রবিবার , ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৩রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সাংবাদিক নাদিম হত্যা: জামিনে বের হয়ে দলীয় অনুষ্ঠানে যুবলীগ নেতা

প্রকাশিত হয়েছে -


জামিনে বের হয়ে জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার দুই আসামি দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। গতকাল বকশীগঞ্জ যুবলীগের প্রস্তুতিমূলক সভায় যোগ দেন আসামি শামীম খন্দকার ও ইসমাঈল হোসেন স্বপন মন্ডল। এর মধ্যে শামীম সভা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সেই সভায় অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে বক্তব্য রাখেন ইসমাঈলও।

শামীম কশীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সদস্য। নাদিম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৯ নম্বর আসামি তিনি। আর যুবলীগ কর্মী ইসমাঈল হোসেন ৮ নম্বর আসামি। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। তারা দুইজনই ৬ সপ্তাহের জামিনে রয়েছেন।

একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি জামিনে বের হয়ে দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করাকে ভালোভাবে দেখছেন না জেলার সুধী সমাজসহ সাধারণ মানুষ। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

Advertisements

জানা যায়, শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বকশীগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সদস্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে উপজেলা যুবলীগ।

সেই সভার একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে নাদিম হত্যা মামলার আসামি শামীম খন্দকার ও ইসমাঈল হোসেন স্বপন মণ্ডলের উপস্থিতি দেখা যায়।

জানা গেছে, ওই সভা সঞ্চালনা করেন শামীম খন্দকার। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আগা সাইয়ুম। যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন পলাশের উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রস্তুতি সভা; এরপর বক্তব্য দেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। মাঠপর্যায়ে কর্মীদের কেন্দ্রীয় যুবলীগের দিকনির্দেশনা মোতাবেক কাজ করার আহ্বান জানান তারা।

এই সভায় বক্তব্য দেন আসামি ইসমাঈল হোসেনও।

চলতি বছরের ১৪ জুন রাতে বাড়ি ফেরার পথে জামালপুরের বকশীগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার হন বাংলা নিউজের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাবার হত্যা মামলার আসামিরা একে একে জামিনে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে। তারা আরও প্রভাবশালী হচ্ছে। এতে আমরা ভীতির মধ্যে আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা (আসামিরা) এসে কার সঙ্গে রাজনীতি করছে, এটি দেখলেই বোঝা যায় যে, তারা কার কথায় চলে আর আমার বাবার হত্যার পেছনে কারা ছিল।’

বিষয়টিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক রাজন্য রুহানি বলেন, ‘একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি জামিনে বের হয়ে এভাবে দলীয় কাজে অংশগ্রহণ করলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। বিষয়টি দুঃখজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি দলে আরও অনেক নেতাকর্মী থাকেন। সভা সঞ্চালনায় কেনো নাদিম হত্যা মামলার আসামিকে রাখা হবে? বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। আমরা চাই নাদিম হত্যা মামলার প্রকৃত আসামিদের বিচার হোক।’

এসব বিষয়ে শামীম খন্দকার মোবাইলে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি একজন দক্ষ সংগঠক, উচ্চশিক্ষিত। আমার বিরুদ্ধে লেখার আগে একটু ভেবেচিন্তে লিখতে হবে। আমাদের (সংগঠনের) গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যতক্ষণ পর্যন্ত আমি দোষী প্রমাণিত না হব ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে না। সবাই জানে আমি এর সঙ্গে জড়িত না।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘এখন যদি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তেল দেন, তাহলেতো মুশকিল। আপনি সেন্ট্রালে যোগাযোগ করেন।’

হত্যা মামলার একজন আসামিকে দিয়ে সরকার দলীয় একটি অঙ্গসংগঠনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনার করানোর কারণ জানতে চাইলে জামালপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি রাজন সাহা রাজু বলেন, ‘আমাদের বকশীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের কমিটি অনেক আগের। এই কমিটির আহ্বায়ক নেপাল চন্দ্র সাহা রাজনীতিতে সক্রিয় নন। একজন যুগ্ম আহ্বায়ক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আরেকজন দেশের বাইরে অবস্থান করায় উপজেলা যুবলীগের কমিটি তেমন সক্রিয় নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামিরা যদি যুবলীগের পদে থাকে তাহলে সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে সুপারিশ করব। তবে তারা যদি যুবলীগের কোনো পদে না থাকেন তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। তবুও আমি এই বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।’

চলতি বছরের ১৪ জুন রাতে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার হন বাংলা নিউজের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় ১৭ জুন নিহতের স্ত্রী মনিরা বেগম মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

মামলায় এখন পর্যন্ত এক নম্বর আসামি বাবুসহ ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে জামিনে রয়েছেন ৯ নম্বর আসামি শামীম খন্দকার ও ৮ নম্বর আসামি ইসমাঈল হোসেন স্বপন মণ্ডল। এখনও পলাতক রয়েছেন বাবুর ছেলে রিফাতসহ এজাহারভুক্ত আরও পাঁচ আসামি। মামলাটি এখন তদন্ত করছে সিআইডি।