সোমবার , ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ঢাবি ছাত্রী এলমার মৃত্যু: হত্যা মামলা থেকে সরে এলো পরিবার

প্রকাশিত হয়েছে -

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের ছাত্রী এলমা চৌধুরী ওরফে মেঘলার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। এদিকে এলমার মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বামীর বিরুদ্ধে করা হত্যা মামলা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তার পরিবার। ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বনানীতে শ্বশুরবাড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু হয় এলমার।


আদালত সূত্র জানায়, এলমার মা-বাবা হলফনামা দিয়ে বলেছেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে তারা মেয়ের স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছিলেন, যা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। তাই মামলার আসামিরা বেকসুর খালাস পেলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

বিচারের শেষ পর্যায়ে এলমার বাবা-মায়ের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসামিপক্ষের প্রভাব এতটাই বেশি যে তারা (পরিবার) মামলা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও মামলার সব আলামতে এলমার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্নের তথ্য রয়েছে।

Advertisements

এলমার মা শিল্পী চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, হত্যা মামলা করে আমরা পারিবারিকভাবে প্রচণ্ড রকম ক্ষতির শিকার হয়েছি। এজন্য মামলাটি আমরা ডিসমিস (বাতিল) করে দিয়েছি। আর এ বিষয়ে আমরা কোনো কথা বলতে চাই না।

এলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমার মেয়ে হত্যার শিকার হলো। কিন্তু তার হত্যাকাণ্ডকে প্রভাব খাটিয়ে আÍহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হলো। আমি আর কারও কাছে বিচার চাই না। এর বিচার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। একদিন আল্লাহ এর সঠিক বিচার করবেন।

বনানী থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় এলমার স্বামী ইফতেখার আবেদিন, তার মা শিরীন আমিন ও সৎ বাবা লে. কর্নেল (অব.) মো. আমিনকে আসামি করা হয়। ইফতেখারকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে ইফতেখার পুলিশকে বিস্তারিত জানায়। এলমার সঙ্গে পরিচয়, বিয়ে, সন্দেহ, মারধরসহ নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন তিনি। আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে ইফতেখার জানান, কানাডায় আমার অবস্থানকালে টিন্ডার অ্যাপের মাধ্যমে এলমার সঙ্গে পরিচয় হয়।

প্রেমের সম্পর্ক হওয়ার পর দেশে এসে পরিবারের সম্মতিতে ২০২১ সালের ২ এপ্রিল আমাদের বিয়ে হয়। তবে আমরা দুজনই বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে পরস্পরকে সন্দেহ করি। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়।

জবানবন্দিতে ইফতেখার আরও জানান, বিয়ের তিন দিনের মাথায় এলমার ফোন চ্যাটবক্সে এক যুবকের সঙ্গে তার অশালীন চ্যাটিং দেখতে পাই। বিয়ের তিন মাস পর ফ্রান্স হয়ে আমি কানাডায় চলে যাই এবং ৯ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসি। ১৩ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে এলমা ঘুমিয়ে পড়লে পাশের রুমে গিয়ে এক বান্ধবীর সঙ্গে ফোনে কথা বলি।

এক পর্যায়ে এলমা এসে মোবাইল ফোন নিযে টানাটানি শুরু করে। তার মেজাজ খুব খারাপ হয়। রাত আড়াইটার দিকে বাসার বাইরে সে যেতে চায়। রুমে নেওয়ার পর আমাদের মাঝে হাতাহাতি হয়। তাকে বিভিন্নভাবে আমি আঘাত করি।

একপর্যায়ে সে ফটো অ্যালবাম আমার দিকে ছুড়ে মারে। এ সময় চড়থাপ্পড় মেরে অ্যালবামের কাচ তার থেকে নিয়ে নেই। অনেক ভুল বোঝাবুঝির পর আমরা পরস্পরের পায়ে ধরে ক্ষমা চাই। এরপর আমরা ঘুমিয়ে পড়ি।

পরদিন আমি অন্য রুমে সিগারেট খেতে গেলে এলমা চিল্লাচিল্লি করে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে আরেক দফা মারামারি হয়। বিকালে রুমের ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে সে ঝুলে পড়ে। টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেই। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম ২০২২ সালের ৩১ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিট থেকে তার বাবা-মাকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। এছাড়া মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইফতেখারকে বিদেশে না যেতে আবেদন করা হয়।

#যুগান্তর