শেরপুরের গারো পাহাড়ে কোকোয়া, কফি, চা, ড্রাগন ফলের সঙ্গে আঙ্গুর চাষের কথা শোনা গেছে। তবে যেসকল আঙ্গুর চাষ করা হয়েছে তা বেজায় টক, যা মুখে দেওয়াই দায়। কিন্তু গারো পাহাড়ে এবারই প্রথমবারের মত বাণিজ্যিকভাবে  মিষ্টি-সুস্বাদু আঙ্গুরের চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল জলিল। ভারতে ঘুরতে গিয়ে শখের বশে আঙ্গুরের চারা সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসেন তিনি। পরে এসব চারাগাছ নিজের ১৫ শতাংশ জমিতে রোপণ করেছেন উদ্যোক্তা আব্দুল জলিল। এরইমধ্যে সুমিষ্ট ফল এসেছে বাগানে। স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় অধিক লাভের আশা করছেন এ উদ্যোক্তা।  এদিকে তার আঙ্গুর বাগান দেখে অনেকেই এর আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। আর এ ধরনের চাষে কৃষকদের সব ধরনের উৎসাহ ও সহযোগিতার করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
জেলার শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম মেঘাদলে গিয়ে দেখা গেছে আব্দুল জলিলের বাগানে মাথার উপর বাঁশের মাচায় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোঁকায় থোঁকায় ঝুলছে আঙ্গুরের ছড়া। খেতেও বেশ সুস্বাদু, আর মিষ্টি রসালো ফল অনেকেই বাগান হতে কিনে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ চারা সংগ্রহ করছেন।
আব্দুল জলিল জানান, গত বছর ভারতে ঘুরতে গিয়ে শখের বসে দুই জাতের ১০টি আঙ্গুর ফলের চারা নিয়ে আসেন। এরপর আরো দুই ধাপে ৪০ জাতের ৮০টি চারা আনেন। নিজের ১৫ শতাংশ জমিতে এসব চারা রোপণ করেন। এতে সব কিছু মিলিয়ে তার খরচ হয় এক লাখ ২০হাজার টাকা। পরিচর্যার পর বাগানে আসতে শুরু করেছে সুমিষ্ট ফল। থোঁকায় থোঁকায় আঙ্গুর ধরেছে প্রায় সব গাছেই। যা বিক্রি করে লাভের আশা করছেন। এছাড়া নিজেই উৎপাদন শুরু করেছেন আঙ্গুরের চারা।
উদ্যোক্তা আব্দুল জলিল আরও জানান, আমার কাছে চারা আছে, যদি কারো আগ্রহ থাকে তাকে দিতে পারবো। আঙ্গুর চাষ যে বাংলাদেশে হয়, আমি নিজে তার প্রমাণ পেয়েছি। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে চারা লাগানোর ১০ মাস পর বাগানে আসে ফল। নতুন করে বৃহৎ পরিসরে বাগান করার উদ্যোগ নিচ্ছেন এই উদ্যোক্তা। জলিল মিয়ার এই বাগান দেখে অনেক কৃষকই আগ্রহী হচ্ছেন। এরই মধ্যে অনেকেই তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেছেন।
শেরপুর পৌর শহরের মোবারকপুর মহল্লার আরিফুর রহমান এসেছেন বাগান দেখতে। তিনি বলেন, আগে শুনেছিলাম আমাদের দেশীয় আঙ্গুর টক হয়। কিন্তু এ বাগানের আঙ্গুর মিষ্টি। আমার পরিবারের চাহিদার জন্য ১০ টি চারাগাছ নিয়ে যাবো।
শ্রীবরদী লোকাল ভয়েজের সভাপতি এজেড রুমান বলেন, স্থানীয়ভাবে আঙ্গুর চাষ হলে ফরমালিন মুক্ত ও কোনো ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়া মানসম্মত ফল পাওয়া যাবে।
চরশেরপুরের সাবেক ইউপি সদস্য নাঈম আহমেদ মনি বাগান থেকে ফল ও চারা সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, আব্দুল জলিলের বাগানে আঙ্গুরের ভালো ফলন হয়েছে। যদি কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এরকম আরও বাগান করা যায়, তাহলে একসময় বাইরের দেশ হতে আর আঙ্গুর ফল আমদানি করতে হবে না।
শেরপুরের শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, কৃষক জালাল উদ্দিন প্রথমবারের মতো আমাদের শ্রীবরদী উপজেলায় আঙ্গুর চাষ শুরু করেছেন। অন্য কোনো কৃষি উদ্যোক্তা যদি আঙ্গুর চাষে আগ্রহী হন তাহলে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হবে।
কৃষি বিজ্ঞানী ড. মোহিত কুমার দে বলেন, বাংলাদেশে সাধারণত বাইকুনর, গ্রীনলং, একেলো, এনজেলিকাসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির উন্নত জাতের আঙ্গুরের চাষ হয়। গাছের জাতের প্রকারভেদ থেকেই ফলটির টক-মিষ্টির পার্থক্য হয়। তবে গারো পাহাড়ের মাটি আঙ্গুর চাষের জন্য উপযোগী। এখানকার মাটি অম্লভাবাপন্ন ও আবহাওয়া বিদ্যমান থাকায় কমলা ও আঙ্গুর চাষ করার উপযুক্ত স্থান। এ মাটি লাল সালফারপূর্ণ (গন্ধক) হলুদার্ভ কাকরযুক্ত হওয়ায় এখানে মিষ্টি ও সুস্বাদু আঙ্গুর চাষ সম্ভব। স্থানীয়রা বাণিজ্যিকভাবে এই আঙ্গুর চাষ করেল এটি একটি জনপ্রিয় ফল চাষ হয়ে দাঁড়াবে। সেই সঙ্গে আঙ্গুর চাষ লাভজনক বাণিজ্যে রূপ নেবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে।