহিম খলিলকে তার শশুরবাড়ির লোকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়। প্রতিবেশী হাতেম আলী বলেন, ছেলেটা খুবই ভালো মানুষ ছিল। আমরা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিনা যে সে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। আমরা এর সঠিক তদন্তপুর্বক ইব্রাহিমের মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করে বিচার করা হোক। এদিকে, এই ঘটনায় ২৯ ডিসেম্বর ইব্রাহিমের শশুরবাড়ির ৮জনের নামে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করে নিহত ইব্রাহিম খলিলের ভাই রফিকুল ইসলাম। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইব্রাহিমের স্ত্রী আমিরনের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে বারবার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোশারফ হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। একইসাথে আলামত সংগ্রহ করে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ঢাকা মহাখালী পাঠানো হয়েছে। এসবের রিপোর্ট পেলে মুত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। সেখানে যদি হত্যার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়। তাহলে অপমৃত্যুর মামলাটি নিয়মিত মামলায় পরিণত হবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইব্রাহিম খলিলের মা আনু খাতুন, বাবা সেকান্দার আলী, ভাই রফিকুল ইসলাম, ছেলে আবুল হোসেনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।