সোমবার , ১৭ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - বর্ষাকাল || ১০ই জিলহজ, ১৪৪৫ হিজরি

পৃথিবীর বৃহত্তম জলপ্রপাত নায়াগ্রা

প্রকাশিত হয়েছে -

পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু আছে, যা দেখে আমাদের মনে বিস্ময় জাগে। নায়াগ্রা জলপ্রপাত এদের মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত এটি। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নায়াগ্রা জলপ্রপাত প্রকৃতির এক মহাবিস্ময়। এই জলপ্রপাতের নাম শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ভ্রমণ পিপাসু সকল প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের কাছে নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি একটি রোমাঞ্চকর স্থান।

এখানে গেলে যে কারো মনে হতে পারে এই বুঝি আকাশ ভেঙ্গে জগতের সব বৃষ্টি দানব আকার ধারন করে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ছে। ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ যেমন আজ  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিচিতির চিহ্ন, ঠিক তেমনি ২৮ অক্টোবর ১৮৮৬ সালের আগে নায়াগ্রাই ছিল এখানকার প্রধান আকর্ষণ। নায়াগ্রা জলপ্রপাত নিয়ে কিছু মজার আর বিস্ময়কর তথ্য নিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের লেখাটি।

পরিচিতি-

Advertisements

নায়াগ্রা জলপ্রপাত (ইংরেজি: Niagra Falls) উত্তর আমেরিকার নায়াগ্রা নদীর উপর অবস্থিত। মূলত তিনটি পাশাপাশি অবস্থিত ভিন্ন জলপ্রপাত নিয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাত গঠিত। এই তিনটি জলপ্রপাতের নাম: হর্স্শু ফল্স বা কানাডা ফল্স, আমেরিকান ফল্স এবং ব্রাইডাল ভিল ফল্স। নায়াগ্রা জলপ্রপাত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। হর্স্শু ফল্স এর আকার ঘোড়ার খুড়ের মতো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান।Onguiaahra শব্দ থেকে নায়াগ্রা কথাটির উৎপত্তি যার অর্থ জলরাশির বজ্রধ্বনি।১৮শতকের দিকে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়। ১৮৪৮ সালের মার্চ মাসে বরফের কারনে নায়াগ্রা জলপ্রপাত বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো,৪০ ঘন্টা পর্যন্ত কোনো পানি পড়েনি। ফলে জলবিদ্যুৎ কারখানার চাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো,বিদ্যুতের অভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
আমেরিকাতে জলপ্রপাতটি পিছন থেকে দেখতে হয়। কানাডাতে সরাসরি সামনে থেকে দেখা যায় ফলে সম্পুর্ন জলপ্রপাত ভালোমত দেখা যায়বসন্তের শেষের দিকে বা গ্রীষ্মকালের শুরুতে জলপ্রপাত গুলো থেকে সেকেন্ডে ২০২,০০০০ ঘন মিটার পানি পতিত হয়। হর্স্শু ফলসে অবস্থিত বিশেষ গেটের সাহায্যে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করে জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। রাতে এবং শীতকালে পর্যটকহীন মৌসুমে পানি নিয়ন্ত্রণ করে সেকেন্ডে ৫০,০০০ ঘনফুটে নামিয়ে আনা হয়। ১৯৫০ সালের নায়াগ্রা চুক্তি অনুযায়ী পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

নায়াগ্রার উৎপত্তি:
Onguiaahra শব্দ থেকে নায়াগ্রা কথাটির উৎপত্তি যার অর্থ জলরাশির বজ্রধ্বনি। অনুমান করা হয়, আজ থেকে প্রায় দশ হাজার নয়শ বছর আগে এই জলপ্রপাতকে প্রথম চিহ্নিত করা হয়েছিল।দেশীয় আমেরিকাবাসীরা সম্ভবত এই জলপ্রপাত দর্শনকারী প্রথম মানুষ ছিলেন। যদিও এই জলপ্রপাতটির সম্পর্কে লিখিত আকারে উল্লেখিত প্রথম ইউরোপীয় ব্যাক্তিটি ছিলেন ‘ফাদার ল্যুইস হেনেপিন’। এই ফরাসি যাজক তাঁর “আ নিউ ডিসকভারি” নামক পুস্তকে এটির বর্ণনা করেছিলেন।উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী জলপ্রপাত এটি। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের তিন ভাগের এক ভাগ আমেরিকায়। এর নাম ‘আমেরিকান ফলস’। বাকি দুই ভাগ কানাডায়। যার নাম ‘কানাডিয়ান ফলস’। এটার আকার অনেকটা ঘোড়ার খুরের মতো বাঁকা। জলপ্রপাতটি মূলত তিনটি জলপ্রপাতের সমষ্টি। সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতটির নাম হলো হর্সশু ফলস বা কানাডা ফলস। এটি প্রায় ১৬৭ ফুট উঁচু থেকে ২৬০০ ফুট চওড়া পানির স্রোত নিয়ে নিচে আছড়ে পড়ে। বলা হয় নায়াগ্রা জলপ্রপাতের প্রায় ৯০ ভাগ পানি এই ফলস দিয়েই পতিত হয়। এর পরের ফলসটির নাম আমেরিকান ফলস। এটি প্রায় ৭০ ফুট উঁচু এবং ১৬০০ ফুট চওড়া। অন্যটির নাম ব্রাইডল ভেইল ফলস।

