শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

দুর্নীতি রোধেও শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি জরুরি

প্রকাশিত হয়েছে -

বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ পাচার হচ্ছে, তা কমবেশি সবারই জানা। পাচার যে মূলত রপ্তানির আড়ালেই হয়, তাও অনেকের ধারণায় ছিল। আর এতে দেশের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকশিল্পের কারও কারও যুক্ত থাকার কথাও শোনা যেত। এবার কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ এ রকম দুর্নীতির ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে। প্রায় তিনশ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়েছে। এদিকে এর মধ্যে সংসদে গণমাধ্যমে খবরের উদ্ধৃতি দিয়েই জাপার সংসদ সদস্য বিদেশে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর এক বিলিয়ন ডলার পাচারের ঘটনা নিয়ে সরকারি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এর আগে কানাডায় গড়ে ওঠা বেগমপাড়ার তথ্য থেকেও সন্দেহ দানা বেঁধেছিল অর্থপাচারের। দেশে খেলাপি ঋণ, খারাপ ঋণ বাড়ছে; বেড়ে চলেছে আর্থিক দুর্নীতি। এ অবস্থায় সরকারকে নড়েচড়ে বসতে হবে বলে আমাদের মনে হয়।

বাংলাদেশ মাত্র স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তীর্ণ হয়েছে। দেশের অর্থনীতির আকার বেড়েছে, অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট আর্থসামাজিক সূচকগুলোয় উন্নতি দৃষ্টিগ্রাহ্য। বিদেশি রাষ্ট্রশক্তি, বিশেষজ্ঞ ও সংস্থার কাছ থেকেও এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রশংসার বাক্যই শুনে আসছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের রোল মডেল হয়ে ওঠার পথেই রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের অর্থনীতির আকার তিন ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। কিন্তু যদি আর্থিক দুর্নীতি এত বেশি ও এত ব্যাপক হারে হতে থাকে, তা হলে আমাদের অগ্রযাত্রা যে ব্যাহত হবে- এতে সন্দেহ নেই। যেহেতু অর্থনীতির এ রূপান্তরের মূলে রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার, সেহেতু তাদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে অর্থনীতির ছিদ্রগুলো বন্ধ করার। অর্থাৎ আমরা চাইব, সম্প্রতি উদ্ঘাটিত অর্থপাচার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং সব অপরাধী আইনের আওতায় আসবে ও শাস্তি ভোগ করবে।

উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে একশ্রেণির মানুষ তার সুযোগ নিয়ে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারে তৎপর ছিল। সরকারও যেন কোনো কোনো ক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, আইনের প্রয়োগে শৈথিল্য প্রদর্শিত হয়েছে। আমরা মনে করি, উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে এবং সব খাতে উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে আইনের শাসনের পথে আরও দৃঢ়ভাবে চলতে হবে। জঙ্গি বা মাদকের ব্যাপারে যে ধরনের শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল ও হচ্ছে, আর্থিক দুর্নীতির ক্ষেত্রেও সেটিই কাম্য। আশা করি- প্রধানমন্ত্রী অর্থপাচার, রপ্তানি ও ব্যাংক খাতে কেলেঙ্কারিসহ সব ধরনের আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন। দেশের সম্পদ যাতে দেশেই থাকে, এখানেই বিনিয়োগ হয়- এটিই দেশবাসীর কামনা। দুর্নীতিবাজ যেখানেই থাকুক, তাদের দিন এবার শেষ হবে- এটিই সর্বসাধারণের প্রত্যাশা।

Advertisements