দরিদ্রতা স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হলেও আটকাতে পারেনি নওগাঁর আব্দুর রহমানকে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন আব্দুর রহমান। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে তার ভর্তি হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। নওগাঁর সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুর সালাম এতদিন ছেলে আব্দুর রহমানের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন খুবই কষ্ট করে। যৎসামান্য কৃষি জমি থেকে স্বল্প আয় দিয়ে ছয় সদস্যের পরিবারের সংসার চালানোর পাশাপাশি আব্দুর রহমানের পড়ার খরচ চালিয়ে আসছেন আব্দুর সালাম। পরিবারে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে আব্দুর রহমান দ্বিতীয়। আব্দুর রহমান উপজেলার আল-হেলাল ইসলামী একাডেমি অ্যান্ড কলেজ থেকে জেএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর রাজশাহী নিউ গভর্মেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে আব্দুর রহমান এইচএসসিতেও এ প্লাস পান। আব্দুর রহমান বলেন, আমার বাবার তেমন কোনো সম্পদ নেই। দাদার কাছ থেকে দেড় বিঘা জমি পেয়েছেন বাবা। সেই জমিতে চাষাবাদ করে কোনরকমে সংসার এবং আমার লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। বাবা-মায়ের স্বপ্ন, আমি একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করব। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগের মধ্যদিয়ে সেই স্বপ্নের দুয়ার খুললেও অর্থ সংকটের কারণে আমার পরিবার দুশ্চিন্তায় পড়েছে। তিনি আরও বলেন, চলতি মাসের ২৭ তারিখ ভর্তির সময় দিয়েছে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। জানি না অল্প সময়ের মধ্যে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান কীভাবে দেবে আমার পরিবার। আব্দুর রহমানের বাবা বলেন, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। তিনি আমার ছেলেকে ডাক্তার হওয়ার একটি সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি গরীব মানুষ, যৎসামান্য জমিতে চাষাবাদ ও কৃষি কাজ করে সংসার এবং ছেলের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে আসছি। এখন ছেলেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে হবে। ভর্তির জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা করা আমার জন্য খুবই কঠিন হবে। তাই আল্লাহর উপর ভরসা করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। আল-হেলাল ইসলামী একাডেমি অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর আলম বলেন, আব্দুর রহমান খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী। সে অত্র বিদ্যালয় থেকে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে আব্দুর রহমান মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তার এই কৃতিত্বে আমরা গর্বিত। আব্দুর রহমান একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে দেশ ও জাতীর কল্যাণে অবদান রাখবে বলে আশা করছি। তার মেডিকালে ভর্তি বিষয়ে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মেডিকেলে ভর্তির বিষয়ে আব্দুর রহমানের পরিবার যদি কোনো রকম কোনো সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করে, তা যাচাই করে সরকারি সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।