শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

পর্যটন শিল্প বিকাশে ট্যুরিষ্ট বাস চালুর দাবী

প্রকাশিত হয়েছে -

‘পর্যটনের আনন্দে, তুলশিমালার সুগন্ধে’ ব্র্যান্ডিং নিয়ে শেরপুর জেলা সম্প্রতি নতুন করে পরিচিত লাভ করছে। কারণ এখনও দেশের অন্যত্র গিয়ে বাড়ির কথা শেরপুর শুনলেই মানুষ প্রশ্ন তুলে বলে কোন শেরপুর? তাই ইতিমধ্যে শেরপুরকে শেরপুর হিসেবেই পরিচিতি করতে শেরপুরের জেলা ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে জেলার উল্লেখযোগ্য দুটি বিষয়। একটি খাদ্য এবং অন্যটি মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পর্যটন খাত।

শেরপুর জেলায় রয়েছে গারো পাহাড়ঘেরা প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরত্বের সীমান্ত। আর এ সীমান্ত জুড়ে রয়েছে মনোরম শাল-গজারিসহ নানা বনজ, ফলদও ওষুধি গাছের সমারোহ বন। উচুনিচু পাহাড়, ছড়া, লেক আর আদিবাসীদের বাড়ি ঘর। যা কীনা যে কোন ভ্রমন পিপাসু বা পর্যটকদের আকর্ষন করে। ইমিমধ্যে শেরপুরে নতুন জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ শেরপুর আসার পর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার গজনিতে মনোরম ‘অবকাশ’ কেন্দ্রকে আকর্ষন করতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রথম ক্যাবল কার, জীপ লাইন ও ঝুলন্ত ব্রীজসহ বেশ কিছু নতুন নতুন রাইটস সংযোজন করা হয়েছে।

এসব দেখতে দেশর বিভিন্ন জেলা থেকে নানা পেশার ভ্রমনপিপাসু মানুষ ছুটে আসছে শেরপুরে। শেরপুরের ঝিনাইগাতির অবকাশ ছাড়াও রয়েছে, নালিতাবাড়ীর মধিুটিলা ইকোপার্ক, তাড়ানি পানিহাতা পাহাড়, নাকুগাঁও স্থলবন্দর ও ভারতের সাথে ইমিগ্রেশন পয়েন্ট, বারোমারী খ্রিষ্টান মিশন, বুরুঙ্গা ব্রীজ, শ্রীবর্দী উপজেলার মায়াবী লেক, রাজার পাহাড়, নিয়ার বাড়ি টিলা, হারিয়াকোনা আদিবাসী মিশনসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। এসব স্থান দর্শনে প্রধান আকর্ষন হলো নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে ঝিনাইগাতি হয়ে শ্রীবর্দী উপজেলা সীমান্ত বরাবর প্রায় ৪০ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক। এই সড়ক দিয়েই সকল দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন ও বেড়ানো যায়। তবে জেলার বাইরের অনেক পর্যটক রাস্তা-ঘাট না চেনার কারণে অনেক সময় সব কিছু না দেখেই চলে যেতে হয়। আবার অনেক সময় সঠিক পথ নির্দেশনা না পেয়ে সময়ের সল্পতায়ও তারা সব স্থান দর্শন না করে ফিরতে হয়। কারণ, এখানে সীমান্ত এলাকা হওয়ায় আশপাশে কোন রাত্রী যাপনের জন্য রেষ্ট হাউজ বা রিসোর্ট নেই। সরকারী বা জেলা প্রশাসকের একটা এবং বেসরকারী বনরাণী নামে একটি রিসোর্ট থাকলেও সেখানে শুধু দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেয়া হয়। এসব নানা কারণে, অবকাশ ও মধুটিলাসহ জেলা শহরে আগত অনেক পর্যটক ও ভ্রমনকারীরা দাবী তুলেছেন এ জেলায় সিলেট ও মৌলভী বাজারসহ অন্যান্য জেলার মতো যদি পর্যটন বা ট্যুরিষ্ট বাস সার্ভিস চালু করা হয় তবে পর্যটকদের আগমন বাড়বে এবং জেলার পর্যটন শিল্পের বিকাশও ঘটবে।

