মঙ্গলবার , ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১২ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সাংবাদিক নাদিম হত্যা: চাপে প্রধান আসামি পরিবর্তনের অভিযোগ মেয়ের

প্রকাশিত হয়েছে -

জামালপুরের বকশিগঞ্জে সাংবাদিক নাদিম রব্বানী হত্যা মামলায় বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমকে প্রধান আসামি করা হয়েছিলো। কিন্তু নেতাকর্মীদের চাপে তারা সেই মামলা থানায় জমা দিতে পারেনি বলে দাবি করেছেন নিহত নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বকশিগঞ্জ শহরের পাটহাটি মোড় এলাকায় সাংবাদিক রব্বানীর উপর হামলার স্থলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সমাবেশে বক্তব্যকালে এই দাবি করেন তিনি।

এসময় নিহত নাদিমের মেয়ে আরও বলেন, ‘আমার বাবার হত্যাকাণ্ডে শুধু বাবু চেয়ারম্যানের লোক ছিলো না। এই হত্যাকাণ্ডে বাবুল তালুকদারের গুণ্ডা রাকিবিল্লাহ, লিপন ও শাহিনা বেগমের পালিত গুণ্ডা ইসমাঈল হোসেন স্বপন মণ্ডল, শামীম খন্দকার ছিলো। তারা বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদারের লোক। আমার বাবাকে এই রাস্তা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে মারধর করে এবং তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত মারধর করে।

Advertisements

রাব্বিলাতুল জান্নাত আরও বলেন- ‘রাকিবিল্লাহ, লিপন বাবুল তালুকদারের ডান হাত। ইসমাঈল হোসেন স্বপন মণ্ডল, শামীম খন্দকার শাহিনা বেগমের ডান হাত। তাদের হুকুম ছাড়া এদের পাতা পর্যন্ত নরে না। তাহলে বুঝেন এখানে পরিকল্পনাকারী কে? তাহলে কি বাবুল তালুকদার জড়িত না? শাহিনা বেগম কি জড়িত না?

রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, আমরা প্রথমে এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে প্রধান আসামি দেয় শাহিনা বেগমকে। তারা নেতাকর্মী নিয়ে থানার বাইরে আমার আম্মুকে চাপ দেয়। তারপর বাসায় গিয়ে আমার পরিবারকে খুন করার হুমকি দেয়। এই খুন করার হুমকি দিয়ে শাহিনা বেগম মামলামুক্ত।

সবশেষে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, চার্জশীটে এই বাবুল তালুকদার ও শাহিনা বেগমের যেনো নাম আসে এর জন্য সাংবাদিকবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তারা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক থাকায় মামলায় না ঢুকে, এমন যেনো না হয়। আইন সবার জন্য সমান। তাদের যেনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।

সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়ন (এমইউজে), ঢাকাস্থ জামালপুর সাংবাদিক ফোরাম। সমাবেশে জামালপুর প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার গণমাধ্যম সংগঠনের নেতা ও সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক এবং প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল।

এসময় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, নির্বাহী সদস্য আবু সালেহ মুসা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন, ইনডিপেনেডেন্ট টেলিভিশনের শেরপুর প্রতিনিধি মেরাজ উদ্দিনসহ আরো অনেকে।

এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর ও সাংবাদিক রব্বানীর মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বক্তব্য রাখেন।

এসময় বক্তরা বলেন- সাংবাদিক রব্বানী হত্যা মামলার সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং এই হামলার অন্তরালের মাস্টারমাইন্ডদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে যাবার হুশিয়ারি দেন তারা।

তবে বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য চলাকালে হঠাৎ মঞ্চে আসেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার। পরে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি বলেন-“ আমার এখানে আসার কথা না। আমাকে কেউ দাওয়াত দেয় নাই। আমি মোবাইল ফোনে সাংবাদিক নাদিমের মেয়ের বক্তব্য শুনে এখানে এসেছি। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই একটি পক্ষ এটিকে পুঁজি করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে। এই মামলাটি ভিন্ন মোড়ে ঘুরানোর চেষ্টা করছে। তারা উঠে পরে লেগেছে। আমরা চাই যে নাদিম হত্যা মামলার বিচার হোক। এই মামলায় যারা গ্রেপ্তার রয়েছে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আমি যদি স্বীকার করি যে আমি হত্যা করেছি তাহলে তো মাস্টারমাইন্ডের দরকার পরবে না। এখানে রাজনীতির খেলা চলছে। কীভাবে নাদিমের মেয়েকে দিয়ে একটা অপবাদ ছড়িয়ে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এটা ঠিক না?

এছাড়াও তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বক্তব্য দেয়ার সময় জামালপুরের সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন-“এই চিল্লাচিল্লি কইরে লাভ নাই। এটা বকশিগঞ্জ। আমারই জায়গা। এখানে চিল্লায়ে লাভ নাই। এখানে কেউ গন্ডগল করতে পারবে না। নাদিমের সাপ্তাহিক পত্রিকার উপদেষ্টা আমি ছিলাম।”

এরপর তিনি তার বক্তব্য শেষ করে মঞ্চের কিছু দূরে গিয়ে একটি দোকানে সমাবেশ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বসে থাকেন।
সমাবেশে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে সাংবাদিক নেতারা নিহত সাংবাদিক রব্বানীর কবর জিয়ারত করেন এবং তার পরিবারকে সমবেদনার পাশাপাশি সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তারা।

বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি গোলাম রব্বানী নাদিম গত ১৪ জুন পেশাগত দায়িত্বপালন শেষে রাত ১০টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জ পৌর শহরের পাটহাটি মোড় এলাকায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় গত ১৭ জুন নিহত সাংবাদিক রব্বানীর স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে সাময়িক চেয়ারম্যান বাবু ও তাঁর ছেলে রিফাতসহ ২২জনের নামে এবং আরও ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বকশিগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নাদিম হত্যাকাণ্ডের এ পর্যন্ত ১৭জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি রয়েছে মাত্র ৫জন।