বুধবার , ১৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - বর্ষাকাল || ১২ই জিলহজ, ১৪৪৫ হিজরি

‘ভিসি যেখানে নারী, সেখানে অনিরাপদ কেন আমি?’

প্রকাশিত হয়েছে -

এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন ও মারধরের ঘটনার বিচার এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ বাড়ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রীদের বিক্ষোভের পর গতকাল বৃহস্পতিবার শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ছবি: সংগৃহীত

ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যৌন নিপীড়ন ও মারধরের ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় এখনো কাউকে শনাক্ত বা আটক করতে পারেনি প্রশাসন।
এদিকে চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। সুস্পষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ না করে ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত’ থাকার অভিযোগে তাকে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যৌন নিপীড়নের ঘটনার সঙ্গে এই নোটিশের সম্পর্ক আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

Advertisements

গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে শহীদ মিনারে যান। পরে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কয়েক শ শিক্ষার্থী শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকও।

এ সময় ‘ভিসি যেখানে নারী, সেখানে অনিরাপদ কেন আমি?’, ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে নিরাপত্তা নাই’, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘নাম অবশ্যই প্রশাসনের জানা, তবে মামলা কেন অজ্ঞাতনামা’ স্লোগান দিয়ে যান বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভকালে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী তাসলিমা খানম পারহা বলেন, ‘যৌন নিপীড়নের ঘটনার চার দিন পার হয়ে গেলেও প্রশাসন এখনো নীরব কেন? আমরা এর জবাব চাই। তারা আগে অভিযুক্তদের বিচার করবে, তারপর বাকি সব। জায়গায় জায়গায় সিসি ক্যামেরা থাকার পরও এখনো কেন কাউকে শনাক্ত করা যায়নি?’

আরেক শিক্ষার্থী সাজিয়া আহমেদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসকে আমরা আমাদের বাড়ির মতো মনে করি। এখানে প্রশাসন আমাদের অভিভাবক। আমাদের বাড়িতে আমাদের অভিভাবকরাই আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। এ রকম অভিভাবক থেকেই বা কী লাভ?’

উল্লেখ্য, গত রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় পাঁচ তরুণের হাতে যৌন নিপীড়ন ও মারধরের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন এক ছাত্রী। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা বন্ধু ও তাঁকে মারধর করে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনতাই করা হয় বলে ওই ছাত্রী জানান।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে গত বুধবার হাটহাজারী থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলাও করেন সেই ছাত্রী।

এর মধ্যে গত বুধবার ছাত্রীদের রাত ১০টার মধ্যে হলে ঢোকার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এই নির্দেশনার পর ছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ছাত্রীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে চার কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না করতে পারলে পুরো প্রক্টরিয়াল বডিসহ পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান। শিক্ষার্থীদের দাবিতে স্বাক্ষরও করেন তিনি। তাঁর এ প্রতিশ্রুতির পর বিক্ষোভ থামিয়ে হলে ফেরেন ছাত্রীরা।

এ বিষয়ে এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘আন্দোলনরত ছাত্রীরা আমাদের কাছে লিখিত আকারে চার দফা দাবি জানিয়েছে। আমরা দাবিগুলো মেনে নিয়েছি। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় আমরা তদন্ত শুরু করেছি। ’

মহিলা পরিষদের উদ্বেগ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যৌন হয়রানি বাড়ছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মহিলা পরিষদ। গতকাল মহিলা পরিষদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত এবং তাঁদের চলাচলের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে যৌন নিপীড়নের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় না এনে ছাত্রীদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ধরনের প্রস্তাবে আমরা স্তম্ভিত। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কার্যকর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে। সেই সঙ্গে যৌন নিপীড়ন, উত্ত্যক্তকরণ বন্ধে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের আলোকে যৌন নিপীড়ন নিরোধ গঠন ও কার্যকর করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছে। ’

চবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবিও জানানো হয়েছে।