সোমবার , ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

নাকুগাঁও স্থলবন্দরে শ্রমিকরা পেয়েছেন কর্মসংস্থানের পথ

প্রকাশিত হয়েছে -

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা নয়াবিল ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম নাকুগাঁও স্থলবন্দরটি আমদানি-রফতানিকারকদের জন্য নতুন দিগন্তের পথ দেখাচ্ছে। এই বন্দরটি চালু হওয়ায় স্থানীয়রাসহ দেশের নানা প্রান্তের ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসা করতে এসে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। বন্দরের শ্রমিক নেতারা বলছেন, বন্দরের কর্মকান্ডকে ঘিরে হাজারো শ্রমিক পেয়েছেন কর্মসংস্থানের পথ। এছাড়া এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটান এই তিন দেশের ট্রানজিট রুটসহ ত্রিপক্ষীয় বাণিজ্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ৩৩ বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৯৮ সালে নাকুগাঁও বন্দরটি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহ স্থল শুল্কবন্দর হিসেবে পুনরায় চালু হয়। এরপর থেকেই এ বন্দর দিয়ে কয়লা, পাথর আমদানি এবং সিমেন্ট, শাড়ি, জুস, মশারির কাপড় ও জুটসহ নানা বৈধ পণ্য আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। কিন্তু অপ্রস্থ রাস্তাঘাট, অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে এ বন্দরের সম্ভাবনা অনেকটা কমে গিয়েছিল। এলাকার এমপি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এ বন্দরের গুরুত্ব অনুধাবন করে এটিকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু করেন। পরে ২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বন্দরটি পরিদর্শন করে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে চালুর ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে প্রায় ১৪শ’ শতাংশ জমির ওপর ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ২৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নাকুগাঁও থেকে নকলা উপজেলা পর্যন্ত সাড়ে ২৯ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৮ জুন নাকুগাঁও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পরিচালনায় এর কার্যক্রম শুরু করে।
নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির অনুমতি থাকা পণ্যগুলো হচ্ছে- গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে ও কোয়ার্টজ।

নাকুগাঁও স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া বলেন, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সৌভাগ্যের প্রতীক এখন নাকুগাঁও স্থলবন্দর। আগে এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কয়লা আসত। বর্তমানে বন্ধ থাকায় পাথর আমদানি হচ্ছে বেশি। এখানে কাজ পেয়ে আমরা অনেক খুশি হয়েছি।

Advertisements

শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলম মিয়া বলেন, বন্দরে ইউনিয়নভুক্ত শ্রমিক রয়েছেন ৮শ’ জন। এছাড়া পাথর ভাঙার জন্য দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে আরো ৩ হাজার শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন মেশিনপত্র পরিচালনার জন্য প্রায় ৩শ’ জন শ্রমিক রয়েছেন। ইউনিয়নভুক্ত লোড-আনলোড শ্রমিকরা গড়ে প্রতিদিন ৬০০-৭০০ টাকা মজুরি পান। আর অন্যরা ৪০০-৫০০ টাকা হারে মজুরি পেয়ে থাকেন।আলম মিয়া আরো জানান, বাড়ির কাছে স্থলবন্দর হওয়ায় খুব সহজেই তারা কর্মক্ষেত্র খুঁজে নিতে পেরেছেন। অন্যথায় ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে গিয়ে তাদের কাজ করতে হতো।

নাকুগাঁও স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, এই বন্দরটি চালু হওয়ায় স্থানীয়রাসহ দেশের নানা প্রান্তের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এই বন্দর চালু না হলে হয়তো আমরা কর্মহীন থাকতাম। তিনি আরো বলেন, ভারতের আসাম রাজ্য থেকে তারা শুঁটকি মাছ, খৈল, সুপারি এবং পশুখাদ্যও আমদানি করতে চান। এ বিষয়ে ছাড়পত্র পেতে একটি লিখিত আবেদন জাতীয় রাজস্ব বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সির কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত লিখিতভাবে তাদেরকে অবহিত করা হয়নি।

এ বিষয়ে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বন্দর দিয়ে অনুমোদিত ১৯টি পণ্য আমদানি ও নিষিদ্ধ ব্যতীত সব বৈধপণ্য রফতানি করা যাবে। সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধিতে আমরা ব্যবসায়ীদেরকে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করে যাচ্ছি।