সোমবার , ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সামনে নারী এমপিকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

প্রকাশিত হয়েছে -


জামালপুরের ইসলামপুরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের উপস্থিতে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হোসনে আরাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ১৭ আগস্টে সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ ঘটনা ঘটে। তবে লাঞ্ছিতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।

রাত ১০টার দিকে হোসনে আরা নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয় না। আমি দলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সিরিজ বোমা হামলা দিবসের আলোচনা সভায় গিয়ে আমাকে দাওয়াত না দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাই। হঠাৎ করেই উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন তেড়ে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বলেন, তোকে দাওয়াত দিতে হবে কেন? একপর্যায়ে আমার গায়ে হাত তোলেন।’

হোসনে আরা বলেন, ‘এ সময় আনোয়ার হোসেনকে নিবৃত না করে টেবিল চাপড়িয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আমাকে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলেন।’ এর আগেও আনোয়ার তার ওপর হামলা করেছেন বলে জানান তিনি।

Advertisements

সংবাদ সম্মেলনে হোসনে আরা জানান, এ ঘটনায় তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দের কাছে অভিযোগ করবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সভায় উপস্থিত ইসলামপুর পৌর ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, ‘রাজনীতিতে একটা শিষ্টাচার ও সৌন্দর্য আছে, একটা নিয়ম-নীতি আছে। এর আগেও অনেক অনুষ্ঠানে নারী সংসদ সদস্য হোসনে আরাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তিনি নিজে থেকেই উপজেলা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানগুলোতে এসেছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদের সভায়ও দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কেন দাওয়াত দেওয়া হয়নি এ প্রশ্ন করলে, স্বাভাবিকভাবেই তার উত্তর দেওয়ার কথা সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের। কিন্তু তাদের উপস্থিতিতে তার কথার পাল্টা উত্তর দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক। তিনি তার সঙ্গে ঔদ্ধত্যমূলক আচরণ করেন। মানহানিকর কথা বলেন। সেই সঙ্গে তার গায়েও হাত দেন। এটা রাজনীতির শিষ্টাচার না। এতে একজন ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান, যারা একজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ও দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সভায় উপস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, হোসনে আরা এমপিকে সব সময় এড়িয়ে চলা হয়। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পক্ষের লোকজন এ কাজটা করেন। কর্মসূচিতে তাকে (হোসনে আরা) চিঠি দেওয়া হয় না। দাওয়াতও পৌঁছানো হয় না। আর গত রাতের কর্মসূচিতে নিজে থেকেই তিনি এসেছেন। দাওয়াতের ব্যপারে প্রশ্ন রাখতেই দ্বিতীয় সারির একজন নেতা এভাবে গালিগালাজ ও গায়ে হাত তোলার মতো দুঃসাহস কীভাবে পায়। সিনিয়র নেতাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন তারা।

অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, এমপি হোসনে আরাকে গালিগালাজ বা গায়ে হাত তুলিনি। এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি তার।

এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল হক খান দুলাল বলেন, ‘তিনি (হোসনে আরা) একজন এমপি। তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকলে তাকে দাওয়াত দিতে হবে কেন। তিনি বরাবরই তার বিরুদ্ধে এসব অসাংগঠনিক অযৌক্তিক অভিযোগ তুলেন। আজকেও তাই ঘটেছে। তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও কেউ গায়ে হাত তুলেনি। তার এসব অভিযোগ সঠিক নয়।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, তিনি সংসদ সদস্য হোসনে আরার মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।