Advertisements

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরের ঝিনাইগাতি রাংটিয়া এলাকায় পর্যটন কর্পোশনের একটি মোটেল তৈরীর প্রস্তাবনা রয়েছে। এছাড়া টুরিষ্ট পুলিশেরও চাহিদা রয়েছে উল্লেখিত দর্শনীয় স্থানগুলোতে। অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর জেলা পরিষদের পক্ষে প্রাথমিক ভাবে দুইটি পর্যটন বাস চালু করার পরিকল্পনা করে এবং পরীক্ষা-নিরিক্ষা পর্যায় রয়েছে। তবে জেলাবাসী ও ভ্রমনপিপাসুরা চায়, জেলা পরিষদ বা জেলা প্রশাসক যে কোন বিভাগই দায়িত্ব নিয়ে এ পর্যটন বাস সার্ভিস চালু করলে জেলার পর্যটন শিল্পের নিসন্দেহে বিকাশ ঘটবে।
এ বিষয়ে গজনি বনরাণী রিসোর্টের স্বত্ত¡াধিকারী মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন বলেন, পর্যটন শিল্প বিকাশে শেরপুরের গজনি অবকাশসহ পুরো গারো পাহাড় এলাকা ব্যপক সম্ভাবনাময়। ইতিমধ্যে এ সীমান্তে হাতির অভয়াশ্রম তৈরীর প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছে। হাতির অভায়শ্রম হয়ে গেলে পর্যটক বা ট্যুরিষ্টদের আনাাগোনা বছরজুড়েই থাকবে। তাই এখানে ট্যুরিষ্ট বাস সার্ভিসের খুবই গুরুত্ব রয়েছে। এ বাস সার্ভিস চালু হলে সাধারণ ট্যুরিষ্টরা স্বল্প খরচে জেলার সীমান্তের সবগুলো স্পট এক দিনেই ঘুরে দেখতে পারবে।

সামাজিক আন্দোলন সংগঠন ‘জনউদ্যোগ’ এর সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, যেহেতু শেরপু জেলার জেলা ব্র্যান্ডিং ‘পর্যটন’ সেহতেু শেরপুরের পর্যটনের উন্নয়নে ও বিকাশে নানা মূখি পদক্ষেপ প্রয়োজন স্থানীয় প্রশাসনের। তাই আমি মনে করি অনতিবিলম্বে শেরপুরে ট্যুরিষ্ট বাস চালু প্রয়োজন। আমাদের পর্যটন এড়িয়াতে সড়ক যোগাযোগ খুবই ভালো থাকায় পযটকরা বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ কবরে। এদিকে জেলায় উল্লেখিত দর্শনীয় স্থানগুলোতে বেড়াতে আসা ভ্রমনকারীরাও এই ট্যুরিষ্ট বাসে দাবী তুলেছেন।

এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈয়েদ এজেড মোর্শেদ আলী জানান, যেহেতু শেরপুর জেলা পর্যটন সমৃদ্ধ এড়িয়া, এখানে প্রতি বছর অনেক পর্যটক আসে। কিন্তু তারা এখানে তেমন কোন পর্যটনের গাইড পায়না। তাই আমরা যদি গাইডসহ একটি বাস দিতে পারি তাহলে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষন হবে এবং পর্যটকদের আগমনও বৃদ্ধি পাবে। তাই আমরা একটি বা দুইটি বাস দেয়ার জন্য পরিকল্পনা গ্রহন করে সংশ্লিষ্ট স্থানে উপস্থাপন করেছি। কিন্তু আমাদের বর্তমানে বাজেট নাই। বাজেটের জন্য অপেক্ষা করছি এবং সরকারী সহযোগিতাও যদি পাই তাহলে আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবো।