রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

আমেরিকা প্রবাসী হত্যার রহস্য উদঘাটন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৬

প্রকাশিত হয়েছে -

শেরপুরে আব্দুল হালিম জীবন (৪৮) নামে এক আমেরিকা প্রবাসীকে হত্যার ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক সাবেক ইউপি চেয়াম্যান ও ২ নারীসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ (৪৫), একই ইউনিয়নের ডাকপাড়া গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে মোবারক মোস্তাক (৩২), আফিল উদ্দিনের ছেলে রকিব হোসেন জিহাদ (২০) ও হযরত আলীর ছেলে কালু মিয়া (২৫), শহরের পূর্বশেরী এলাকায় ভাড়ায় বসবাসকারী ফারুক আহাম্মেদের স্ত্রী রুপা বেগম (২৮) এবং কান্দাশেরীচর এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪০)। এদের মধ্যে জিহাদ ও কালু হত্যার সময় ধস্তাধস্তিতে আহত হয়। তারা বর্তমানে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান শেরপুরের পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম পিপিএম। সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার জানান, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী দ্বৈত নাগরিক আব্দুল হালিম জীবনকে হত্যার মূল কারণ পারিবারিক বিরোধ। জীবন দীর্ঘ ২৫ বছর আমেরিকায় বসবাস করে ২ বছর পূর্বে বাংলাদেশে এসে নিঃসন্তান হওয়ায় আরও একটি বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ে ও জমিজমা নিয়ে তার পিতামাতার সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধের জের ধরে জীবনের পিতা তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করে এবং জীবন ও তার স্ত্রী পিতা সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে ২ টি মামলা করে। একটি মামলায় তার পিতা দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস কারাভোগ করে এক সপ্তাহ পূর্বে জামিনে আসে। এসব বিরোধের জের ধরে জীবনের প্রবাসী এক ভাইয়ের বন্ধু শাহিনকে দিয়ে জীবনকে শায়েস্তা করার জন্য বললে শাহিন তার ব্যবসায়ী পার্টনার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে দিয়ে পরিকল্পনা করে।

Advertisements

মনোয়ারা বেগম ও রুপা বেগম নামে ২ মহিলাকে দিয়ে ফাঁদ পেতে ৩০ মার্চ সাড়ে ৩টার দিকে জীবনকে কৌশলে ডেকে নিয়ে সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ব্যাঙের মোড় এলাকায় আব্দুর রউফের সাঙ্গপাঙ্গ কালু, ময়নাল, জিহাদ, মোবারকদের হাতে তুলে দেয়। পরে তারা জীবনকে অপহরণ করে দুর্গম চরের একটি ঘরে আটকে রেখে রাত ৯টার দিকে তার ফোন থেকেই স্ত্রী আতিয়া আক্তারের কাছে ফোন করে ৯৩ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি অপহরণের নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে তারা জীবনকে পার্শ্ববর্তী চুনিয়ারচর এলাকায়  ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে মারপিট ও ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যা ও মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এসময় ধস্তাধস্তিতে কালু ও জিহাদ আহত হয়।

তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত মাস্টারমাইন্ড আব্দুর রউফসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার এবং ৯ জনের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তদন্তে আসামি সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

এই সাংবাদিক সম্মেলনে শেপেুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. খোরশেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাইদুর রহমান, ডিআইও- ১ জাহাঙ্গীর আলম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হকসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা ও প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ উজ্জলসহ জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ৩১ মার্চ রবিবার ভোররাতে শেরপুর সদরের চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা চুনিয়ারচর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী আব্দুল হালিম জীবনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জীবন শহরের মধ্য নওহাটা এলাকার সাইদুর রহমান সুরুজ মাস্টারের ছেলে।