মঙ্গলবার , ১৮ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - বর্ষাকাল || ১১ই জিলহজ, ১৪৪৫ হিজরি

সঠিক সহায়তানীতি ও দ্রুত টিকা বাস্তবায়ন জরুরি

প্রকাশিত হয়েছে -

করোনায় দেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়বে, এটা জানা ছিল। সরকারও এ ব্যাপারে সতর্ক ছিল। এতে রপ্তানিমুখী মূল শিল্প তৈরি পোশাক কারখানা প্রথম দিকে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর থেকেই খোলা রয়েছে। ফলে এ খাতের রপ্তানি আয় ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। এদিকে প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্সও বন্ধ হয়নি, বরং টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডি ও অপ্রচলিত পদ্ধতি বন্ধ হওয়ায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সরকারের হাতে টাকার অভাব ঘটেনি। তাই শিল্প খাতকে চালু রাখার জন্য কয়েক দফা প্রণোদনা দেওয়াও সম্ভব হয়েছে। দরিদ্রদের সুরক্ষায় বিভিন্ন সহায়তা বাড়িয়ে তাদেরও দুঃসময় কাটানো নিশ্চিত করা গেছে। কিন্তু মাঝখানে মধ্যবিত্ত, উচ্চ থেকে নিম্ন উপেক্ষিত হওয়ায় তাদের মধ্যে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার অস্বাভাবিক বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী জনসংখ্যার মোটামুটি ওপরের ২০ শতাংশ ও নিচের ২০ শতাংশ বাদ দিয়ে বাকি ৬০ শতাংশই বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যবিত্ত। তাদের একটি অংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী যারা পুঁজি হারিয়েছেন। আর যে বিপুল অংশ মূলত অনানুষ্ঠানিক খাতে চাকরিজীবী তাদের অনেকেই চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন, সবার আয় কমেছে। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাব অনুযায়ী করোনাকালে নতুন করে পৌনে দুই কোটি থেকে আড়াই কোটি দরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে।

আমরা বিভিন্ন সময়ে বলেছি, দেশে অর্থনীতির অগ্রগতি ঘটলেও এর ভিত্তি এখনো দৃঢ় হয়নি। দেখা যাচ্ছে, বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী দেশের ৬৭ দশমিক ১২ শতাংশ খানা সঞ্চয়ে অক্ষম। করোনার ধাক্কায় তারা জমি ও সম্পদ বিক্রি করেছেন। সামান্য সঞ্চয়ও নিঃশেষ করেছেন। সম্পদ বন্ধক রেখে বা অন্যভাবে ধারদেনা করতে বাধ্য হয়েছেন। এর ওপর করোনাকালের মারাত্মক প্রতিফল হলো যুবশক্তির বেকারত্ব। স্বাভাবিক সময়ে ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুব বেকারত্বের হার ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। বিআইডিএসের গবেষণায় দেখা গেছে, এ সময়ে শিক্ষিত যুবকদেরই ৩৩ শতাংশ বেকার। আর বিশ্বব্যাংক জানায়, যুবকদের ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ কোনো ধরনের কর্মসংস্থান, শিক্ষা অথবা প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এর অর্থ হলো যে যুবসমাজ দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হওয়ার কথা, তারা কেবল বেকারই থাকছে না, ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রেও বাধার মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ও পরিস্থিতির ফলে রাষ্ট্র জনমিতির লভ্যাংশ অর্জনে ব্যর্থ হবে। তা ভবিষ্যৎ সমাজজীবন ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশে নতুন ৩ হাজার ৪১২ জন কোটিপতি বেড়েছে। এটি সরকারের ভ্রান্তনীতিরই প্রতিফলন। আমাদের মনে হয়, সরকারকে অবিলম্বে যুবসমাজের শিক্ষা ও উপার্জনের পথ খুলে দিতে হবে। প্রণোদনার সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের পরিসর বৃদ্ধি এখন জরুরি কাজ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিকল্প নেই। একই সঙ্গে আমরা বলব, পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনে কোনো কোনো মেগাপ্রকল্পের কাজ আপাতত স্থগিত রেখে হলেও প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা হোক। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে ও তাদের ভবিষ্যতের পথ খুলে দিতে হবে। এ জন্য এসব পরিবারের পাশে সরকারকে দাঁড়াতে হবে। আর সবার জন্য টিকা নিশ্চিতের কাজ ত্বরান্বিত করতে হবে।