সোমবার , ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ও মনু বুঝছো

প্রকাশিত হয়েছে -

:সাবিনা সিদ্দিকী শিবা:

আজ নাকি শিক্ষক দিবস? এতো দিবসের ভিরে হারিয়ে ফেলি আমার প্রিয় শিক্ষক দিব।কাউকে,কোন কিছুকে ভালোবাসতে হলে দিবস লাগবে কেন? নিজের জীবনে সব কিছুই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষনীয় চিন্তা-জাগানিয়া বিশ্লেষনী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে হয়।তখন আর অহেতুক দিবসের কথা মাথায় থাকবেনা।
কি যেন বলছিলাম? হ্যাঁ শিক্ষক দিবস,
আজ আমি আমার স্কুল লাইফের একটি ঘটনা তুলে ধরবো,যেটা আমার এই ক্ষুদ্র পরিসরে লেখিকা,কবি হওয়ার পর কখন ও প্রকাশ করিনি।আর যাকে নিয়ে লিখবো জানি না সে এখন কোথায় আছে,সহিসালামতে আছে কি না।সালটি ১৯৯৫,১৯৯৬ সালের দিকে,তখন স্কুলে লসাগু,গসাগু,আর বানরের তৈলাক্ত বাঁশের অংক করতে করতে জীবন ত্যানা ত্যানা।তার মধ্যে উটকো ঝামেলা হলো,ইংরেজি গ্রামার তো যা বলছিলাম টিনএজ বয়স তার মধ্যে গার্লস গাইডের জাদরেল লিডার।এগুলো করতেই ভীষণ ভালো লাগে। কিয়ের ছাতার লেখাপড়া। শাবনূরের মতো মন বসেনা পড়ার টেবিলে।দস্যুপনা করেই বেশি পরিচিত ছিলাম।সবাই খুব ভালোবাসতেন,রীতিমতো স্নেহ করতেন।কিন্তু চোরের সাতদিন , তো গিরস্থের একদিনের মতো দেখতে দেখতে এস এস সি পরীক্ষা ঘনিয়ে আসছে, সেদিকে আমার খেয়াল নেই।বলা ভালো আমাদের স্কুলে তখন খুব ভয়ংকর রাগি তিন ভাই বোন টিচার ছিলেন,তারা ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।বড় দিদি ছিলেন, সিংহের  মতো, তার হুঙ্কার থেকে কথার শব্দে ক্লাস গমগম করতো।সে ছিলেন আমাদের অংকের শিক্ষক।মেজদিদি  ছিলেন আমাদের ইংরেজি  শিক্ষক, সে বড়জনের ছেয়ে শান্তসিষ্ট।
বাট মুখের কথায় কলিজা জ্বলে যেতো।আর তার ভাই ছিলেন জগদীশ চন্দ্র, তাকে আমি কোন ক্লাসে পাইনি,,,
তো যাই হোক তার তিন ভাই বোন তুখোড় শিক্ষক ছিলেন।তারা আমাদের সাথে একটি বাসায় ভাড়া থাকার সুবাদে আমাদের পারিবারিক ভাবে ঘনিষ্ঠ।
নিজ চৌখণ্ড দিয়ে তারা আমার  দস্যু রত্নাকর কাম-কাজ অবলোকন করেছেন। তাই ক্লাসে পড়া না পারলে বেতের বাড়ি।কখনও পিঠে ছাড়া মাটিতে পরেনি। তবুও যে লাউ সেই কদু।প্রতিদিন তাদের মাইনরে ভিটামিন আমার শরীরে পড়তে পড়তে  আমি স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু  মাথা ভরা গোবরে কোন উন্নতি হচ্ছে বলে মনে হয় না।
তো একদিন কোন কারনে বড় দিদি,আর দাদা তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালে যাওয়ার প্রয়োজন পরলো।
আমাকে ডেকে বললো।মেজদিদি সাথে তাদের ঘরে ঘুমাতে। একা এতো বড় রুমে ঘুমাতে  দিদি ভীষণ ভয় পায়।তারা তিনদিন পর ফিরবে বরিশাল থেকে।আমিও ভদ্র মেয়ের মতো রাজি হয়ে গেলাম।।পাশাপাশি রুম হওয়ায় আম্মু দিদিকে বললো,এই তিনদিন আমাকে পড়া দেখিয়ে দিতে।
