শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

কানে ব্যথা হয় কেন? কী করবেন

প্রকাশিত হয়েছে -


কানে যেসব সমস্যা দেখা দেয় তার মধ্যে ব্যথা অন্যতম। শিশুদের এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। এছাড়া কানের সমস্যাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- কান দিয়ে পুঁজ পড়া, কানে কম শোনা, মাথা ঘুরানো ইত্যাদি।

কানে ব্যথার কারণ ও প্রতিকারসহ এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ইমপালস হাসপাতালের নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জাহির আল-আমিন।

শিশুদের কানে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। ছোট বাচ্চাদের এটি বেশি হতে দেখা যায়। খুব কম বাচ্চাই আছে যাদের জীবনে এ অভিজ্ঞতা হয় না। কানের এ ইনফেকশন থেকে সাধারণত কান পাকা রোগের সৃষ্টি হয়। ছোটদের কানের ইনফেকশনের ঠিকমতো ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা না হলে অথবা ঘনঘন ইনফেকশন হতে থাকলে এ সময় কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। যদি এর সঙ্গে নাকের প্রদাহ অথবা ক্রনিক টনসিল ও এডেনয়েডের সমস্যা যোগ হয় তাহলে কানের পর্দা ফাটা ক্রনিক পর্যায়ে চলে যায়। এ রোগীদের কান দিয়ে পুঁজ-পানি পড়ে এবং কানে ব্যথা হয়। ধীরে ধীরে এরা কানে কম শুনতে শুরু করে। একপর্যায়ে এর সঙ্গে মাথা ঘুরানো যোগ হয়। কানের সমস্যার সঙ্গে মাথা ঘুরানোর যোগসূত্র আছে।

Advertisements

আমাদের দেশে গ্রাম-গঞ্জের মানুষ পুকুরে-নদীতে গোসল করে। নোংরা জলাশয়ের পানিতে গোসল করলে কানের এ সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

কলেস্টিয়েটমা

এটি কানের একটি ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন যা কানের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে নষ্ট করে দেয়, কান কখনও শুকায় না, প্রায়ই কানে ব্যথা থাকে এবং কানের শ্রবণক্ষমতা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এক সময় এ সমস্যা অন্তঃকর্ণে (কানের ভেতরের অংশ) চলে গেলে তীব্র মাথা ঘুরা শুরু হয়। এ ইনফেকশন ব্রেনে চলে গেলে স্ট্রোক, সেরিব্রাল অ্যাবসসেস এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কানের সমস্যা

কানের আরেকটি সমস্যা প্রায়ই নারীদের হতে দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় এ রোগ তীব্র আকার ধারণ করে। একে অটোস্ক্লেরোসিস বলে। কানের ভেতরের অংশে অবস্থিত সূক্ষ্ম হাড়গুলো শক্ত হয়ে যায় এবং কানের শ্রবণক্ষমতা কমতে থাকে। কানের ভেতর শোঁ শোঁ শব্দ হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে এর সঙ্গে মাথা ঘুরানো এবং বমি যোগ হতে পারে।

কানের ভেতরে ক্যান্সার খুবই কম হয়, তাদেরই বেশি হয় যাদের অনেকদিন ধরে কান পাকা রোগ থাকে। ভেতরের কানে ইনফেকশন থেকে কানে কম শোনা, কানে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া বা মাথা ঘুরানো, মধ্য কর্ণের ইনফেকশন থেকে মুখ বেঁকে যাওয়া আমাদের সমাজে কম নয়।

চিকিৎসা

আধুনিক প্রযুক্তি যেমন- মাইক্রোস্কোপ, এন্ডোস্কোপ ইত্যাদির ব্যবহার অপরিহার্য। বিশেষত কানের মাইক্রোস্কোপের ব্যবহার শুরুর পর থেকে কানের রোগ নিরূপণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় যুগান্তকারী উন্নতি হয়েছে। কানের বিভিন্ন অসুখ নিরূপণে মাইক্রোস্কোপের বিকল্প নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা সিটি স্ক্যান ও এমআরআইয়ের চেয়ে বেশি তথ্য প্রদান করে। সভ্য ও উন্নয়ন দেশে অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ এবং বিভিন্ন এন্ডোস্কোপ ছাড়া কোনো নাক-কান-গলা এর ক্লিনিক চিন্তাই করা যায় না।

কানের আধুনিক শল্যচিকিৎসা দিয়ে অনেক জটিল রোগের নিরাময় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে মাইক্রোস্কোপ ব্যবহারের বিকল্প নেই। কানের পর্দা লাগনো টিমপানোপ্লাস্টি মাইক্রোসার্জারি দিয়ে এমনকি অজ্ঞান না করেই করা সম্ভব।