শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ঈদ উপলক্ষে মধুটিলা ইকোপার্কে দর্শনার্থীদের ভীড়

প্রকাশিত হয়েছে -

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বন বিভাগের আওতাধীন অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র মধুটিলা ইকোপার্ক ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দর্শনার্থীদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে। করোনা মহামারীর সংকট কাটিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রকৃতির নিখাদ ভালোবাসা পেতে এ ইকোপার্কে দূরদুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমন পিপাসুরা। ঈদের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার (৫ মে) সরেজমিনে গিয়ে এই ভীড় লক্ষ করা গেছে।

শুষ্কমৌসুম কাটিয়ে বর্তমানে সবুজের সমারোহ নিয়ে পর্যটকদের বরন করে নিতে প্রস্তুত রয়েছে মধুটিলা ইকোপার্ক। করোনা ভাইরাসের আক্রমনের কারনে গত দুই বছরের চেয়ে এ এবারের ঈদুল ফিতরে মধুটিলা ইকোপার্ক ভ্রমনপিয়াসী ও দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। সীমান্তবর্তী এই পার্কের চারপাশে উচু-নিচু পাহাড়িটিলা, কৃত্রিম লেক আর সবুজ বনানী দেখতে ভ্রমন পিয়াসীরা ভীড় জমাচ্ছেন। প্রকৃতির সান্নিধ্য আর প্রাণ খুলে নির্মল বায়ুর শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহনের মজা পেতে এখানে ভ্রমন করে কর্মক্লান্তি ভুলে আনন্দচিত্তে নিজগৃহে ফিরে যাচ্ছেন তারা। তাই ঈদের ছুটি কাটাতে ইট, কাঠ, কংক্রিট আর পাথরে গড়া শহর ও নগর জীবনের কোলাহল ছেড়ে ইকোপার্কে বেড়াতে আসছেন ভ্রমন পিয়াসীরা। তাই দর্শনার্থী, পর্যটক ও ভ্রমন পিয়াসীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। তাছাড়া এই পার্কের ভেতরে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদেরকে টহল দিতে দেখা গেছে।

এই পার্কটির প্রধান ফটক পেড়িয়ে ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে সারি সারি গাছ। রাস্তার ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দুইপাশে রকমারি পণ্যের দোকান। সামনের ক্যান্টিন পার হলেই পাহাড়ী ঢালু রাস্তা। এরপর হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্যকন্যা, মাছ ও পশুপাখির ভাষ্কর্য। পাশের আঁকাবাঁকা পথে ঘন গাছের সারি লেকের দিকে চলে গেছে। তারপর কৃত্রিম লেকের উপর দেশের অন্যতম ষ্টারব্রীজ। এ ব্রীজে দাড়িয়ে ছবি আর সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকেন পর্যটকরা। এসময় ভ্রমনে প্রাণ পায় নব চেতনা, মন হাড়িয়ে যায় যেন প্রকৃতির মাঝে। লেকে পেডেলবোটে চরে ঘুরাফেরার পর পাহাড়ের চুড়ায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আরোহণ করলেই নজর কেড়ে নেয় ভারতের উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমন পিয়াসীরা।

Advertisements

এই পার্কে ঘুরতে আসা ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার দর্শনার্থী দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সানি ইসলাম জানান, করোনার কারনে দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থেকে বাইরে যেতে পারেননি। তাই মধুটিলা ইকোপার্কে ঘুরতে এসে পাহাড়ি সবুজ বন বনানী দেখে অনেক ভালো লেগেছে তার।

পার্কে ফটো তুলে রোজগার করা (ফটোগ্রাফার) মোফাচ্ছেল হোসেন জানান, ছবি তুলে আগের চেয়ে এই ঈদে আয় বেড়েছে তার। করোনামুক্ত ঈদ হওয়ার কারনে প্রতিদিন ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা রোজগার হচ্ছে তার। ভ্রাম্যমান ও মৌসুমী কসমেটিক্স ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম জানান ঈদ উপলক্ষে দর্শনার্থী বেড়ে যাওয়ায় তাদের পণ্য বিক্রি বেড়েছে। তবে তারা বলেন কারোনা কারনে পার্ক বন্ধ না হয়ে যদি সারা বছর এমন অবস্থা চলমান থাকলে তাদের ব্যবসা আরো ভালো চলবে।

পার্কের ইজারাদার প্রতিনিধি সাদ্দাম হোসেন ও ফারুক হোসেন বলেন, গত দুই বছর প্রায় বেশি দিন করোনার কারনে মধুটিলা ইকোপার্ক বন্ধ ছিল। এখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমন কমাতে পার্ক খুলে দেওয়া হয়েছে। তাই ঈদ উপলক্ষে বিনোদন পেতে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে ভ্রমনপিপাসুরা আসতে শুরু করেছেন। আর যদি বন্ধ না হয় তাহলে তারা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।

এ বিষয়ে বন বিভাগের মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জকর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, করোনার সংকট কাটিয়ে ইতোমধ্যেই মধুটিলা ইকোপার্ক দর্শনার্থীদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে। আগত দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি পালন করাসহ তাদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।