সোমবার , ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৪ঠা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ঈদ উপলক্ষে মধুটিলা ইকোপার্কে পর্যটকের ঢল

প্রকাশিত হয়েছে -

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় স্থাপিত একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র মধুটিলা ইকোপার্কে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পর্যটকের ঢল নামে। করোনার ধকল কাটিয়ে সবুজের সমারোহ দেখতে পর্য়টকরা স্বশরীরে এই পার্কে ঘুরতে এসে প্রাণ ফিরে পাচ্ছেন বলে তারা জানান। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বন্ধুবান্ধব কেউবা স্বপরিবারে ছুটে এসেছেন এই পার্কে। শুধু ইকোপার্ক নয় পাশ্ববর্তী সীমান্ত সড়কেও পর্যটকের ভীড় লক্ষ করা গেছে। দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়েছে নালিতাবাড়ী উপজেলার পুরো সীমান্ত এলাকা।

ঈদের তৃতীয় দিন সোমবার (২৪ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মধুটিলা ইকোপাকের্র প্রধান ফটকে প্রচুর পর্যটকের ভীড়। এদের কেউ কেউ মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা, সিএনজি, প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যান, বাস ও মিনিবাস নিয়ে পার্কে আসছেন তারা। শিক্ষার্থী, যুবক যুবতী ও মধ্যবয়স্ক ছাড়াও সব বয়সের দর্শনার্থীরা ভীড় জমাচ্ছেন এই ইকোপার্কে।

জামালপুরের পর্যটক শামীম সিদ্দিকী বলেন, করোনার কারনে গত দুইবছর আমরা প্রাণ খুলে কোথাও বেড়াতে পারিনি। এ বছর করোনার ভয়াবহতা না থাকায় আমরা বন্ধুরা মিলে ইকোপার্কে ঘুরতে এসেছি। এখানকার পরিবেশ অনেক ভালো। তবে তিনি বলেন, দর্শকের আকর্ষণ বাড়াতে এই পার্কে আরো নতুন নতুন রাইড স্থাপন করা দরকার।

Advertisements

টাঙগাইলের দর্শনার্থী সোহাগ রানা বলেন, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ও সবুজ প্রকৃতির সাথে মিশতে মধুটিলা ইকোপার্কে আসলাম। এখানে ঘুরাঘুরি করে বেশ ভালো লাগলো। উচু নিচু সবুজ পাহাড় দেখে মনটা ভরে গেল। এতে আমরা আনন্দিত হয়েছি। কাজের চাপে ঘুরতে পারি না। এমন করে মাঝে মাঝে ঘুরতে ভালো লাগে আমাদের। এতে মনও ভালো থাকে।

মধুটিলা ইকোপার্কের ইজারাদার প্রতিনিধি সাদ্দাম হোসেন বলেন, গত দুই বছরের চেয়ে এবারের ঈদে পর্যটকের ভীড় অনেক বেশি। ঈদ উপলক্ষে অনেক দুরদুরান্ত থেকে পর্যটকরা সবুজ পাহাড় দেখতে এ পার্কে ছুটে আসছেন। আমরা পর্যটকদের সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছি। যাতে তাদের কোন সমস্যা না হয়।

এ ব্যাপারে বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জকর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের দিন বিকেল থেকেই প্রচুর পর্যটক এখানে বেড়াতে আসতেছেন। এখানে কোন নিরাপত্তার ঝুঁকি নেই। পর্যটকরা অবাধে ঘুরেফেরা করে প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। যে কোন দুর্ঘটনারোধে আমাদের বন বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিগত ২০০০ সালে ময়মনসিংহ বন বিভাগের আওতায় ৩৮০ একর বনভুমিতে স্থাপিত হয় মধুটিলা ইকোপার্ক। এ ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি টিকিট ১০ টাকা, গাড়ী পার্কিং খরচ- বড় বাস ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, সিএনজি ৫০ টাকা ও মোটরসাইকেল ২০ টাকা। এখানে আলাদা আলাদা ফি দিয়ে প্যাডেল বোট চালানো, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠা, শিশু পার্কে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত শুধু দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য (ভ্যাটসহ) ৬ হাজার ৯০০ টাকার বিনিময়ে চার কক্ষ বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) সুসজ্জিত মহুয়া নামের রেষ্ট হাউজ রয়েছে। এই রেষ্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জ অফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, বন্য প্রাণীর বিরল প্রজাতি পশুপাখির ভাষ্কর্য। আরো আছে ঔষধি ও সৌন্দর্য বর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ এবং ফুলসহ বিভিন্ন রঙের গোলাপের বাগান।

রাজধানী ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দুরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ঢাকা মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর জেলা শহরে আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড অথবা খোয়াপাড় শাপলা চত্তর থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার হয়ে ভাড়ায় সিএনজি অথবা মটরসাইকেলযোগে মধুটিলা ইকোপার্কে আসা যায়। আর নিজস্ব গাড়ীতে সরাসরি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর শহরে পৌঁছানোর আগে নকলা উপজেলার বাইপাস সড়কে নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর হয়ে ইকোপার্কে আসা সহজ হয়।