সোমবার , ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

কর্মসৃজন প্রকল্পে ভাইস চেয়ারম্যানের স্বামী-ছেলের নাম!

প্রকাশিত হয়েছে -

ছবি : সংগৃহীত

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) এর তালিকায় ওই ইউনিয়নের ৮, ৯ ও ৫নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রাশেদা বেগমের স্বামী ও ছেলের নাম পাওয়া গেছে। নীতিমালায় অতিদরিদ্র কর্মহীন, শ্রমজীবীদের জন্য এ কাজের কথা বলা থাকলেও ভাইস চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করে বসিয়েছেন স্বামী-ছেলের নাম। তথ্য সংগ্রহের পর সাংবাদিককে এ সংক্রান্ত কোনো নিউজ না করতে দেওয়া হয়েছে হুমকিও।

তথ্য অধিকার আইনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সদর উপজেলার ৮নং বোয়ালী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৯টি প্রকল্পে অতিদরিদ্রের জন্য এই কর্মসূচির সুবিধাভাগী শ্রমিকের সংখ্যা ৩১১ জন। তালিকাভুক্ত এসব শ্রমিকের অনুকূলে বরাদ্দের পরিমাণ ৪৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। প্রথম দফায় ৪০ দিন কাজের বিনিময়ে এসব শ্রমিক প্রত্যেক জনে পাবে ১৬ হাজার করে টাকা। প্রকল্পে প্রথম দফা মাটির কাজ চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি শুরু হয়ে শেষ হয় ৬মার্চ। এ সময় প্রতি সপ্তাহের পাঁচদিন করে চলে এই প্রকল্পের মাটির কাজ।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউনিয়নের এই প্রকল্পের ৩১১ জন শ্রমিকের মধ্যে ৮নং ওয়ার্ডের শ্রমিকের সংখ্যা ৩৯ জন। যার মধ্যে রয়েছে ৮, ৯ ও ৫নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার মোছা. রাশেদা বেগমের স্বামী মো. আশরাফ মিয়া ও ছেলে মো. আশাদুল ইসলামের নাম। তারা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য। উপকারভোগী নির্বাচনের নীতিমালায় বেকার অদক্ষ শ্রমিক, ভূমিহীন ও স্বল্প আয়ের লোক এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী হওয়ার কথা থাকলেও, কোনটির মধ্যেই পড়েনা আশরাফ ও আশাদুল। শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে তারা যৌথ পরিবারের সদস্য, আছে প্রাণী সম্পদও। রাশেদা বেগম ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ায় নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভূমিহীন দরিদ্রের স্থলে অনিয়মের মধ্য দিয়ে বসিয়েছেন তার স্বামী ও ছেলের নাম।

Advertisements

এছাড়া অনুসন্ধানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের একাধিক শ্রমিক জানায়, প্রকল্পের কাজ শুরুর অন্তত বিশ দিনেও কাজে যোগ দেয়নি ভাইস চেয়ারম্যানের স্বামী আশরাফ মিয়া। তার ছেলে আশাদুল কাজের সর্দার হওয়ায় কাজ না করেও তাকে উপস্থিত দেখানো হয়েছে। পরে, শেষের দিকে কাজে গেলেও তিনি কোনও কাজ করেননি, এসে বসেছিলেন।

জানতে চাইলে, ভাইস চেয়ারম্যান মোছা. রাশেদা বেগম প্রকল্পে স্বামী ও ছেলের নাম দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গরীবের তালিকায় আমার স্বামী ও ছেলের নাম দেওয়াটা ঠিক হয় নাই। আমি নতুন মানুষ বুঝতে পারি নাই, আমার ভুল হয়েছে। তবে, প্রকল্পে স্বামী ও ছেলের নাম দেওয়ার বিষয়টি চেয়ারম্যান ও পিআইও (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) জানে বলেও জানান রাশেদা বেগম। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাবু ও সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আনিসুর রহমান।

এদিকে, তথ্য অধিকার আইনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানে গেলে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিককে নিউজ না করার অনুরোধ জানানো হয়। পরে গত মঙ্গলবার বিকেলে অন্য উপজেলার ইউপি ভাইস চেয়ারম্যান ও রাশেদা বেগমের বড় বোন পরিচয় দিয়ে, সংবাদ প্রকাশ হলে এই সাংবাদিককে ছাড় না দেওয়া ও দেখে নিবে বলে মুঠোফোনে হুমকিও দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রাফিউল আলম বলেন, ‘সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি’।