দিদিও রাজি হয়ে গেলেন।আম্মু বললে পিটিয়ে  মাংস দিদির লাঠিতে রাখতে আর হাড্ডি আম্মুকে দিতে।আর পায় কে দিদিকে
তিনি আমার হাড্ডি  মাংস  আলাদা করার মিশনে নেমেছে।একটু ভুলে হলেই দ্রিম করে বেতের পিটানি। দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিশোধের অপেক্ষায় আছি।
একটা কথা না বললেই না,এখন ছেলে মেয়েদের মতো আমরা শিক্ষকদের সাথে এতো বিহেব করতাম না।ভীষণ সম্মান  করতাম।মা,বাবার পর তৃতীয় সম্মানিত মানুষ ছিলো শিক্ষক শিক্ষিকাগন।
রাতে ঘর থেকে খেয়ে এসে দিদি সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে আসলাম।ক্রেডিটে বুকের ছাতি ফুলে একাকার। কারণ আগামীকাল স্কুলে গিয়ে সবাই বলবো,দিদির সাথে ঘুমিয়েছি।সবাই খুব হিংসা করবে আমাকে।দিদির পাশে ঘুমিয়ে মরার  মতো ঘাপটি মেরে আছি।যদি দিদির গায়ে পা লাগে কতবড় বেয়াদবি করা হবে।সত্যি কথা বলি টেনশনে আমার ঘুম মাটি।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি দিদি,গোছল সেরে স্কুলে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।আমাকে দেখে বললো।কি ব্যাপার  শিবা,তুমি কি ঘুমের মাঝে হাত-পা নাড়না? এমন শক্ত হয়ে শুয়েছিলে কেন?
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
আসলে দিদি আপনার গায়ে পা লাগার ভয়ে এমন শক্ত হয়ে ছিলাম।
পা লাগলে তো আপনি বকা দিবেন,আল্লাহ গুণা দিবে।
দিদি আমার অবস্থা বুঝতে পেরে বললো,ধাূর বোকা,ঘুমের মধ্যে হাত পা লাগাই স্বাভাবিক। সকালে উঠে সেলাম করে নিলেই হবে,তো বি ইজি।
আমিও দুষ্ট প্রকৃতির হাসি দিয়ে বললাম।ঠিক আছে দিদি।
এবার আর আমাকে কে পায়।আমার মনে উদয় হলো প্রতিশোধের মিশন।
সারাদিন প্লান প্রোগ্রাম করে রাতে ঘুমানোর সময় এসে গেলো।
দিদি সব কাজ সেরে মশারী টানিয়ে ঘুমাতে এসে দেখে আমিও ঘুম। তিনি আর আমাকে না ডেকে মশারী আসেপাশে গুঁজে দিয়ে শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলেন
আমি তো ঘুমের ভান করে আছি।প্রতিশোধ এর আশায়।ঘুমের মধ্যে ইচ্ছে করেই,দ্রিম করে দিদির বই ধরা হাতে বাড়ি।বই ছিটকে দূরে পরলো।দিদি কিছু না বলে বইটি রাখে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লেন।
এবার শুরু হলো৷ আমার ভয়ংকর তান্ডব, হাত পা দিয়ে দ্রিম দ্রারিম লাথি,কিল।পারি তো খাট থেকেই ফেলে দেই।
এভাবে কতক্ষণ চলেছে আল্লাহ ভালো জানেন।আজ আমি মনের প্রশান্তিতে ঘুমিয়েছি প্রতিশোধের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে।আর দিদি ভেবেছে আমি এমনি নড়াচড়া করি ঘুমালে।কিন্তু  মামলাটা কি,সবাই তো বুঝেই গেলেন।
দিদি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
গত কালই তো ভালো ছিলো।আজ তো আমার ঘুমের বারটা বাজিয়ে দিলে তুমি। আমি তো  ভয় ভয় ছিলাম কখন খাট থেকে পড়ে যাই।
আমি চোরা চোখে চাওনি দিয়ে বললাম,ও মনু আমারে পিটায়া, এহন বুঝও মজা,কত ধানে কত চাল,,,,,