রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

শেরপুর-২ ।। নকলা-নালিতাবাড়ীতে আওয়ামী লীগ বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী

প্রকাশিত হয়েছে -

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে সংসদ সদস্য পদে বড় দুই দল থেকে একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। একই পদে মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে এলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই বড় দুই দলের প্রার্থীর মধ্যে। শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলা নিয়ে শেরপুর-২ আসনটি গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৯ হাজার ১৫জন।

এ সরকারের সময় যত ফুরিয়ে আসছে ততোই নির্বাচনী তরীতে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই বর্তমান মতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে এখনও পর্যন্ত তিন জন প্রার্থী মাঠে দেখা যাচ্ছে। একজন হলেন চার বারের সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। ১৯৯১ সালে এ আসন থেকে প্রথমবার এলাকার পুত্রবধূ হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করেন ভোটাররা। ১৯৯৬ সালে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালে সামান্য ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী মরহুম আলহাজ্ব জাহেদ আলী চৌধুরীর কাছে হেরে যান তিনি। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে টানা দুইবার পুনরায় তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এখন আর পুত্রবধূ নন, তিনি এখানকার মানুষের উন্নয়নের অগ্রদূত হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। বেগম মতিয়া চৌধুরী মানেই স্বচ্ছতা ও উন্নয়ন এমনটাই বিশ্বাস করেন ভোটাররা। ফলে দলীয় সমর্থকদের মাঝে বিভেদ-বিতর্ক থাকলেও তিনি এখানে মহীরুহ।

একই দল থেকে অপর প্রার্থী হলেন সাবেক কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা। গেল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বেগম মতিয়া চৌধুরীর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচনের দিন বেলা এগারোটার দিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। বর্তমানেও তিনি দলীয় সমর্থন চেয়ে মাঠে রয়েছেন।

Advertisements

এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য মোকছেদুর রহমান লেবু প্রার্থী হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সভা-শোডাউন করে প্রার্থীতার জানান দিয়েছেন। এ জন্য তিনি পৃথকভাবে “দেশরত্ন জনঐক্য পরিষদ, দেশরত্ন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, দেশরত্ন যুবঐক্য পরিষদ, দেশরত্ন ছাত্র ঐক্য পরিষদ ও দেশরত্ন কৃষক ঐক্য পরিষদ” ইত্যাদি নামে সংগঠন করেছেন। আর এ সংগঠনের ব্যানারেই তিনি তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

অপরদিকে বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী মরহুম অধ্যাপক আব্দুস সালামের পুত্র ও জেলা জাতীয় পার্টির নেতা মোঃ শওকত সাঈদ।
বিএনপি থেকে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক হুইপ মরহুম আলহাজ্ব জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম চৌধুরী। পৈত্রিক কারণে তার অবস্থান সুদৃঢ় হলেও নেতাকর্মীদের সাথে অনেক দুরত্ব তার। এলাকায় আসেন না এবং দলের কোন খোঁজ-খবরও রাখেন না তিনি। বিশেষ দিবসে বা নেতাকর্মীদের কেউ মারা গেলে পর্যন্ত খোঁজ-খবর রাখেন না। ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশা ও ােভ রয়েছে তাকে নিয়ে।
এ দলেরই অপর প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এম. হায়দার আলী। গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও ব্যর্থ হন। বর্তমানে তিনি একেবারেই নেতাকর্মী বিচ্ছিন্ন। তাকে নিয়ে মাঠে নেই কোন প্রকার আলোচনা।

এছাড়াও বর্তমান নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক একেএম মোখলেছুর রহমান রিপন বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন। মতাসীন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীকে পরাজিত করে এবং বিএনপির দলীয় প্রার্থীকে কোণঠাসা করে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন নকলার ছেলে সাবেক ছাত্রনেতা জায়েদুর রশীদ শ্যামল। তিনি জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে এখানে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বেড়াচ্ছেন। নেতাকর্মীরা মামলা-মোকদ্দমায় জড়ালে তিনি তাদের পাশে গিয়ে দাড়াচ্ছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও সাহায্য-সহযোগিতা শুরু করেছেন। শেরপুর শহরস্থ তার মালিকানাধীন জেনী হাসপাতালে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েও তিনি নেতাকর্মীদের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং অভিভাবক শুন্যতায় ইতিমধ্যেই গোপনে গোপনে অনেক নেতাকর্মী তার সঙ্গে যোগাযোগ রা করতে শুরু করেছেন।

এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক বলেন, এই আসনে বেগম মতিয়া চৌধুরী নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা তিনি এই নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সাধারণ মানুষ তার সৎ নেতৃত্বে মুগ্ধ হয়েছেন। তাছাড়া তিনি একজন জাতীয় পর্যায়ের নেতৃ। তার বিকল্প কেউ নেই।

নালিতাবাড়ী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নুরুল আমীন বলেন, শেরপুর-২ আসনটি ভিআইপি আসন এখানে বিএনপির একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যাকে ধানের শীষ প্রতিকের মনোনয়ন দিবেন আমরা সকলে মিলে তারই নির্বাচন করব। তবে এখানে প্রয়াত সাবেক হুইপ আলহাজ্ব জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম চৌধুরীর অবস্থান অনেক শক্ত।

নানা বিবেচনায় সচেতন ভোটাররা মনে করেন, প্রার্থী যতোই হোক শেষ পর্যন্ত বড় দুই দলের প্রার্থীর মধ্যেই ভোটের লড়াই হবে। বাকীদের কেউই হয়ত মাঠে থাকবেন না।

শেরপুর টাইমস/ বা.স