শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ জরুরি

প্রকাশিত হয়েছে -

:নাইমুর রহমান শাওন:

পবিত্র মাহে রমজান ধর্মপ্রাণ মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি বিশেষ নেয়ামত। সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য এটি সংযম, নাজাত এবং পাপমুক্তির মাস। কিন্তু পবিত্র রমজান এলেই আমাদের দেশে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা যেন একটি প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে প্রতিবছর রমজান এলেই আমাদের দেশের জনগণকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হয়। যার ফলে জনজীবন হয়ে ওঠে অসহনীয় এবং যন্ত্রণাদায়ক। রমজান মাস নাজাতের মাস হলেও আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে জনগণের কাছে তা আতঙ্কের মাসে পরিণত হয়; যেটি একজন মুসলমান হিসেবে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি মনোভাব প্রচলিত আছে যে, রমজানের এক মাস ব্যবসা করব এবং বাকি সারা বছর আরামে কাটাব। যার কারণে তারা রমজান মাসে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে চায়। দাম বাড়ানোর প্রশ্নে খুচরা বিক্রেতারা দোষ চাপায় পাইকারি বিক্রেতাদের ওপর, পাইকারি বিক্রেতারা দোষ চাপায় আমদানিকারকদের ওপর। আবার আমদানিকারকরা কারণ হিসেবে বলেন, আমদানি মূল্য, পরিবহন ব্যয়, চাঁদাবাজি। এভাবে একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সবার দায় এড়িয়ে যাওয়ার যে প্রবণতা দেখা যায়, সেটি এক প্রকার দায়হীনতার সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আবার ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে মূল্য বৃদ্ধি করলেও ওই পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমলেও তাদের বাড়ানো দাম আর কমে না। রহমতের মাস রমজান আসলে বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিমপ্রধান দেশে যেখানে দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো হয়, সে তুলনায় আমাদের দেশের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত।

Advertisements

দেশে উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদক এবং ভোক্তার মাঝে দামের বিস্তর ফারাক পরিলক্ষিত হয়। কৃষক যে মূল্যে পণ্য বিক্রি করে তার কয়েকগুণ বেশি মূল্য দিয়ে ভোক্তাকে ওই একই পণ্য ক্রয় করতে হয়। আর মধ্যখানে এই কয়েকগুণ অতিরিক্ত মুনাফা যাচ্ছে এসব অসাধু ব্যবসায়ী এবং মজুদকারীদের পকেটে। এসব

অসাধু সিন্ডিকেট ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার এবং প্রশাসন মাঠে সক্রিয় থাকলেও বাস্তবে তার কোনো ফলাফল প্রতীয়মান হয় না। মূল্য বৃদ্ধি পেতেই থাকে। নানান বৈঠক, আলাপ-আলোচনা হলেও সেগুলো শুধু খাতা-কলম এবং চার দেয়ালের ভেতর আবদ্ধ থেকে যায়, আলোর মুখের দেখা মেলে না খুব একটা। প্রতিবছর রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার নানারকম অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। কিন্তু বরাবর দেখা যায়, কোনো এক অজানা কারণে বাজারের নাটাই সরকারের হাতে থাকে না। বাজারের নাটাই থাকে কোনো এক অশুভ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে। যার ফলে তারা সরকারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখার অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি মেনে চলে না। তারা তাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবর্তে এক প্রকার অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করে।

রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার ভোক্তা অধিকার সংগঠন এবং প্রশাসনের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকে। যদিও এটি প্রশংসার দাবিদার কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় তা পর্যাপ্ত নয়। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজরদারির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করতে হবে এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে কোনো পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী ঘাটতি থাকলে আগাম সেটি আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। টিসিবির পণ্যের বরাদ্দ ও বিক্রয়কেন্দ্র বৃদ্ধি করতে হবে ও সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে জনগণকেও ভোক্তার অধিকার বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

পবিত্র মাহে রমজানের মহিমায় অতি মুনাফালোভী, মজুদদার, অসাধু ব্যবসায়ী এবং সিন্ডিকেটকারীদের আত্মোপলব্ধি জাগ্রত হোক। পরিশেষে বলতে চাই, রমজানের রোজা রেখে মানুষের আত্মশুদ্ধি হোক ও আত্মোপলব্ধি জাগ্রত হয়ে সব রকম পাপ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবার আত্মা জেগে উঠুক।

 

লেখক:- নাইমুর রহমান শাওন : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।