শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

বন্য হাতির হামলা নিরসনে করণীয়

প্রকাশিত হয়েছে -

:এএ এম হুমায়ুন কবীর, পিপিএম:

প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সীমান্তকন্যা পাহাড়ি সুষমামণ্ডিত শেরপুর একটি প্রাচীন জনপদ। সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুর। শেরপুর জেলার উত্তর পাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলা। একপাশে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা। এর আয়তন প্রায় ১৩৬৪ বর্গ কি.মি. এবং জনসংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। প্রাচীনকালে কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল শেরপুর জেলা। বর্তমানে ময়মনসিংহ বিভাগের অধীন। শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতি ও শ্রীবরদী উপজেলা গারো পাহাড় পরিবেষ্টিত। পাহাড়ের সামান্য কিছু অংশ জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় পড়েছে।

এছাড়াও ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা এবং সুনামগঞ্জ জেলাতেও গারো পাহাড়ের কিছু অংশ পড়েছে। গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি প্রায় ৮০০০ বর্গ কি.মি.। এপার এবং ওপার দুই দিকেই গারো সম্প্রদায়ের বিশাল অংশের বসবাস। ভারতের মেঘালয়ের কোল ঘেঁষে এবং শেরপুর জেলার উত্তর সীমান্তে গারো পাহাড়ের পাদদেশে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী ভোগাই, চেল্লাখালী, মৃগী, সোমেশ^রী আর মালিঝি। গারো পাহাড়ের দীর্গতম নদীর নাম সিমসাং। নদীটি মেঘালয়ের নকরেক জেলায় উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে প্রবাহিত হয়েছে।

গারো পাহাড় এলাকা বন-জঙ্গলে আচ্ছাদিত। এখানে রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এখানে প্রচুর পরিমাণে মূল্যবান শালগাছ জন্মায়। অসংরক্ষিত বনের পরিমাণও কম নয়। এসব বনাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান গাছ, বাঁশ, বেত ইত্যাদি জন্মে। ইদানীং রাবার ও আগর বৃক্ষেরও চাষ হচ্ছে। এছাড়াও পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর কাঁঠাল, বেল, আনারস ইত্যাদি ফলের  চাষ হচ্ছে। এসব পাহাড়ি বনে বিভিন্ন বন্য প্রাণীর বিচরণ রয়েছে।
পাহাড় ঘেঁষা সমভূমি এবং গোটা জেলায় প্রচুর বিখ্যাত সুগন্ধি ধান তুলশিমালা, অন্য প্রজাতির ধান, ভুট্টা, গম, পাট, সরিষা, বাদাম, আখ এবং বিভিন্ন শাক-সবজি ও ফলমূলের চাষ হয় প্রচুর পরিমাণে। তুলশিমালা ধানের চাল এতটাই সমৃদ্ধ যে, দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। শেরপুরে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র এবং খ্রিস্টান ধর্মীয়-চার্চ। এগুলোর মধ্যে বারোদুয়ারি মসজিদ, মাই সাহেবা মসজিদ, পৌনে তিন আনি জমিদার বাড়ি, মধুুটিলা ইকোপার্ক, রাজার পাহাড়, পানিহাটা-তারানি পাহাড়, গজনি অবকাশ কেন্দ্র, ঢেউফা নদী, বারোমারি মিশন (চার্চ), পানিহাটা মিশন (চার্চ) ইত্যাদি।

Advertisements

এছাড়াও এ জেলায় রয়েছে নাকুগাঁও স্থলবন্দর। হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান ও গারো সম্প্রদায়ের বসবাস এ জেলায়। শান্তিপ্রিয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষগুলো দীর্ঘকাল একত্রে বসবাস করে আসছে। অধিকাংশ মানুষই কৃষি নির্ভর। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান, পাট, আখ, ভুট্টা, গমসহ নানা ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল উৎপাদন করে তাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাতে সদা তৎপর।
কিন্তু বিপত্তি একটাই। তা হলো বন্য হাতির উপদ্রব-অত্যাচার। দীর্ঘদিন ধরে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি, শ্রীবরদী উপজেলা এবং জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা ফসল বাঁচাতে গিয়ে বন্য হাতির সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এতে বন্য হাতির পাল একরের পর একর জমির ফসল নষ্ট করছে। নষ্ট করছে অনেক মূল্যবান বৃক্ষ, তছরুপ করছে অনেক ফলমূল। কৃষকরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফসলের সবটুকু হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হচ্ছে। শুধু কি তাই? বন্য হাতির পাল মানুষকেও আক্রমণ করছে। এতে অনেকে নিহত হচ্ছেন, আহত হচ্ছেন বহুসংখ্যক মানুষ। বহু বছর ধরে বন্য হাতির আক্রমণ, ফসল বিনষ্ট করে, বৃক্ষ ধ্বংস করে, ফলমূল বিনষ্ট করে অনেক প্রান্তীয় কৃষককে পথে বসিয়েছে।

