শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব

প্রকাশিত হয়েছে -

এ এম আব্দুল ওয়াদুদ
জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম যা কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত একটি বিষয়।আল্লাহ তাআলা নামাজ আদায়ের নির্দেশ করার পাশাপাশি তা জামাত সহকারে পড়ার তাগিদ দিয়েছেন।

ইরশাদ হয়েছে وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ارۡکَعُوۡا مَعَ الرّٰکِعِیۡنَ
অর্থঃ
তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা : বাকারা : ৪৩) অর্থাৎ জামাতে নামাজ আদায়কারীদের সঙ্গে নামাজ আদায় করো

পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই জামাতে আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদা,যা ওয়াজিবের সঙ্গে তুলনীয়।অর্থাৎ এটি ওয়াজিবের কাছাকাছি। (মুসলিম : ১০৯৩)।
শরিয়ত অনুমোদিত কোনো ওজর বা অপারগতা ছাড়া জামাতে শরিক না হওয়া বৈধ নয়। যে ব্যক্তি জামাত ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায়, সে গোনাহগার হবে। (আবু দাউদ : ৪৬৪)।

Advertisements

জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত সম্পর্কৃত বহু হাদিস রয়েছে, এখানে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলোঃ

১.বেশি সওয়াব লাভঃজামাতে নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।(বুখারি)রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো জীবন জামাতের সঙ্গেই নামাজ আদায় করেছেন। এমনকি ইন্তেকাল আগ মুহূর্তে অসুস্থতার সময়ও জামাত ছাড়েননি। সাহাবায়ে কেরামের পুরো জীবনও সেভাবে অতিবাহিত হয়েছে।’ (বুখারি)
২.জাহান্নাম থেকে মুক্তিঃহজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত তাকবিরে উলার (প্রথম তাকবিরের) সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে দুটি পুরস্কার দান করবেন। এক. জাহান্নাম থেকে মুক্তি। দুই. মুনাফিকের তালিকা থেকে তার নাম কেটে দেবেন।’ (তিরমিজি)

৩.হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসূলের যুগে প্রকাশ্য মুনাফিকরাই শুধু জামাত ত্যাগ করত। গোপন মুনাফিকরা পর্যন্ত জামাতে শরীক হত। অনেক সাহাবা তো জামাতের ব্যাপারে এত আগ্রহী ছিলেন যে অসুস্থতার সময়েও জামাত ছাড়তেন না। একাকী চলার শক্তি হারিয়ে ফেললে অন্য দুই জন ব্যক্তির সহযোগিতা নিয়ে জামাতে শরীক হতেন। (মুসলিম শরীফ)
৪.রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি অজু করে ঘর থেকে মসজিদে জামাতের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ার জন্যে বের হয়, সে ঐ ব্যক্তির পরিমাণ সওয়াব পায়,যে ইহরাম বেঁধে হজ্ব করে। আর যে ব্যক্তি শুধু চাশতের (সূর্য একটু প্রখর হওয়ার পর বিশেষ নফল নামায) নামাজের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে ওমরা পালনকারী ব্যক্তির ন্যায় সওয়াব অর্জন করে। আর যে ব্যক্তি একটি নামাজ আদায় করার পর দ্বিতীয় নামায আদায় করে এবং দুই নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে কোন অহেতুক কথাবার্তা না বলে, তার আমল জান্নাতের উচ্চস্তরে পৌঁছে যায়। অর্থাৎ সে আল্লাহর কাছে নেককার বান্দা হিসেবে গণ্য হয়। (মুসনদে আহমদ)
৫.হযরত উবাই ইবনে কাব রা. বলেন, একদিন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ফজরের নামাজ আদায় করলাম। নামাজরর পর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, অমুখ এসেছে? সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, আসেনি। তিনি আবার বললেন, অমুখ এসেছে? সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, আসেনি। তখন তিনি বললেন, এশা এবং ফজরের নামায মুনাফিকদের জন্য খুবই ভারী। যদি তোমরা এই দুই নামাযের সওয়াবের পরিমাণ জানতে, হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে চলে আসতে। (আবু দাউদ,নাসায়ী)
৬.জামাত পরিত্যাগকারীর প্রতি সতর্কতারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ, তার শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই আর নামাজের আজান দেওয়ার জন্য হুকুম দেই। এরপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই।’ (বুখারি)
৭.গোনাহ মাফ ও নেকি অর্জনঃজামাতে নামাজ আদায় করলে প্রতি কদমে নেকি লাভ হয় এবং গোনাহ মাফ হয়। সঙ্গে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্রতা লাভ করে মসজিদে এসে নামাজ আদায় করে তার প্রতি কদমে একটি নেকি দেওয়া হয়। একটি করে গোনাহ মাফ করা হয়। একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। (মুসলিম-১০৯৩)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের শেষ মুহূর্তেও সাহাবীদের কাদের উপর ভর দিয়ে জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য উপস্থিত হয়েছেন এবং মুসলিম উম্মাহকে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি উৎসাহিত করে গিয়েছেন।

আল্লাহ তাআ’লা সকল মুসলিম উম্মাহকে জামাতে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করে প্রতি ওয়াক্ত নামাজ জামাকে আদায় করা তাওফিক দান করুন।আমিন।

লেখকঃ শিক্ষার্থী ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।