কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সম্প্রতি বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত আরও তিন কিলোমিটার সড়কের কয়েক হাজার গাছ কাটার জন্য গাছের গায়ে নম্বর লিখে দরপত্র সম্পন্ন করেছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা। এর আগেও দরপত্রের মাধ্যমে ২০২৩ সালে যদুবয়রা থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সড়কের সৌন্দর্যের জন্য গাছগুলো না কেটে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন নেটওয়ার্ক (বিসিএন)। পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন নেটওয়ার্ক (বিসিএন) এক বিবৃতিতে জানায়, যে মুহূর্তে প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে, সেই মুহূর্তে গাছগুলো কাটার ঘটনা সত্যি অদ্ভূত ও দুঃখজনক বটে। কুষ্টিয়ার জিকে খালের লাহিনীপাড়া এলাকায় সড়কের ধারে আর সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর নেই। কাটা গাছগুলোর গোড়া ও কিছু অংশবিশেষ পড়ে আছে। চাপড়া বোর্ড অফিস এলাকার খালের পাকা ও কাঁচা সড়কের দুইপাশে মেহগনি, বাবলা, কড়ইসহ নানান জাতের কয়েক হাজার বড় বড় গাছ রয়েছে। সেগুলোর গায়ে নাম্বারিং করা। তিন মাস আগেও অসংখ্য গাছ কাটা হয়েছে। বড় পুকুরের কাছে ছায়াতলে মানুষ বিশ্রাম নিত। আরামে চলাচল করত পথচারীরা। এখন সেখানে ধূধূ মরুভূমি, তীব্র তাপদাহ। একটি দেশের মোট ভূখণ্ডের কমপক্ষে ২৫ ভাগ বনভূমি প্রয়োজন। বাংলাদেশে সেই তুলনায় অনেক কম। পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় প্রতিনিয়ত বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। মরুভূমিতে রূপান্তর হচ্ছে দেশ। কাবর্ন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ প্রাণী জগতে বেড়েছে। ক্ষতিকর ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ অনেক গুণ বেড়েছে। ওজন স্তরে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে। অ্যাসিড বৃষ্টি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এন্টার্কটিকার বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা ও জনসংখ্যার চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে বৃক্ষরোপণ ও আগের বড় গাছ রক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই কুমারখালীতে সম্প্রতি বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত আরও তিন কিলোমিটার সড়কের কয়েক হাজার গাছ কাটার জন্য গাছের গায়ে নম্বর লিখে দরপত্র সম্পন্ন করেছেন বনবিভাগ, সেসব গাছ না কাটার জোড়ালো দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন নেটওয়ার্ক (বিসিএন)। উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়া থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত পাউবোর জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। সড়কে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর আগে কয়েক হাজার ফলদ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করেছিল উপজেলা বনবিভাগ। দরপত্রের মাধ্যমে ২০২৩ সালে যদুবয়রা থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। চলতি বছরেও ওই সড়কের লাহিনীপাড়া থেকে বাঁধবাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় তিন হাজার গাছ কাটা হয়েছে। উপজেলা বনবিভাগ কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, ১০ বছর পূর্ণ হলেই সমিতির নিয়ম অনুসারে গাছ কেটে পুনরায় নতুন চারা রোপণ করা হয়। ইতোমধ্যে ওই সড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকার গাছ কাটা হয়েছে। অন্যান্য গাছগুলো দরপত্রের মাধ্যমে কাটা হবে। তার ভাষ্যমতে, গাছ রক্ষার কোনো সুযোগ নাই। যেহেতু তাপদাহ চলছে, সেহেতু এই মুহূর্তে গাছগুলো থাকা ভালো বলে মনে করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি জানান, বনবিভাগের সঙ্গে আলাপ করে বিধিমতে কার্যকারী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।