এ জেলার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকাগুলো হলো- শ্রীবরদী উপজেলার সিংগাবরুনা ইউনিয়নের বাবেলাকোনা, হাড়িয়াকোনা, চান্দাপাড়া, ঝুঁলগাঁত্ত, মালাকোচা গ্রাম। এছাড়াও রানী শিমুল ইউনিয়নের অফিস পাড়া, খ্রিস্টান পাড়া, বালিঝুড়ি, সোনাঝুড়ি, হালুয়াহাটি, খাড়ামোড়া, রাঙ্গাজান গ্রাম প্রতিবছর কোনো না কোনোভাবে হাতির পাল দ্বারা আক্রান্ত হয়। ঝিনাইগাতি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের তাত্তয়াকুচা,গুরুচরণ-দুধনই, দুধনই, টিলাপাড়া গান্ধিগাঁও, হালছাটি, বাকাকুড়া, পশ্চিম ঢাকাইয়া মোড়, ছোট গজনি, বড় গজনি এবং নকশী গ্রাম বন্য হাতির পাল দ্বারা আক্রান্ত হয়।
নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের সমশচূড়া, বাইগড়পাড়া, খলচান্দা, বুরুঙ্গা গ্রাম ছাড়াও নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া, চাড়ালি নাকুগাঁও এলাকা হাতির পাল দ্বারা আক্রান্ত হয়। একই উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের পানিহাটা ও মায়াকাশি গ্রামেও বন্য হাতির আক্রমণ দেখা যায়।
অপরদিকে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের যাদুরচর, দীঘলকোনা, সোখনাথ পাড়া, বাক্কার মোড় ও সাতানি পাড়া কিছুটা টিলা ও জঙ্গল বেষ্টিত হওয়ায় এখানেও বন্য হাতির পাল ঢুকে পড়ে হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট করে। লোকালয়ে প্রবেশ করে অনেক মানুষকে হত্যা করে কিংবা আহত করে। এসব এলাকায় মানুষ প্রতিবছর বিশেষ করে ধান পেকে গেলে, কলা বাগানের কলা পরিপক্ব হলে, বিভিন্ন ফলমূল বিশেষ করে কাঁঠাল পাকার সময় হলে আতঙ্কগ্রস্ত থাকে- কখন বন্য হাতির পাল আক্রমণ করে। এ পর্যন্ত বন্য হাতির আক্রমণে বহু সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অনেকে। ঝিনাইগাতি এবং শ্রীবরদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বন্য হাতির উপদ্রব সবচেয়ে বেশি।

হাতি আসে কোথা থেকে

মূলত শেরপুর জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা, বালপাকরম ও নকরেক- এই তিনটি জেলা গারো পাহাড়বেষ্টিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ পাহাড়ের গড় উচ্চতা প্রায় ৭০০ মিটার। মেঘালয় রাজ্যের প্রায় ৭০% বনাঞ্চল গারো পাহাড়বেষ্টিত। এ অঞ্চলের পাহাড় জীব বৈচিত্রে সমৃদ্ধ। লেক, হাত্তড়, ঘন সবুজ বন এবং বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী গারো পাহাড়কে করেছে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।

মেঘালয় রাজ্যের এ গারো পাহাড় বনাঞ্চলের অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে বন্য হাতি উল্লেখযোগ্য। মেঘালয় রাজ্য সরকার কর্তৃক ২০১৭ সালে পরিচালিত হাতি শুমারি অনুযায়ী- রাজ্যে হাতির মোট সংখ্যা হলো ১৭৫৪টি। হাতির নিরাপদ চলাচলের জন্য মেঘালয় রাজ্যের তুরা, বালপাকরম ও নকরেক গারো পাহাড়ি জেলায়- ৫টি করিডর রয়েছে। ১৯-২০ আগস্ট, ২০১৫ এবং ২৭ জুলাই, ২০১৭ সালে ‘Trans-Boundary Conservation of Elephanti’ শিরোনামে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে যথাক্রমে কাজিরাঙ্গা ও শিলংএ দুটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই দেশের হাতি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোচনা হয়।

