রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

শেরপুর এখন ইজি বাইকে বিজি শহর ,নজর নেই কর্তৃপক্ষের

প্রকাশিত হয়েছে -

শেরপুর এখন ইজি বাইকে বিজি শহরে পরিণত হয়েছে। একদিকে নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে অবৈধ ব্যাটারি চালিত ইজি বাইকের বেপরোয়া চলাচল, অপরদিকে প্রধান সড়কের ফুটপাত দখল করে মালামাল উঠানামা ও বিভিন্ন মোড়ে ইজি বাইকের মিনি স্ট্যান্ড স্থাপন করার ফলে শহরে ভয়াবহ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কে চলাচলকারীরা ।

পৌর কৃর্তপক্ষ বলছেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া যানজট দূর করা সম্ভব না অন্যদিকে বিভিন্ন বিভাগের সাথে সমন্নয় করে তা নিরসনের পথ খুজছেন জেলা প্রশাসন।

শেরপুর পৌরসভার কর আদায় ও প্রকৌশল শাখার দেয়া তথ্য মতে, পৌরসভার আওতাধীন ৮৫ কি:মি: পাকা ও ৩১ কি:মি: কাঁচা সড়কে পনেরশ ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক চলাচলের অনুমোদন দেয় জেলা প্রশাসন। তবে এখন পর্যন্ত পৌরকর্তৃপক্ষ লাইন্সেস প্রদান করেছে ১২শ ৬৬টি । শহরের আকৃতি ছোট হওয়ার কারণে যেখানে সর্বোচ্চ ২শ’ ইজি বাইক চলাচল করতে পারে, সেখানে বেসরকারী কয়েকটি সংস্থার দেয়া তথ্য মতে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার ইজি বাইক শহরে প্রবেশ করছে।

Advertisements

আর এদের বেশীর ভাগই অনুমোদনহীন। চালকেরাও প্রায় অদক্ষ। তাই হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। শহরে অধিকমাত্রায় ইজি বাইক চলাচল করা ও যেখানে সেখানে যাত্রী ও মালামাল উঠানামা এবং বিভিন্ন মোড়ে ইজি বাইকের মিনি স্ট্যান্ড স্থাপন করার ফলে শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে আছে শহরবাসী ।

এ থেকে পরিত্রাণ চায় শহরবাসী, শহরের খোয়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা নাইম ইসলাম বলেন, শেরপুর এখন যানজটের শহর,সকাল ১১ টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত শহরে যানজটের জন্য শহরে প্রবেশ করাই দায় হয়ে যায়। এমন অবস্থা চললে আমাদের কাজকর্ম বন্ধ করে ঘরে বসে থাকতে হবে।

শহরের নিউমার্কেটের তৈরী কাপড় ব্যবসায়ী মনা জানান, প্রতিদিন বাসা থেকে যেখানে ১০ মিনিটে আমার দোকানে আসার কথা সেখানে আমার বাসা থেকে দোকানে আসতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘন্টা । শুধুমাত্র অটো জ্যামের কারণে এই অবস্থা ।

ইজি বাইকের যানজটের কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটছে হরহামেশায়, বিপ্লব লোপা মেমোরিয়াল একাডেমির শিক্ষার্থী সাইকা সাম্মা জানান, ১০ টায় স্কুল টাইম হলেও যানজটের কারণে বাসা থেকে বের হতে হয় সকাল ৮ টায়। এভাবে প্রতিদিন আমাদের প্রচুর সময় নস্ট নয় । কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী শহরে যানজটের জন্য দায়ী অবৈধ অটোরিক্সা তথা ইজিবাইক গুলোকে নিয়ন্ত্রন করা হোক।

কলেজ শিক্ষার্থী অন্তরা বলেন , শহরে যেভাবে যানজট বাড়ছে ,তাতে করে চলাফেরা করাই এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এদিকে অদক্ষ চালকের কারনে দূর্ঘটনা বাড়ছে অন্যদিকে জটের কারণে প্রচুর কর্মঘন্টা অপচয় হচ্ছে । আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে দ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহন করবেন।

শহরের এমন যনজটের জনদূর্ভোগে কি করণীয় এমন প্রশ্নের জবাবে নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করে পরিকল্পনা মাফিক নীতিমালা তৈরী করার তাগিদ দিয়ে শেরপুর টাইমসকে বলেন যতদ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে নইলে শহরের যে অবস্থা হচ্ছে তাতে ভয়াবহ রুপ ধারণ করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন শেরপুর টাইমসকে জানান, আমাদের জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে এক হাজার পাচঁশত যানের লাইন্সেস দেয়ার অনুমতি আছে তবে আমরা লাইন্সেস দিয়েছি মাত্র ১ হাজার ২শ ৬৬ টি । এখানে আমরা নিয়মের বাইরে যাইনি । সে সময় শহরের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে তাকে অবহিত করা হলে তিনি জানান বার বার আইনশৃংখলা কমিটিতে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন সমাধানের জন্য কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া যানজট দূর করা সম্ভব না বলে তিনি জানান।

তবে এ বিষয়ে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আমিনুল ইসলাম শেরপুর টাইমসকে জানান, শহর যানযটমুক্ত রাখতে নিয়মিত লাইন্সেসবিহীন ইজিবাইক আটক করা হচ্ছে । আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এদিকে যানজটের ভয়াবহ দূর্ভোগের কথা স্বিকার করে চলতি মাসেই যানজট নিরসনে পরিক্ষামূলক প্রদক্ষেপ গ্রহন করার কথা জানালেন জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন। তিনি জানালেন,শহরবাসী যদি আমাদের সহযোগিতা করে তবে অফিস টাইম আমরা শহরে অটোরিক্সা প্রবেশ করতে দিবনা। পাশাপাশি জনসাধরনকেও কম দুরত্বের পথে পায়ে হেটে যাওয়ার অনুরোধ করবো। তাতে করে শহরে যানজট কমবে এবং শহরবাসীও শান্তিতে থাকবে।

স্ব স্ব কর্তৃপক্ষ শহরে যানজট নিরসনে নজর দিবেন এমনটিই প্রত্যাশা শহরবাসীর।