শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর ইদ্দত পালনের বিধান ও পন্থা

প্রকাশিত হয়েছে -


এ এস আব্দুল ওয়াদুদ
স্বামীর মৃত্যুর পর বা তালাকের পর স্ত্রীর ইদ্দত পালনের শরীয়তের বিধান কি বা তা পালনের পন্থা কী, ইদ্দতের সময়সীমা কত দিন? এই বিষয়গুলো নিয়েই আজকের আলোচনা।

কোন স্ত্রীলোকের স্বামীর মৃত্যুর পর বা তালাক প্রাপ্তা হলে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী যে শোক পালনার্থে নির্দিষ্ট কিছু দিন এক বাড়িতে অবস্থান করতে হয় ও নির্ধারিত সময়ে মধ্যে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না তাকেই ইদ্দত বলে।

জাহেলি যুগে স্বামীর মৃত্যুর পর এক বছর পর্যন্ত নারী অন্য কোথাও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারত না এবং বাড়ির বাইরেও যেতে পারত না।
আল্লাহ তাআলা এ বিধান সহজ করে দিয়েছেন। এক বছরের পরিবর্তে শুধু চার মাস ১০ দিনের ইদ্দত নির্ধারণ করেছেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে,
وَ الَّذِیۡنَ یُتَوَفَّوۡنَ مِنۡکُمۡ وَ یَذَرُوۡنَ اَزۡوَاجًا یَّتَرَبَّصۡنَ بِاَنۡفُسِهِنَّ اَرۡبَعَۃَ اَشۡهُرٍগরভ وَّ عَشۡرًا ۚ فَاِذَا بَلَغۡنَ اَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ فِচیۡمَا فَعَلۡنَ فِیۡۤ اَنۡفُسِهِنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ

Advertisements

তোমাদের মধ্য হতে যারা স্ত্রীদেরকে রেখে মারা যাবে সে অবস্থায় স্ত্রীরা নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন বিরত রাখবে। তারপর যখন তাদের ইদ্দৎকাল পূর্ণ হবে, তখন তোমাদের নিজেদের সম্বন্ধে বৈধভাবে যা কিছু করবে তাতে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। বস্তুতঃ তোমরা যা কিছু করছ, আল্লাহ সে বিষয়ে পরিজ্ঞাত। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৪)

পবিত্র এ আয়াত এটাই প্রমাণ করে যে ইদ্দতের সময়সীমা হচ্ছে চার মাস ১০ দিন।

চার মাস ১০ দিন নির্ধারণের কারণ হলো, ৪০ দিন পর্যন্ত পেটে বীর্যের অবস্থায় থাকে। এরপর ৪০ দিন পর্যন্ত জমাট রক্তের আকৃতিতে থাকে। এরপর ৪০ দিন পর্যন্ত শরীরের আকৃতি তৈরি হয়। এ হলো মোট চার মাস। এরপর চতুর্থ মেয়াদে রূপ ও অবয়ব গঠন করা হয়, যার আনুমানিক সময় ১০ দিন ধরা হয়। সন্তান থাকলে এই চার মাস ১০ দিনে নড়াচড়ার দ্বারা বোঝা যায়। তা ছাড়া এ সময়টুকু স্বাভাবিক গর্ভধারণের অর্ধেক সময়। এতটুকু সময়ে গর্ভটা এমনভাবে প্রকাশ পায়, যা দেখলে যে কেউ তা বুঝতে পারে

এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ইদ্দতের সময় কোথায় অবস্থান করতে হবে
আল্লাহ তাআ’লা এই বিষয়ে সূরা তালাকের ১নং আয়াতে ইরশাদ করেন
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ رَبَّكُمْ ۖ لَا تُخْرِجُوهُنَّ مِن بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخْرُجْنَ إِلَّا أَن يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ ۚ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ ۚ لَا تَدْرِي لَعَلَّ اللَّهَ يُحْدِثُ بَعْدَ ذَٰلِكَ أَمْرًا

(তরজমা) তাদেরকে (ইদ্দতরত মহিলাকে) তাদের ঘর থেকে বের করে দিও না। আর তারা নিজেরাও যেন বের না হয়। যদি না তারা কোনো প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُم مِّن وُجْدِكُمْ وَلَا تُضَارُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُوا عَلَيْهِنَّ ۚ وَإِن كُنَّ أُولَاتِ حَمْلٍ فَأَنفِقُوا عَلَيْهِنَّ حَتَّىٰ يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ ۚ فَإِنْ أَرْضَعْنَ لَكُمْ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ ۖ وَأْتَمِرُوا بَيْنَكُم بِمَعْرُوفٍ ۖ وَإِن تَعَاسَرْتُمْ فَسَتُرْضِعُ لَهُ أُخْرَىٰ
(তরজমা) তোমরা ঐ (তালাক প্রদত্ত) স্ত্রীদেরকে তোমাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা অনুপাতে থাকার ঘর দাও যেখানে তোমরা বসবাস কর। আর তাদেরকে সঙ্কটে ফেলার জন্য (বাসস্থান সম্বন্ধে) কষ্ট দিও না। -সূরা তালাক : ৬

উল্লেখ্য যে, তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দতের সময় তার স্বামী ভিন্ন ঘরে বসবাস করবে। মহিলার ঘরে নয়।

আরো উল্লেখ্য যে, স্বামীর বাড়িতে যদি পর্দার সাথে থাকার ব্যবস্থা না হয় কিংবা তার জন্য সেখানে থাকা বেশি কষ্টকর বা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সে বাড়ি ত্যাগ করে বাবার বাড়ি কিংবা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে ইদ্দত পালন করতে পারবে।

তবে এক্ষেত্রে যেখানে যাবে সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করবে। ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে বিনা জরুরতে সেখান থেকে অন্যত্র থাকা জায়েয হবে না।সুগন্ধি, কাজল,মেহেদি ও অলংকার ব্যবহার করবে না।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।