ভারতীয় মেঘালয় রাজ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সীমানা নিরূপণ করা রয়েছে। সীমানা ঘেঁষে ওপারে রয়েছে পাকা রাস্তা। পাহাড়িপথ সর্পিলভাবে ছুটে চলেছে। দুই দেশের পাহাড়ি-ছড়া, ছোট নদী বয়ে চলেছে পাহাড়ের বুক চিরে। কোথাও নদী বা ছড়ার ওপর ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। শুকনা মৌসুমে ছড়া কিংবা নদীর পানি শুকিয়ে গেলে বন্য হাতির পাল অনায়েসে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশে। কিছু হাতি এ দেশের অভ্যন্তরে থেকে যায় দিনের পর দিন। ধান কাটার মৌসুমে বিশেষ করে মার্চ, এপ্রিল, মে মাসে এরা ধান ক্ষেতে প্রবেশ করে পাকা ধান খেয়ে ফেলে। হাতির পালের পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে নষ্ট হয় একরের পর একর  খেতের ধান। একইভাবে এরা ভুট্টা খেত কিংবা কলার বাগানে ঢুকে পড়ে ক্ষতি সাধন করে। কাঁঠালের মৌসুমে গাছের কাঁঠাল খেয়ে বিনষ্ট করে চলে যায়। অন্যান্য ফলমূল কিংবা খেতের সবজিও রেহাই পায় না হাতির আক্রমণ থেকে।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী বন্য হাতি হত্যা করা কিংবা আটক করা আইনত দণ্ডনীয়। এ বিষয়টি অত্র এলাকায় মানুষ জানে। তাই বন্য হাতির

পালের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য কৃষকরা ধান পরিপক্ব হওয়ার নির্ধারিত সময়ের আগে ফসল সংগ্রহ করতে বাধ্য হন। ফলে, তারা আশানুরূপ ফলন থেকে বঞ্চিত হন। হাতি তাড়ানোর জন্য ধানখেতের চারদিকে বৈদ্যুতিক তারের সীমানা দিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে স্বল্প মাত্রার বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কখনো যদি হাতি তারে জড়ায় তাহলে ইলেক্টরিক শক পেয়ে ভয় পায়। এতে অবশ্য স্বল্প মাত্রার কারেন্ট থাকায় হাতির আহত কিংবা মৃত্যু হওয়ার সুযোগ নেই।

তবে অতীতে ধানের খেতে বৈদ্যুতিক ফেনসিং ব্যবহার করায় বন্য হাতির প্রাণহানিও ঘটেছে বলে জানা যায়। বন্য হাতির পাল আক্রমণ করলে এলাকায় লোকজন একত্রিত হয়ে মশাল জ¦ালিয়ে, টর্চের আলো ছড়িয়ে, চিৎকার, শোরগোল করলে অনেক সময় হাতির পাল সরে যায়। এছাড়াও অনেক মানুষ একত্রে ঢাকঢোল পিটিয়ে উচ্চ শব্দ করে হাতির পালকে তাড়ানোর চেষ্টা করে। এতে অনেক সময় কাজ হয়, আবার হয় না। গ্রামবাসীরা বন্য হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য বন বিভাগ, পুলিশ এবং প্রশাসনের সহায়তা চায়। এক্ষেত্রে বন বিভাগের কর্মচারী ও পুলিশ বড়জোর শর্টগানের ফাঁকা ফায়ার কিংবা সাউন্ড গ্রেনেডের উচ্চমাত্রার শব্দ সৃষ্টি করে বন্য হাতির পালকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করার মাধ্যমে সরিয়ে দিতে পারে। তাতেও স্থায়ী সমাধান আসে না।

সাময়িকভাবে বন্য হাতির পাল সরে গেলেও যে কোনো দিন পুনরায় ফসলের খেতে কিংবা লোকালয়ে প্রবেশ করে তা-ব চালাতে পারে। অনেক সময় হাতির আক্রমণের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে নিজেদের ঘর-বাড়ি ও ফসল রক্ষা করতে গিয়ে গ্রামবাসী অনেক বন্য হাতিকে মেরেও ফেলেছে।

হাতি কেন আসে?

