সোমবার , ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৪ঠা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না খেজুর

প্রকাশিত হয়েছে -

কয়েক মাস ধরেই খেজুরের বাজারে চরম নৈরাজ্য চলছে। তাই রোজা শুরুর এক দিন আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অতি সাধারণ বা নিম্নমানের খেজুরের দাম ১৫০-১৬৫ টাকা ও অতি পরিচিত জাহিদি খেজুর ১৭০-১৮০ টাকা। কিন্তু রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহম্মদপুরের টাউন হল বাজার এমনকি কোনো ফুটপাতেও এসব খেজুর পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কোনো কোনো বাজারে জাহিদি খেজুর পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি। তা ২৮০-৩০০ টাকা কেজি। বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কেজিতে ১০০ টাকা বা ৫৫ শতাংশ বেশি দাম। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে কেনা। তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সূত্র বলছে, সারা বছরে খেজুরের চাহিদা এক লাখ টনের মতো। মাসে ৫ হাজার টন লাগলেও রমজানে ইফতারির জন্য ১০ গুণ বেশি অর্থাৎ ৫০ হাজার টন লাগে। অন্য বছরে দাম কম থাকলেও এবার দাম অনেক বেড়ে গেছে। এ নিয়ে হইচই পড়লে দাম কমানোর জন্য সরকার শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু তা আশানুরূপ না হওয়ায় খেজুরের দাম কমছে না বলে আমদানিকারকরা জানান। কেজিভেদে ১০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজার খুবই চড়া হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয় রমজানের আগের দিন।

দাম সহনীয় করতে গত সোমবার এই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফুয়ারা খাতুনের সই করা সার্কুলারে বলা হয়েছে, দেশে আমদানি করা বিভিন্ন মানের খেজুরের আমদানি মূল্য, আরোপিত শুল্ক, কর ও আমদানিকারকদের অন্যান্য খরচ বিশ্লেষণ করে খেজুরের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

দুই ধরনের খেজুরের মধ্যে খুচরা বাজারে অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের কেজিপ্রতি দাম ১৫০-১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাহিদি খেজুর প্রতি কেজি ১৭০-১৮০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে এই দামে খেজুর বিক্রি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে সার্কুলারে।

Advertisements

কিন্তু কে শোনে কার কথা। গতকাল বুধবার রাজধানীর টাউন হল, কারওয়ান বাজার, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে গেলে দেখা গেছে, অনেক দোকানে সাধারণ মানের ও জাহিদি খেজুর নেই। এমনকি ফুটপাতেও পাওয়া যায় না এগুলো। তবে কোনো কোনো দোকানে জাহিদি খেজুর পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার খুচরা বাজারের জন্য যে দাম বেঁধে দিয়েছে, পাইকারি বাজারেই সেই দামে কিনতে হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর ফল বিতানের বিক্রেতা নূর ইসলাম জানান, খেজুরের দাম এবার গত বছরের চেয়ে অনেক বেড়েছে। প্রতিবছরই রোজার সামনে খেজুরের দাম কিছুটা বাড়ে। তবে এ বছর দাম বেড়েছে অতিরিক্ত। বেশি ভালো ও মধ্যম মানের খেজুরের দামই বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ১৫-২০ দিন আগেই বেড়েছে দাম। সরকার সাধারণ খেজুরের দাম বেঁধে দিলেও সেটা রাখি না। তবে সবচেয়ে কম দামের জাহিদি খেজুর আছে ২৮০ টাকা কেজি। সেটা আগে ২৪০-২৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। ১৫ দিনের ব্যবধানে এটার দাম বাড়লেও ভালো মানের খেজুরের দাম বাড়েনি। আগের মতোই মরিয়ম খেজুর ৯০০ টাকা, আজওয়া ১ হাজার ২০০ ও মেডজুল ১২০০-১৪০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। অন্য ফল ব্যবসায়ীরা জানান, কম দামের খেজুর নেই। ভালো মানেরটা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

সরকার সাধারণ খেজুরের দাম বেঁধে দিলেও দোকানে পাওয়া যায় না। এমনকি বাজারের পাশে ফুটপাতেও পাওয়া যায় না। ফার্মগেট বাজারের ফুটপাতে কথা হয় খোকন ও তারেকের সঙ্গে। তারা এই প্রতিবেদককে জানান, কম দামের খেজুর রাখা ঝামেলা। গত বছর ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এবার বাদামতলী মোকামেই ১৮০ টাকা কেজি। রাস্তার খরচ আছে। আঠার মতো হাতে লেগে যায়। তাই আনি না। রাখি না। বিক্রিও করি না। এমনকি জাহিদিও নেই। সবচেয়ে কম দামের বরই খেজুর ৫০০ গ্রাম বা হাফ কেজি ২৫০ টাকা। এর কমে কোনো খেজুর নেই।

সরকারের বেঁধে দেওয়া কম দামের খেজুর আছে কি না, জানতে চাইলে টাউন হল বাজারের হারুন বলেন, এটা নেই। রাখি না। মোকামে দাম বেশি। সবচেয়ে কম দামের বরই খেজুর আছে হাফ কেজি ২৫০ টাকা। এরপর তিউনিশিয়া কেজি ৭০০ টাকা, মরিয়ম ১২০০ টাকা। খিলগাঁও বাজারের হারেজও জানান, এই কম দামের খেজুর নেই। সবচেয়ে কম দামের খেজুর ৫০০ টাকা কেজি।

গতকাল সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের প্রতিবেদন দেখা যায়, ঢাকার বাজারে কেজিপ্রতি সাধারণ মানের খেজুরের দাম ২৮০-৪৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৫০-৪৫০ টাকা।

খেজুরের দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, রমজানের সময়ই খেজুরের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। জাতীয় রাজস্ব রোর্ড বেশি করে শুল্ক আরোপ করায় এবার প্রতি কেজিতে অনেক বেশি দাম বেড়েছে। ডলারের রেট ও বেশি শুল্ক আরোপের কারণে এই বাড়তি দাম। শুল্ক কমাতে সরকার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমলে নেয়নি।