নায়াগ্রা ইতিহাস:
নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উৎপত্তির ইতিহাসটা বেশ মজার। নায়াগ্রা নদীটি প্রায় ১২০০ বছরের পুরনো। এরও আগে ১৮০০ বছর পূর্বে ওন্টারিওর দক্ষিণে প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার বরফে ঢাকা ছিল। সময়ের সাথে সাথে আর নিয়মিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় পরিবর্তনের ফলে গলতে শুরু করে বরফ। আর গ্রেট লেকস বেসিনে প্রচুর পানি জমতে থাকে এবং লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী আর লেক ওন্টারিও থেকে আসা পানি মিলে এই বিশাল জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।

নায়াগ্রা উদ্যানে অবাক কাণ্ড:
জলপ্রপাতের দিকে তাকালে একদিকে যেমন ভয়ে আপনার বুক কেঁপে উঠে তেমনি কিছুতেই এর মোহময় আকর্ষণকে আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। এই আকর্ষণই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষকে টেনে আনে নায়াগ্রাকে ছুঁয়ে দেখার কিংবা তার উপর হেঁটে যাওয়ার এক অদম্য বাসনাকে। ১৮২৯ সালের অক্টোবরের দিকে ‘স্যামপেচ’ নামের এক দুঃসাহসী অভিযাত্রী ঝাঁপ দিয়েছিলেন নায়াগ্রায়। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ঝাঁপ দেয়ার পরও এই ভদ্রলোক কিন্তু বেঁচে গিয়েছিলেন।

স্যামের এই অদ্ভুত কাণ্ড আরও অনেক মানুষকে দু:সাহসী করে তোলে। কেউ দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে ভয়ংকর এই জলপ্রপাত পার হয়েছেন, কেউ নিজেদের একটা ব্যারেলে ভরে নিয়ে ভেসে গিয়েছেন জলপ্রপাতের উত্তাল জলস্রোতের মধ্যে, ব্যারেলসুদ্ধ আছড়ে পড়েছেন ১৬৭ ফিট উচ্চতা থেকে। এদের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ফাঁনামবুলিস্ট’।১৮৫৯ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত এরকম উপায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নায়াগ্রা পার হওয়া একটা নেশায় পরিণত হয়েছিল। মার্কিন গৃহযুদ্ধের কয়েকটা বছর পর এই খেলা বন্ধ হয়ে যায়।

শক্তির এক অন্যতম উৎস:
শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, নায়াগ্রার পানির স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। প্রতিদিন  প্রতি মিনিটে নায়াগ্রা জলপ্রপাত 60 লক্ষ ঘনফুট মাত্রাধিক জল প্রবাহিত করে। যার গড় পরিমাণ হল 40 লক্ষ ঘনফুট। নায়াগ্রা সমগ্র নিউইয়র্ক ও ওন্টারিও-র জলবিদ্যুৎ শক্তির এক অন্যতম প্রধান উৎস। অন্যান্য জলপ্রপাতগুলোর চেয়ে নায়াগ্রার স্রোত ঢের বেশি। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের এই স্রোতকে কাজে লাগিয়ে প্রতি বছর ব্যাপক পরিমাণে তড়িৎ শক্তিও উৎপাদন করা হয়।  নায়াগ্রা জলপ্রপাতে স্রোতের শব্দ এতটাই তীব্র যে, অন্য কোনো শব্দ, স্রোতের শব্দের কারণে কানে পৌঁছায় না।

অপার সৌন্দর্যের উৎস:
আমেরিকাতে জলপ্রপাতটি পিছন থেকে দেখতে হয়। কানাডাতে সরাসরি সামনে থেকে দেখা যায় ফলে সম্পূর্ণ জলপ্রপাত ভালোমত দেখা যায়।
রঙধনু দেখতে আকাশের দিকে তাকাতে হয় না এখানে। মুগ্ধ পর্যটকদের দৃষ্টির খুব কাছেই জলপ্রপাতের জলরাশিতেই রঙধনু যেন নিজেই এসে ধরা দেয়।

সম্পাদনা: এম. সুরুজ্জামান, বার্তা সম্পাদক, শেরপুর টাইমস ডটকম।