শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

কি করলে মানুষের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সুসম্পর্ক তৈরি হয়

প্রকাশিত হয়েছে -


এ এম আব্দুল ওয়াদুদ

সালাম হচ্ছে সমাজ হতে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে মানুষের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সুসম্পর্ক তৈরির অনন্য মাধ্যম।মুসলিমদের পরস্পর সাক্ষাৎ হলে অন্য কোন কথা বলার আগে সালাম প্রদান করা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত এবং এর উত্তর দেওয়া ওয়াজিব।

আল্লাহ তাআ’লা ও তার প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাপক সালামের প্রচলন করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।যখন তোমার গৃহে গৃহে প্রবেশ করবে,তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে।এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিধান।(সূরা নূর,আয়াত ৬১)

Advertisements

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন কেউ তোমাদের সালাম করে, তখন তোমরা তাকে তদপেক্ষাও উত্তম পন্থায় সালাম (জবাব) দিও কিংবা (অন্ততপক্ষে) সেই শব্দেই তার জবাব দিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছুর হিসাব রাখেন।’ – (সূরা নিসা, আয়াত, ৮৬)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে,যখন তোমাদের কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করে, তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। তবে এ সালামের মধ্যে অপর ভাইয়ের শান্তির জন্য দোয়া ও শুভ কামনার মনোভাব থাকতে হবে।’

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ’সর্বোত্তম ইসলামী কাজ কী?’ তিনি বললেন, “(ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে (ব্যাপকভাবে) সালাম প্রদান করবে।’ (বুখারী ৬২৩৬, মুসলিম ৩৯, তিরমিযী ১৮৫৫)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন। তখন তাঁকে বললেন, ‘তুমি যাও এবং ঐ যে ফেরেশতামণ্ডলীর একটি দল বসে আছে, তাদের উপর সালাম পেশ কর। আর ওরাও তোমার সালামের কী জবাব দিচ্ছে তা মন দিয়ে শুনো। কেননা, ওটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তান-সন্তুতির সালাম বিনিময়ের রীতি।’ সুতরাং তিনি (তাঁদের কাছে গিয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাকুম’। তাঁরা উত্তরে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। অতএব তাঁরা ‘ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ শব্দটা বেশি বললেন।’ (রিয়াদুস সালেহিন)

সালাম প্রদানের ফজিলত বর্ণনা করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সর্বাধিক কাছাকাছি মানুষ ওই ব্যক্তি; যে সর্বপ্রথম সালাম দেয়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহামদ)

সালাম প্রদানের নেকি প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ)বলেন একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (একটু বাড়িয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা ‘। তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (আরও একটি শব্দ বাড়িয়ে) বললেন- ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার (সালামের) উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, মেশকাত)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন দুই জন মুসলমানের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, সালাম-মুসাফাহা (হাতে হাত মেলায়) করে তখন একজন অপরজন থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’

সমাজ হতে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে আদর্শ সমাজ বিনির্মানে আল্লাহ তাআ’লা আমাদের পরস্পরের মাঝে সালামের ব্যাপক প্রচলন করার তাওফিক দান করুন।আমিন
লেখকঃশিক্ষার্থী ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।