এর আগে, শওকত আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, শ্রাবণ প্রকাশনী, বাংলাদেশ লেখক শিবির, গল্প পত্তিকা বয়ান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, সাংবাদিক সমিতি রংপুর বিভাগ, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ঐক্য, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ফ্রন্ট, আসাদ পরিষদ, জাতীয় গণফ্রন্ট, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, জাতীয় গণসাংস্কৃতিক ফ্রন্ট, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণসাংস্কৃতিক ফ্রন্ট, কণ্ঠশীলনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন।
.পাঠক-ভক্ত-অনুরাগী, কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে বিদায় নিলেন শক্তিমান কথাসাহিত্যিক শওকত আলী। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাকে শেষ বিদায় দিতে নেমেছিল মানুষের ঢল। মানুষ আর ইতিহাসের আখ্যান তুলে আনা এই লেখককে শেষবারের মতো বিদায় দিতে এসে তাদের চোখে ছিল অশ্রুর ধারা।
রক্তে সংক্রমণজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া শওকত আলী আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। তার মৃত্যুতে দেশের সাহিত্য অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। দুপুর ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে তার মরদেহ নেওয়া হয় তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
কথাসাহিত্যিক শওকত আলী’র প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম। তিনি স্মৃতিচারণ করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও একটি বিষয়কে পরিবর্তন করতে হলে অস্থির হলে চলবে না— তার মধ্যে এই আদর্শ ছিল। তিনি সবকিছুকে দার্শনিকভাবে চিন্তা করতেন। অত্যন্ত স্বচ্ছ দৃষ্টিতে জীবনটাকে দেখতেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি সবার মাঝে অমর হয়ে থাকবেন।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘একজন অসামান্য সাহিত্যিকের দেহাবসান ঘটলো। কিন্তু লেখনীর মাধ্যমে তিনি আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবেন। তিনি গণমানুষের জীবন নিয়ে লিখে গেছেন। সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস এই লেখকের জীবনের আদর্শবোধ তার লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘তিনি কোন ধরনের মানুষ ছিলেন, তা তার লেখা থেকেই বোঝা যায়। তিনি আমাদের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবেন। তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একজন কথাসাহিত্যিক ছিলেন শওকত ওসমান। সাধারণ মানুষের মুক্তি পাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা, তা তার লেখনীর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। আশা করি, তার উত্তরসূরী তরুণরা সেই আদর্শকে ধারণ করবেন।’
বৃহস্পতিবার বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে শওকত আলীর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তার পূর্ব ইচ্ছা অনুযায়ী জুরাইনে স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত করা হবে।
শওকত আলীর লেখা পাঠকনন্দিত উপন্যাসের তালিকায় রয়েছে ‘যাত্রা’, ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’, ‘দক্ষিণায়নের দিন’, ‘কুলায় কালস্রোত’, ‘পূর্বরাত্রি পূর্বদিন’, ‘উত্তরের খেপ’, ‘ওয়ারিশ’, ‘পিঙ্গল আকাশ’, ‘জননী ও জাতিকা’ প্রভৃতি। এর মধ্যে ‘উত্তরের খেপ’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।
১৯৫৮ সালে এমএ পাস করে দিনাজপুরের একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ১৯৫৯ সালের শেষের দিকে ঠাকুরগাঁও কলেজে বাংলার শিক্ষক হন গুণী মানুষটি।