শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

রবি নিয়োগী (১৯০৯-২০০২)

প্রকাশিত হয়েছে -

বিপ্লবী রবি নিয়োগীর পূর্ণ নাম রবীন্দ্রনাথ নিয়োগী। তিনি শেরপুর জেলার গৃদানারায়ণপুর গ্রামে এক জমিদার পরিবারে ১৯০৯ সালের ২৯ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা রমেশ চন্দ্র নিয়োগী ও মা সুরবালা নিয়োগী কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রবি নিয়োগী শেরপুর গোবিন্দ কুমার পিস মেমোরিয়াল হাই স্কুল থেকে ১৯২৬ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজে আইএ ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯২৭ সালে ওই কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের এক সংঘর্ষের ফলে রবি নিয়োগীসহ কিছুসংখ্যক ছাত্র কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর তিনি কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন। সেখানে অধ্যয়নকালেই তিনি বিপ্লবী যুগান্তর দলের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯২৯ সালে তিনি আইএ পাস করেন। ১৯৩০ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ময়মনসিংহে সংঘটিত সত্যাগ্রহ আন্দোলনে রবি নিয়োগী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ওই আন্দোলনের সময় তিনিসহ ১৭ জন রাজনৈতিক কর্মী গ্রেপ্তার হন। ১৯৩০ সালে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অব্যবহিত পরে ময়মনসিংহের যুগান্তর দলের যে কজনকে গ্রেপ্তার করা হয় তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৩১ সালে শেরপুরের ঝিনাইগাতী এলাকায় সালদার জমিদারবাড়িতে যুগান্তর দলের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রথম তাঁকে রাজশাহী জেলে আটক রাখা হলেও পরে বিপজ্জনক বন্দি হিসেবে আন্দামান জেলে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে কয়েকজন বিপ্লবীর সঙ্গে তিনি সাম্যবাদে দীক্ষিত হন। ১৯৩৭ সালে গঠিত অবিভক্ত বাংলার প্রথম সংসদীয় সরকারের আমলে তিনি মুক্তি পেয়ে ময়মনসিংহে ফিরে এসে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম নেতা ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যায়। এই অবস্থায় ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত রবি নিয়োগী নিরাপত্তা আইনে কারাগারে আটক থাকেন। এরশাদের স্বৈরশাসনামলে ১৯৮৮ সালে শেষবারের মতো বৃদ্ধ বয়সে আবার কারারুদ্ধ হন রবি নিয়োগী।

লেখক হিসেবেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। রাজনীতি বিষয়ে তাঁর রচিত নিবন্ধের মধ্যে রয়েছে একাত্তরের বিজয়গাথা : শেরপুর, শেরপুরের ইতিহাসে মুসলিম অবদান এবং তেভাগা আন্দোলন, সংগ্রাম ও ভবিষ্য। ২০০২ সালের ১০ মে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।

শেরপুর টাইমস/বা.স

Advertisements