শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় এবং অপব্যয়

প্রকাশিত হয়েছে -

এএম আব্দুল ওয়াদুদ
আল্লাহ তাআ’লা পৃথিবীকে আমাদের প্রয়োজনিয় বস্তু ধারা শুশোভিত করেছেন।তিনি অপচয় ও অপব্যয়কে নিষিদ্ধ করে প্রতিটি বস্তর সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার করতে বলেছেন।

ইসলামে সকল কিছুর ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে উৎসাহিত করা হয়ছে।পবিত্র কুরআনে অপচয়কারিকে শয়তানের ভাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃআর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রোয়জনীয় কাজে খরচ করবে না।

জেনে রেখো,যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই,আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ। (সরা বনি ইসরাইলঃ২৬,২৭)

Advertisements

বৈধ কাজে প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যয় করাকে অপচয় এবং অবৈধ কাজে কোন কিছু ব্যয় করাকে অপব্যয় বলে। শুধু টাকা-পয়সা নয় খাদ্য-পানীয়,গ্যাস,বিদ্যুৎ,সময় ও মেধার ব্যবহারেও আমাদের মিত্যব্যয়ি হতে হবে।

আজ বিশ্বব্যপি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংকট দেখা দিয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে অপচয় যেনো না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করছে,কারণ পৃথিবীর যেকোন খনিজ সম্পদ এক বার শেষ হয়ে গেলে পুনরায় তৈরি করা সম্ভব নয়।

বর্তমানে লোডশেডিংয়ের কবলে পরেছে সমগ্র বাংলাদেশ। যার ফলে রুটিন করে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে সারাদেশের বিদ্যুৎয়ের সঙ্কট মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।বিদ্যুৎ আমাদের জাতিয় সম্পদ।

নানা বৈশ্বিক কারণে বিদ্যুৎয়ের সাময়িক ঘাটতি তৈরি হয়েছে।সরকারের একার পক্ষে এই সঙ্কট মোকাবেলা করা সম্ভব নয় যদি সরকারের গৃহিত উদ্যোগে জনগণ এগিয়ে না আসে।আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।বিদ্যুৎ,গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়িতা এ সময়ে বিশেষ প্রয়োজন।

সুরা আরাফের ৩১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপব্যয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।

এথেকে বুঝা যায় আল্লাহ তাআ’লা অসংখ্য নেয়ামত হতে মানুষের জন্য বৈধ বস্তু বক্ষন করা যাবে তবে প্রয়োজনাতিরিক্ত গ্রহণ করা যাবে না।

কোন কিছু অপচয় না করা প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যা ইচ্ছা পানাহার কর এবং যা ইচ্ছা পরিধান কর, তবে শুধু দুটি বিষয় থেকে বেঁচে থাক। (এক) তাতে অপব্যয় অর্থাৎ প্রয়োজনের চাইতে বেশী না হওয়া চাই এবং (দুই) গর্ব ও অহংকার না থাকা চাই। [বুখারী] অন্যত্র এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও বর্ণিত হয়েছে। [নাসায়ী ২৫৫৯] তবে এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি স্বাভাবিক সীমা দিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আদম সন্তান যে সমস্ত ভাণ্ডার পূর্ণ করে, তন্মধ্যে পেট হল সবচেয়ে খারাপ। আদম সন্তানের জন্য স্বল্প কিছু লোকমাই যথেষ্ট, যা দিয়ে সে তার পিঠ সোজা রাখতে পারে। এর বেশী করতে চাইলে এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ নিঃশ্বাসের জন্য নির্দিষ্ট করে।’ [তিরমিযী ২৩৮০, ইবন মাজাহ ৩৩৪৯, মুসনাদে আহমাদ ৪/১৩২]

খাবার অপচয়ের বিষয় তো বলাই বাহুল্য খাবার অপচয় করা যেনো আমাদের সমাজে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।প্রয়োজনের বেশি খাবার প্লেটে নিয়ে তা শেষ না করেই খাবারের প্লেটে হাত ধুয়ে ফেলা তো অনেকের নিত্য দিনের কাজ।

হায় আফসোস! আমরা যদি জানতাম এক মুষ্টি ভাত উৎপাদন করতে কত জন মানুষের কত পরিশ্রম করতে হয়েছে,কত হাত ঘুরে অবশেষে আমাদের প্লেটে খাবার এসেছে।

সাগরপাড়ে বসেও পানি অতিরিক্ত ব্যবহার করাও যদি অপচয় হয় তাহলে একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় দৈন্দদিন জীবনে আমরা কি পরিমাণ অপচয় করছি।

প্রয়োজনাতিরিক্ত ফেন,লাইট ব্যবহার করা যেখানে একটি হলেই যথেষ্ট সেখানে একাধিক ফেন-লাইট ব্যবহার করা।এতে করে শুধু আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বিষয়টা এমন না, অপচয়ের সাথে সাথে জাতীয় সংকট তৈরি হচ্ছে।

দেখা যায় গ্যাসের বিল মাসিক নির্ধারিত থাকার কারণে অনেকে ঘন্টার পর ঘন্টার চুলা জ্বালিয়ে রাখে শুধু মাত্র দেয়াশলায়ের একটি কাঠি বাচানোর জন্য। এটা শুধু অপচয় না রাষ্ট্রিয় সম্পদ ব্যবহারে চরম উদাসীনতা,যা ধর্মিয় বা সামাজিক কোন দিক থেকেই এই কাজকে সমর্থন করে না।

ইরশাদ হচ্ছে আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। (সুরা ফুরকান : ৬৭)

আমাদের উচিত আল্লাহ তাআ’লার দেওয়ার নেয়ামনের শুকরিয়া আদায় করে তার সঠিক ব্যবহার করা।

লেখকঃশিক্ষার্থী, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।