এশিয়ান ও আফ্রিকান প্রজাতির হাতি হিংস্র। বিশাল আকৃতির হাতিগুলো তৃণভোজী (Herbivores)। বিভিন্ন বৃক্ষ, কলাগাছ, বড়শ্রেণীর ঘাস, বিভিন্ন শিকড় ও ফলমূল তাদের প্রধান খাদ্য। একেকটি প্রাপ্ত বয়স্ক হাতি দিনে ১০০-৩০০ কেজি খাদ্য এবং ১০০-২৫০ লিটার পানি পান করতে পারে। বাস্তুসংস্থানের হেরফের হলে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। এত বিশাল খাদ্য ও পানির চাহিদা পূরণ করতেই বন্য হাতির দল অনুকূল স্থানের দিকে ছুটে যায়। Ecosystem-এ ব্যাঘাত ঘটলে বন্য হাতির দল খাবারের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ে। পাহাড় কাটা, বৃক্ষ নিধন কিংবা তাপমাত্রার পরিবর্তনে তাদের বসবাসের অনুকূল পরিবেশ নষ্ট হয় এবং দেখা দেয় খাদ্যের সংকট।

তাই হাতির পাল একস্থান থেকে অন্যস্থানে যায়। এছাড়াও উভয় দেশে পাহাড়ি পরিবেশে বসতবাড়ি গড়ে ওঠার কারণে হাতির আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। এসব কারণেই মূলত বন্য হাতি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে ফসলের ক্ষতি করে। গুঁড়িয়ে দেয় ঘর-বাড়ি। ফলে, চলতে থাকে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব।

সূত্র মতে, জানুয়ারি-২০২০ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ৩৬টি হাতি মারা পড়ে। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসেই মারা পড়ে ৭টি হাতি। অন্যদিকে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত শেরপুর জেলায় বন্য হাতির আক্রমণে নিহত হয়েছে ২১ জন এবং আহত হয়েছে অনেকে। শেরপুর জেলায় হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে দীর্ঘ মেয়াদি ও স্বল্প মেয়াদি নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে প্রথমে নজর দিতে হবে দুই দেশের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার Ecosystem রক্ষা করার ওপর। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। স্বল্প মেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে গারো পাহাড়ের দুই পাশে বৃক্ষ নিধন থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রচুর বৃক্ষ রোপণ করে বনাঞ্চল রক্ষা করে অভয়ারণ্য নিশ্চিত করতে হবে। পাহাড় কেটে বসতবাড়ি তৈরি করে হাতির আবাসস্থলে বিরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করা যাবে না। সীমান্তবর্তী এলাকা এবং ফসল উৎপাদনের পাহাড়বেষ্টিত সমতল ভূমির চারদিকে কাটাযুক্ত প্রচুর বাঁশ জাতীয় বৃক্ষ রোপণ করতে হবে।

সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়গুলোতে সরকারি উদ্যোগে হাতির খাদ্য জাতীয় উদ্ভিদ চাষাবাদ করা যেতে পারে। এছাড়াও হাতির যাতে পানির অভাব না হয়, সেজন্য পাহাড়ি ঝরা, নদী কিংবা লেক সংস্কার করে জলাধার সংরক্ষণ করা যেতে পারে। হাতির জন্য নির্ধারিত করিডর সংরক্ষণ করে এর নিরাপত্তা করতে হবে। সরকারী উদ্যোগে গ্রাম এলাকার মানুষকে হাতির উপযোগী Ecosystem, আবাসস্থল, তাদের বিচরণ ও খাদ্য পানীয় সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। বিভিন্নভাবে হাতি হত্যা করা দ-নীয় অপরাধ। এ সংক্রান্তে মানুষকে সচেতন করতে হবে। ভারত ও বাংলাদেশের উভয় পারের মানুষকে হাতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে দুই দেশের সরকার সময়ে সময়ে সংলাপের মাধ্যমে হাতি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে হাতির উপযোগী Ecosystem ও পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে হাতি সংরক্ষণ ত্বরান্বিত করবে। হাতি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী সম্পদ। একে রক্ষা করতে হবে বিলুপ্তির হাত থেকে। দেশবাসীসহ শেরপুরের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে হাতি সংরক্ষণে সহযোগিতার মনমানসিকতা নিয়ে। তবেই থামবে হাতি আর মানুষের দ্বন্দ্ব।

লেখক : গবেষক