শেরপুরে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কুতথ্য প্রতিরোধের অপরিহার্যতা শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ইনস্টি্িটউট ফর এনভায়রণমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) এ কর্মশালার আয়োজন করে।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) শহরের আয়সার ইন হোটেলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় জানানো হয়, কুতথ্য এবং ভুয়া খবরের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাবসহ আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। যার কারণে আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠেছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইইডি পরিচালিত এ সংক্রান্ত এক সমীক্ষার এক গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করে কর্মশালায় জানানো হয়, উন্নয়ন ও আধুনিক স্থাপনার নামে, নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা বলে হরহামেশাই চলে বনউজাড় ও বৃক্ষ নিধন। ব্যক্তি লোভ কিংবা ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে কুতথ্য ছড়িয়ে বৃক্ষ নিধনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এতে খাদ্য ও বাসস্থান সংকট, বনউজাড় করা, অপরিকল্পিত নগরায়নের মতো নানা কারণে প্রতি বছরই কোন না কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে। এজন্য কুতথ্যের মোকাবেলায় প্রকৃত ও সত্য তথ্যের প্রচারণা বাড়াতে হবে। তাই সচেতনতামুলক কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক অনুষ্ঠান সমূহে আরো বেশী বেশী প্রচার-প্রচারণা করতে হবে।
 কর্মশালায় আইইডি পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষক হাফিজ আদনান রিয়াদ। শেরপুরসহ দেশের বনাঞ্চল অধ্যুষিত ৬টি জেলায় বিভিন্ন শ্রেনী-পেশা, জাতি-ধর্ম, অঞ্চল ভেদে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী শতাধিক মানুষের ওপর এ সমীক্ষা জরিপটি পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়, শতকরা ২৮ জন জানলেও ৭৮ শতাংশ গুজবের ধারণা সম্পর্কে অবহিত নন। বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণী নিয়ে ছাড়ানো ৮৮ শতাংশ তথ্যই কুতথ্য, যা প্রথমে তারা সত্য বলে ধারণা করেছিলো, পরে সেটা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। ৯২ শতাংশ ভুতে বিশ্বাস করেন। যার মধ্যে ৭৫ শতাংশ মনে করেন ভুতের বসবাস গাছে এবং বনে। বন্যপ্রাণী হত্যার ৪৮ শতাংশ ঘটনা প্রকাশ্যে আসলেও  ৫২ শতাংশই থেকে যায় জানার বাইরে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৮ শতাংশ ইদুর, ৮২ শতাংশ সাপ এবং ৪৫ শতাংশ সবচেয়ে ক্ষতিকর বন্যপ্রাণী বলে মনে করে। কর্মশালায় জানানো হয়, আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংস্থা আইইউসিএন-এর ২০১৫ সালের গবেষণা প্রতিবেদন এর তথ্য মতে, ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত: ১৮ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দেশে এক হাজার ৬০০ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। তন্মধ্যে ৩৯০টি প্রজাতিই বিলুপ্তির হুমকির মুখে রয়েছে। আর বিলুপ্ত বিলুপ্ত প্রজাতির সংখ্যা হলো ৩১টি। আর ২০০০ সালের তথ্য অনুযায়ী বিলুপ্ত প্রাণীর সংখ্যা ছিলো ১৩টি। গ্রামাঞ্চলের, বনে-বাদাড়ে, গাছে, পুকুরে-নদীতে, মাঠে চড়ে বেড়ানো গুইসাপ, বেজী, ভোঁদড়. বানর, তক্ষক, শিয়াল, বনবিড়াল, মেছোবাঘ, উল্লুক, চিতাবাঘ, ঘড়িয়াল, শুশুক দেখতে পাওয়া যেতো। যা এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে। গ্রামাঞ্চলে কবিরাজী যৌনশক্তি বর্ধক, হাপানির ওষুধ, তাবিজ কবজ তৈরীর জন্য নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে গুইসাপ। অধিক মুল্যবান ও দামী ওষুধ তৈরীর গুজব ছড়িয়ে এক শ্রেণীর লোক রাতারাতি ধনী হওয়ার স্বপ্নে তক্ষক শিকারে উৎসাহিত হচ্ছে। অসাধু ব্যক্তিরা সরল মানুষকে ঠকাতে এসব কুতথ্য ছড়াচ্ছে। যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এভাবে বন্যহাতির আবাসস্থল ধ্বংস করে জনবসতি গড়ে তোলায় বনাঞ্চলে হাতি-মানুষের দ্ব›দ্ব বাড়ছে। ভুল তথ্যের মাধ্যমে বন্যহাতিকে হত্যা করা হচ্ছে। তাছাড়া সঠিক তথ্য না জানার কারণে কুতথ্যের প্রভাবে সাপ, বেজি, শিয়াল সহ বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী দেখলেই তাদেরকে পিটিয়ে হত্যা করা সহ নানাভাবে উত্যক্ত করা হয়ে থাকে।
অনুষ্ঠানে শেরপুর সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) ইফফাত জাহান তুলি প্রধান অতিথি এবং সদর থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম শফিক বিশেষ অতিথি ছিলেন। সাংবাদিক হাকিম বাবুলের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মাঝে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান, জেলা তথ্য কর্মকর্তা ইব্রাহিম মোল্লা সুমন, প্রকৃতিপ্রেমী সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল কাদের, জেলা বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার, রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম। জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, প্রকৃতিপ্রেমী, সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মী, ইআরটি সদস্য সহ অংশীজনরা অংশগ্রহণ করেন।