রবিবার , ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সফল জননী নারী আনোয়ারা বেগম

প্রকাশিত হয়েছে -

বিয়ের ৭ বছর পরেই ১৯৯১ সালে স্বামীকে হারান আনোয়ারা বেগম। স্বামীকে হারানোর পর ৩ সন্তান নিয়ে দুঃস্বপ্নের মতো পথচলা শুরু করেন তিনি। নিজেও জানতেন না এ পথের শেষ কোথায়। সন্তানদের মধ্যেই সমস্ত সুখের ছাঁয়া খুঁজেছেন তিনি। নিজের সুখের কথা একবারও ভাবেননি। তাই আর দ্বিতীয় বিয়েও করেননি। একটার পর একটা লড়াই করেছেন তিনি। টাকা-পয়সা সংগ্রহের লড়াই, সন্তানদের মানুষ করার লড়াই। স্বামীর মৃত্যুর পর কোন আর্থিক সঞ্চয় ছিল না তাঁর। কেবল মাথা গুঁজার একটি ৪ শতাংশের ছোট্ট ভিটে ছিল মাত্র। স্বামীর মৃত্যুর পূর্বেই বাবা মারা যাওয়ায় বাপের বাড়ি থেকেও সাহায্যের কোন সুযোগ ছিল না। তাই সন্তানদের পড়ালেখা করানোর জন্য টাকা-পয়সা সংগ্রহ করতে বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন, আঙ্গিনায় সবজি চাষ শুরু করেন। কারও সাহায্য না নিয়ে সন্তানদের শিক্ষিত করার লক্ষে বে-সরকারি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে নিজ বাড়িতে ক্ষুদ্র মুদি দোকান শুরু করেন। পাশাপাশি মেয়েদের কাপড়, ধান কিনে চাল তৈরী করে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রিও করেছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে অগ্নিকান্ডে বসতবাড়ীসহ সব পুড়ে যায়। তবুও তিনি ভেঙ্গে পড়েননি। বাড়ি পুরে যাবার পর মাটি কেটে সন্তানদের লেখাপড়ার যোগান দেন। গল্পটি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের কবিরাজপাড়া গ্রামের মৃত সালেহ মূসার স্ত্রী ‘সফল জননী নারী’ আনোয়ারা বেগমের। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস পালন উপলক্ষে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় ‘সফল জননী নারী’ ক্যাটাগরিতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সর্বশ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
২ ছেলে, ১ মেয়ের গর্বিত জননী আনোয়ারা বেগম। বড় ছেলে মো. আলমগীর হোসাইন শিক্ষকতা ও ছোট ছেলে মো. আনোয়ার হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনে এমইএস মিরপুরে (এসএই) পদে কর্মরত রয়েছেন। একমাত্র মেজো মেয়ে মারিয়াম সালওয়াকে এসএসসি পাশ ও ট্রেইলারিং শিখিয়ে চাকুরীজীবি ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তার ৩ সন্তানই নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত।

এ সম্মানে ভূষিত হওয়ায় আনোয়ারা বেগম শেরপুর টাইমসকে বলেন, প্রত্যেক মা’ই তাদের সন্তানদের নিঃশ্বার্থ ভাবে লালন-পালন করেন। কোন কিছু পাওয়ার স্বার্থে নয়। তবুও সরকার আমাকে যে সম্মানের যোগ্য মনে করেছে এ জন্য আমি অভিভূত ও কৃতজ্ঞ। আমি মনে করি এ সম্মান শুধু আমার একার নয়, দেশের সব মায়ের।

শেরপুর টাইমস/ বা.স

Advertisements