বুধবার , ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শেরপুরে হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীদের ভাষা

প্রকাশিত হয়েছে -

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে শেরপুরের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা ও সংস্কৃতি। নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজ ভাষায় কথা বললেও সময়ের সাথে সাথে তাও বিলুপ্তির পথে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনসহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে সীমান্তবর্তী এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। কিন্তু হাজার বছরের এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় নেই কোন বিশেষ উদ্যোগ ও প্রতিষ্ঠান। এদিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিজ ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য কালচারাল একাডেমী প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা বলছেন জেলা প্রশাসন।

গারো পাহাড় অধ্যুষিত সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলা। জেলার ৫ উপজেলা জুড়ে রয়েছে গারো, হাজং, কোচ, বর্মণ, হদি, ডালু, বানাই ও মারগান সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাস। প্রতিটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। কিন্তু আদিবাসীদের ভাষা ও সংষ্কৃতি চর্চা ও রক্ষায় নেই কোন পুস্তক ও প্রতিষ্ঠান। তাই সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে এসব ভাষা ও সংস্কৃতি। ইতোমধ্যে ডালু ও বানাইসহ বেশকিছু সম্প্রদায়ের ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

নালিতাবাড়ি ৬নং কাকরকান্দি ইউপির মহিলা সদস্য সুরেশা দেবী শেরপুর টাইমসকে বলেন, ছোট বেলায় বাপ দাদার মুখে ডালু ভাষায় গান ও কথা শুনলেও তা আর এখন প্রচলিত নেই।

Advertisements

এদিকে আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য নেই কোন বিশেষ ভাষাভাষী স্কুল, চাকুরীক্ষেত্রেও রয়েছে নানা বিড়ম্বনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডালু সম্প্রদায়ের মহিলা জানান, আংগো ডালু ভাষার কোন স্কুল নাই, বই নাই। কষ্ট কইরা পড়ালেহা করলেও পুলাপান কুনো চাহরী পায় না। আমগো কেউ খুঁজ খবর নেয় না।

বিলুপ্তপ্রায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অদিবাসী ভাষা শিক্ষার বই সরবরাহসহ আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগের দাবী জানেিয়ছেন আদিবাসী নেতারা । নালিতাবাড়ি উপজেলার আদিবাসী নেতা প্রশান্ত ডালু বলেন, সরকার যদি আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় এগিয়ে এসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই প্রণয়ন ও শিক্ষক নিয়োগ করে তাহলেই এই ভাষাগুলো হারাবে না। এতে করে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদেও সম্পর্কে জানতে পারবে।

এনজিও আইইডি এর পরিসংখ্যানে, বর্তমানে শেরপুর জেলায় গারো ১৫ হাজার, হাজং ৪হাজার, হদি ১২শ, বর্মণ ১২ হাজার, কোচ ৫ হাজার, ডালু ১১শ ৭৫ জন বাস করছেন এবং বানাই ও মারগান সম্প্রদায় ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এইসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার দাবী জানালেন আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করা আইইডি’র স্থানীয় কর্মকর্তা ও আইপি ফেলো সুমন্ত বর্মণ।

তিনি শেরপুর টাইমসকে বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে এই নৃগোষ্ঠীদের ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। কিন্তু এদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় সরকারের তেমন কোন উদ্যোগ নেই। এই বিলুপ্তপ্রায় ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় এ সীমান্ত জেলায় দ্রুত একটি কালচারাল একাডেমী স্থাপন করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাই।

এদিকে শেরপুরের বিলুপ্তপ্রায় ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীদেও ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন শেরপুর টাইমসকে বলেন, সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীদের নিজস্ব সংস্কৃতি সবার কাছে তুলে ধরতে শেরপুরের পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সেই সাথে তাদের নিজ ভাষায় পাঠ্য পুস্তক প্রণয়ন ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য কালচারাল একাডেমীর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

হাজারো বছরের বাংলা সংস্কৃতির অনেকটা জুড়ে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অংশগ্রহণ। তাই সময়ের সাথে যাতে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে না যায়, এব্যপারে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ চায় শেরপুরের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা।