শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

“দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর”

প্রকাশিত হয়েছে -

ডায়াবেটিস রোগটিকে আপাত দৃষ্টিতে সামান্য মনে হলেও এটি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ক্যান্সারকে চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায় কিন্তু ডায়াবেটিস রোগটি পুরোপুরি সারানো যায় না। কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অসুস্থতা বাড়িয়ে তোলে। এটিকে অবহেলা করলে, নীরব ঘাতকের মতো দেহকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তদ্রæপ, বৃক্ষ নিধনকে আপাত দৃষ্টিতে সামান্য সমস্যা মনে হলেও এটি মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। বিভিন্ন রোগের মহামারি থেকে ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে পরিত্রাণ পেলেও বৃক্ষ নিধন রোধের কোনো ভ্যাক্সিন নেই। এটাকে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তথা গাছ কর্তন অপেক্ষা দ্বিগুণ হারে রোপণ এবং সচেতনার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। বৃক্ষ নিধন এমন একটি মহামারি, যেটা ধীরে ধীরে নীরব ঘাতকের মতো সমাজদেহ হতে আমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।

একটি পাতিলে যেমন কয়েক লিটার পানি সমেত আগুন জ্বালিয়ে তাপ দিলে তা ধীরে ধীরে পানিটা বাষ্পে পরিণত হয়ে এক সময় পাতিলটি পানিশূন্য হয়ে যাবে নিশ্চিত। ঠিক তেমনিভাবে, একেকটা গাছ কর্তন করার ফলে পৃথিবীর বুকে আগুন জ্বালানোর মাত্রা বাড়িয়ে দিই। দিই উষ্ণায়ন বাড়িয়ে। সাথে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন হ্রাস করি। যা ধীরে ধীরে পৃথিবী হতে মানুষশূন্য করে দিতে পারে।
বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। এটি দিনে দিনে প্রকট আকার ধারণ করছে। বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা লক্ষ্য করা যায়। মরুভূমির মতো আবহাওয়া বিরাজ করছে। বৃষ্টি নেই, ঋতুর পরিবর্তন ঘটেছে। দিনে প্রচন্ড গরম পড়ছে, তাপদাহে পুড়ছে দেশ। গত তিন বছরের জলবায়ুর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করলে তা সুস্পষ্ট। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের তথ্যমতে, দেশে শতকরা ২৫ শতাংশের জায়গায় ১৫.১৮ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। তবে বিভিন্ন সংগঠনের দাবি ৭-৮ শতাংশ বনভূমি বিদ্যমান। এভাবে চলতে থাকলে বনভূমির পরিমাণ শূন্যে নেমে আসা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

আমরা প্রতিনিয়ত অরণ্যবিনাশ করছি, বনভূমি উজার করে বসতবাড়ি স্থাপন করছি, গাছপালা কেটে নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তৈরি করছি। গাছপালা সড়ক ভাঙন ঠেকাতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। আর সেই সড়কের পাশের গাছগুলো কেটে সড়ক ধস ডেকে আনছি। অবাধ বৃক্ষ উচ্ছেদনের ফলে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য আজ বিপন্ন। নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে বৃক্ষের ব্যবহার অপরিহার্য। তবে গাছ কাটা অপেক্ষা দ্বিগুণ হারে গাছ রোপণও জরুরি। কিন্তু তা আমরা করছি না। আমাদের বৃক্ষ রোপণে অনীহা দূর করার উপযুক্ত সময় এখনি। যদি পৃথবী বসবাসেরই অযোগ্য হয়ে পড়ে, তবে আবাসস্থল, আয়েশি জিনিসপত্র মূল্যহীন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, গত তিন বছরে কতটি বৃক্ষ নিধন করেছেন আর কতটি রোপণ করেছেন? তাহলেই বের হবে পরিষ্কার সমীকরণ।

Advertisements

গাছ আমাদের প্রতিনিয়ত হাজার হাজার লিটার অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছে। বাতাসে উপস্থিত অক্সিজেনের শতকরা হিসেবে প্রতিদিন আমরা ৫০০-২০০০ লিটার অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকি। আর আমরা সেই অক্সিজেন ধ্বংস করছি নিজ হাতে। আমাদের ভাষায়, “গাছ আমাদের পরম বন্ধু”। আর গাছের ভাষায়, “মানুষ আমাদের চরম শত্রু”। তারপরও গাছের কিছু করার নেই। কারণ মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী জীব। প্রাণীকুলে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন, জ্ঞানী ও জটিল মস্তিষ্কের অধিকারী। মানুষ কতটা নির্মম, রাক্ষস সত্তাধারী তা বিগত বছরগুলোর বনভূমি হ্রাসের হার লক্ষ্য করলে বোঝা যায়। শুধু চট্টগ্রাম অঞ্চলেই গত সাত বছরে ১০ শতাংশ বনভূমি কমে গিয়েছে। আমরা নিজ স্বার্থ হাসিলে বৃক্ষ নিধন করছি ঠিকই কিন্তু পরোক্ষভাবে নিজেরাই নিজেদের বাঁচার পথ বন্ধ করে দিচ্ছি। বনভূমি ধ্বংসের জন্য নিজেরাই দায়ী। এখনই সচেতন না হলে প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁচাতে না পারলে, একটা পর্যায়ে আঙুল কামড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। মানুষ আসবাবপত্রের অভাবে মরে না, মরে অক্সিজেনের অভাবে। কবির ভাষায় বলতে হবে এখনই,“দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর”।

লেখক: নাজমুল হোসেন,
শিক্ষার্থী:  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।